শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বাবা-মায়ের ভরণপোষণ সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

সম্মান, যশ, প্রতিপত্তি সব পেয়ে আমরা সুখী নই, সবাই বড় অসুখী, অসুস্থ। আমাদের এ অসুস্থতা মনে। তাই সামাজিকভাবে আমরা যতটুকু এগোচ্ছি, তার চেয়ে মনের দিক দিয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। মন-মানসিকতার এহেন পশ্চাদগামিতায় বর্তমানে মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকটতর হয়ে উঠেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মনস্তাত্তি¡ক গবেষণা এটা প্রমাণ করছে যে, আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি বিকশিত করছে কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়রোধে যে মূল্যবোধের প্রয়োজন, তার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে সর্বত্র। শিক্ষা মানুষকে প্রজ্ঞাবান করলেও বিবেকবান করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। ফলে কখনো কখনো আমরা এমন আচরণ করছি, যা আমাদের সমস্ত জ্ঞান-গরিমাকে বেমানান করে তুলছে।

আধুনিক শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ লোক মা-বাবার প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। জীবনের পড়ন্তবেলায় আপন সন্তানের চরম অবহেলা অনাদরে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন, এমন হতভাগ্য মা-বাবার সংখ্যা এ দেশে নেহাৎ কম নয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সন্তানের কাছে বৃদ্ধ মা-বাবা বোঝাস্বরূপ, মন্তব্যটি শতকরা ১০০ ভাগ সত্য। যদিও আমরা চক্ষুলজ্জায় এ ধরনের অপ্রিয় সত্যকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারি না, তবু বলতে বাধা নেই যে, সন্তানের দ্বারা বৃদ্ধ বাবা-মা নানাভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। আর শিক্ষিত সন্তানদের মধ্যে এ অসামাজিক প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ, মূল্যবোধহীন শিক্ষা এসব শিক্ষিতদের নৈতিকতাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ফলে অবচেতন মনে তারা মা-বাবার কথা ভাবতে পারে না। অথচ আত্মকেন্দ্রিক সন্তানের চরম অবহেলাকে নিত্যসঙ্গী করেও মা-বাবা একটি ক্ষণের জন্যও সন্তানকে ভুলতে পারেন না। তাদের পক্ষে নাড়ির সম্পর্ক, রক্তের সম্পর্ককে কোনো অবস্থায় বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় না।

মা-বাবার অনাবিল স্নেহ-মমতায় বড় হলাম, একটি সময়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলাম এবং তারপর স্বার্থপরের মতো ভুলে গেলাম তাদের কথা। যারা আমাদের পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখালেন, নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়ালেন, আমাদের মানুষ করার জন্য যারা নিজেদের আরাম-আয়েশকে পায়ে ঠেলে দিলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের শুভ চিন্তায় উদগ্রীব থাকলেন তাদের প্রতি এই ব্যবহার চরম নিষ্ঠুরতা। এ থেকে বড় স্বার্থপরতা আর কী হতে পারে? পূর্বে উল্লেখ করেছি, তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত সন্তানের দ্বারা মা-বাবারা বেশি অবহেলিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি দেখেছি, বহু সন্তান রয়েছে যারা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে বছরের পর বছর মা-বাবা ছেড়ে দিব্যি রয়েছে। একবারও মা-বাবাকে দেখার তাকিদ অনুভব করে না। অথচ একদিনের জন্য প্রিয়তমা স্ত্রী চোখের আড়াল হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অসংখ্য অশীতিপর মা-বাবা রয়েছেন, যারা নিজ সন্তানকে মানুষ করে শেষ জীবনে সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষও আছে, যারা মা-বাবাকে দেখভালের দায়িত্ব নিতে চায় না। এমনকি স্ত্রীর প্ররোচণায় মা-বাবাকে মারপিট করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়, এমন মানবরূপী দানবদেরও দেখেছি। আশ্চর্যের বিষয়, হাজারো নিপীড়ন-নির্যাতন সত্তে¡ও মা-বাবা বলেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। আমি বিভিন্ন স্থানে দেখেছি, ছেলে নিজের আলাদা সংসারে চিত্তসুখে দিন কাটাচ্ছে অথচ প্রৌঢ়া মা অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে এক মুঠো ভাতের সন্ধান করছেন। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ চোখের সামনে রয়েছে। কিন্তু এসব চূড়ান্ত নিলর্জ্জতার কাহিনী লিখে ঘুনে ধরা সমাজকে বদলানো সম্ভব নয়। কারণ আমরা যারা শিক্ষার দম্ভে বড়াই করে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছি অথবা বিদেশ থেকে বছরে কিছু টাকা পাঠিয়ে মা-বাবার আকুল সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকছি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। কারণ অসভ্যরা আজ সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই মূল্যবোধের কথা বলে অযথা কালি, কাগজ নষ্ট করে লাভ নেই। নৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা। সে শিক্ষা আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেয়া প্রায় হচ্ছেই না। আমাদের বুঝতে হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া। নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে বলছি, আমাদের সমাজে এমন অনেক সন্তান রয়েছে, যারা বিয়ের পূর্বে থাকে মা-বাবার একান্ত অনুগত। কিন্তু বিয়ের পরে সবকিছু বেমালুম ভুলে যায়। এ কথা আমি বলছি না যে, মা-বাবা থেকে সন্তানকে সরিয়ে দেবার মূলে একমাত্র স্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দায়ী ছেলেরা। আমি যদি আমার বিবেক এবং দায়বদ্ধতার দরজায় তালা লাগিয়ে দেই, তাহলে অন্যের দোষ কোথায়?

সবকিছুর পরও এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, চরম নির্যাতিত হয়েও সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবারা মুখ খোলেন না অথবা আইন সচেতন নন। নাহলে আইন অনুসারে প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক সন্তান মা-বাবাকে প্রতিপালন করতে বাধ্য। সন্তান প্রতিপালনে অবাধ্য হলে বিভিন্ন ফৌজদারি কার্যবিধির ধারায় আইনী পথে খোরপোশ আদায় করতে পারেন অক্ষম-অসহায় মা-বাবা। প্রতিটি মানব সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান অপরিসীম। মা অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সন্তান প্রসব করেন। সীমাহীন ধৈর্য্য ও অতুলনীয় মমতায় লালন-পালন করে সন্তানকে ধীরে ধীরে বড় করে গড়ে তোলেন। পিতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের ভরণপোষণের সংস্থান করেন। সহায় সম্বল নিঃশেষ করে দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। সে পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে সব অর্থ ও সম্পদ সন্তানের পেছনে বিনিয়োগ করে নিজেরা অসহায় হয়ে সন্তানের পেছনে করুণার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন। নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে অসহায় মা-বাবাকে সন্তানের চরম অবজ্ঞা অবহেলায় নিদারুণ দুঃখ কষ্টে মানবেতর দিন যাপন করতে হয়। অনেককে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়ে অপমানের গ্লানি নিয়ে শেষ জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। পৃথিবীর সকল ধর্ম গ্রন্থে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বাধ্যকারী নির্দেশনা আছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন ও নবীজির হাদিসে বিভিন্ন জায়গায় বহুবার বহুভাবে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। মাতা-পিতাকে কাছে পেয়ে যথাযথ সেবা শুশ্রুষা, আদর-যত্ন, সদ্ব্যবহার ও প্রশ্নাতীত আনুগত্য দিয়ে যারা জান্নাতে যাবার সুযোগ করে নিতে পারেনি তাদেরকে চরম দুর্ভাগা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্য ও রূঢ় আচরণ কবিরা গুনাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি সর্বোত্তম আচরণ করা, বিনয়, দরদ, মায়া-মমতার সাথে কথা বলতে নির্দেশ আছে। তাদের সাথে কখনো অসম্মান ও অভক্তিসূচক আচরণ করা যাবে না। বিভিন্ন মনীষীর জীবনী পর্যালোচনা করলে আমরা মাতৃভক্তির চরম পরাকাষ্ট প্রদর্শনের অনন্য নজির দেখতে পাই। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (র.) এর মাতৃভক্তির কাহিনী কিংবদন্তি হয়ে আছে। মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে এবং মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার দাবিতে এদেশের মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। মাতৃভাষার প্রতি এই চরম আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সম্মান দেখিয়েছে। নিজেদের আরামকে হারাম করে মা-বাবা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। মা-বাবার প্রতি সন্তানের অগ্রহণযোগ্য আচরণ কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। সন্তানের অনাদর অবহেলায় নির্যাতিত মা-বাবার সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট লাগব করার জন্যে সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ২০১৩ সালে পার্লামেন্টে ‘মাতা-পিতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করে। আইনটি ২৭ অক্টোবর ২০১৩ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি লাভ করে। পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনটি বর্তমানে কার্যকর। এই আইনের বিস্তারিত বর্ণনায় যাওয়ার পূর্বে এর কিছু টার্ম সংজ্ঞায়িত করা দরকার। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে এই আইনে ‘পিতা’ অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের জনক। ‘ভরণপোষণ’ অর্থ খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান। ‘মাতা’ অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি সন্তানের গর্ভধারিণী। ‘সন্তান’ অর্থ পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থবান পুত্র বা কন্যা। এই আইনের ৩(১) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতামাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩(২) ধারা মতে, কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। ৩(৩) ধারা মতে, পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একই সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। ৩(৪) ধারা মতে, কোন সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তার বা ক্ষেত্রমত, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না। ৩(৫) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তান তার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। ৩(৬) ধারা মতে, পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হতে পৃথকভাবে বসবাস করলে সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাদের বা ক্ষেত্রমত, তাদের সহিত সাক্ষাৎ করতে হবে। ৩(৭) ধারা মতে, কোন পিতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সঙ্গে বসবাস না করে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সেই ক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হতে যুক্তিসংগত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা বা ক্ষেত্রমত উভয়কে নিয়মিত প্রদান করবে। অত্র আইনের ৪(ক) ধারা মতে, প্রত্যেক সন্তান তাদের পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে এবং ৪(খ) মতে, মাতার অকর্তমানে নানা-নানীকে ধারা ৩ অনুযায়ী ভরণপোষণ প্রদানে বাধ্য থাকবে, এই ভরণপোষণ পিতা-মাতার ভরণপোষণ হিসাবে গণ্য হবে। আইনের ৫ ধারায় পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করার দন্ড সম্পর্কে বর্ণনা আছে। ৫(১) ধারা মতে, কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হবে। ৫(২) ধারা মতে, কোন সন্তানের স্ত্রী বা ক্ষেত্রমত স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্মীয় ব্যক্তি। ৫(২ক) মতে, পিতা-মাতা বা দাদা-দাদীর ভরণপোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করলে বা ৫(২খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানী ভরণপোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করলে তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করলে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দন্ডে দন্ডিত হবে। আইনের ৬ ধারা মতে অধীন অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য হবে। ৭(১) ধারায় এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ ১ম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারযোগ্য হবে। ৭(২) ধারা মতে, কোন আদালত এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত আমলে গ্রহণ করবে না। ৮(১) ধারার আদালত এই আইনের অধীন প্রাপ্ত অভিযোগ আপোস নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার, কিংবা ক্ষেত্রমত, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় মেয়র বা কাউন্সিলর, কিংবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করতে পারবে। ৮(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন অভিযোগ আপোস নিষ্পত্তির জন্য প্রেরিত হলে, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, মেয়র, মেম্বার বা কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করে, তা নিষ্পত্তি করে এবং এইরূপে নিষ্পত্তিকৃত অভিযোগ উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বলে গণ্য হবে। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিষয়টি পারিবারিক ও মানবিক ইস্যু। তাই শুধুমাত্র আইন দিয়ে মা-বাবার প্রতি অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার অপরাধ বোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ মাত্রার নৈতিকতা বোধ, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এবং তা যথাযথ পালন। প্রয়োজন পারিবারিক, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা। যারা মা-বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। একটি বিষয় অতীব সত্য, যে ছেলে বা মেয়ে তার মা বাবার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না, সেও তো তার ছেলে বা মেয়ের নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাবে না। আমাদের নিজ নিজ মাতা-পিতা ও তাদের অবর্তমানে নিকট আত্মীয়দের প্রতি সম্ভব সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা, ভালবাসা ও দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা সুন্দর পারিবারিক জীবন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন