মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ঈমানের দৃঢ়তাই মুসলমানের বড় পরিচয়

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

মানব জাতি এক জাতি। সবাই বাবা আদম (আঃ) এর সন্তান। সুতরাং একজন মানুষের প্রতি অন্য আরেকজন মানুষের দায়িত্ব আছে, কর্তব্য আছে, অধিকারও আছে। এ ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান-ইহুদী বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সমান। আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্ট মানব-জাতিসহ সব প্রাণী জাতির প্রতি কল্যান সাধন ও কর্তব্য পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তার পাক কালামে এবং একই সঙ্গে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের দায়িত্ব কর্তব্য অধিকার এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্বন্ধে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থায় ও বিভিন্ন ভাষণে। এতদ প্রসঙ্গে কতিপয় ভাষণ উপস্থাপন করা হলোঃ- ‘‘হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের প্রভুর আনুগত্য করো এবং পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাাদ থেকে বিরত থেকো। তা না হলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের ভিত্তি দূর্বল হয়ে যাবে। তোমরা কি এ সত্য অবগত নয় যে, আল্লাহর যমীন যখন চতুর্দিক থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো, বোত- পরস্তি যখন আল্লাহ-পরস্তির স্থান দখল করে নিয়েছিল তখন মানবীয় নৈতিকতা মূছে গিয়েছিলো, সর্বত্র ফিতনা-ফ্যাসাদের তুফান প্রবাহিত ছিল ? তোমরা সে-যুগ প্রত্যক্ষ করেছো। এখানের বাসিন্দারা শত শত বছর হিংস্র প্রাণীর ন্যায় পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো। এই হানাহানি- খুনাখুনির জন্য দুনিয়ার কোথাও আরববাসীর সম্মান ছিলো না। প্রত্যক কওম তাদেরকে নিকৃষ্ট ও লাঞ্ছিত মনে করতো। যুদ্ধ-বিগ্রহ, শত্রুতা ও ঘৃণা-বিদ্ধেষ ছিল তাদের পরিচয়ের বৈশিষ্ট্য। নিজেদের এ দুর্ভাগ্য সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল।
অত:পর আল্লাহ তোমাদের অবস্থার উপর রহম করেছেন। তোমাদের অন্তরে মহব্বত সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর ফযলে তোমরা ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছো। অতএব তোমরা এ মেহেরবানীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না। পরস্পর মিলেমিশে থেকো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা লক্ষ্য হাসিল করতে সক্ষম হও। হে মানুষ! নি:সন্দেহে সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই এবং সকল মুসলমান এক ব্যক্তি-সদৃশ। তাঁর শির-পীড়া উপস্থিত হলে সর্বশরীর বেদনায় জর্জরিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক বুনিয়াদস্বরূপ, যার এক অংশের বোঝা বহনে সাহায্যকারী। আমি তোমাদের নসিয়ত করছি, প্রত্যেক মুসলমান পরস্পর ভাই-ভাই কেউ যেন কাউকে জুলুম না করে এবং কাউকে যেন একাকী বন্ধুহীন বা সাহায্যহীনভাবে ছেড়ে না দেয়। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি অন্যের ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ তার ত্রুটি গোপনে রাখবেন।
হে মানুষ ! যথাসম্ভব ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন যাপন করো। পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থেকো। তোমাদের প্রভু তোমাদেরকে নিঃস্বার্থ কাজের হুকুম দিচ্ছেন এবং ফিৎনা ফ্যাসাদ, খুনাখুনি নিষিদ্ধ করেছেন। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, তোমরা মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর নিজের জন্যে তোমরা যা পছন্দ করো অপর ভাইয়ের জন্যেও তাই পছন্দ না করা পর্যন্ত তোমরা মুসলমান হতে পারবে না। এবং হে মুসলমান, অবশ্যই মহাপবিত্র আল্লাহ তোমাদের উপর করুণা করেছেন- তিনি তোমাদের অন্তরের ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে হিংসা-বিদ্বেষের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন। এ নেয়মাতের সম্মান করা তোমাদের কর্তব্য। তোমরা পরস্পরের সুখে-দুঃখে অংশ গ্রহণ করো। আমি ইতিপূর্বে বলেছি যে, এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্যে বুনিয়াদস্বরূপ। তার অর্থ হলোঃ এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্যে দেয়ালের ইটের মতো একে অপরকে আঁকড়ে থাকে, যেরুপ দেয়ালের এক ইট অপর ইটকে সংযুক্ত রাখে, সেরূপ ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্যে আমি তোমাদেরকে হেদায়েত করছি।
তোমরা যে অবস্থায়ই থাক না কেন একে অপরের সাহায্য করবে। আমি তোমাদেরকে হুঁশিয়ার করছি যে তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকো একে অপরকে সাহায্য করো অর্থাৎ আশ্রয় দান করো তাহলে তোমরা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত থাকবে। অন্যথায় তোমরা স্তন্তুপীকৃত ইটের ন্যায় হবে। কোন দৃঢ়তা থাকবে না এবং যে কেউ তা উড়িয়ে দিতে পারবে। আর তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ রয়েছে সে যেন অবশ্যই তার ভাইয়ের উপকার করে এবং আমি পুনরায় তোমাদেরকে একথা বলছি যে কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্যেও পছন্দ করে। আমি এ উদ্দেশ্যে বলছি যে, প্রত্যেক মুসলমান লাভ লোকসানের কাজে যেন অপর মুসলমানকে তার নিজের মতো মনে করে এবং সে যা নিজের জন্য অপছন্দ করে তা যেন তার ভাই-এর জন্যেও অপছন্দ করে। যতদূর সম্ভব এক মুসলমান ভাইকে যেন নিজের সত্তার ন্যায় প্রিয় মনে করে নিজের সত্ত্বাকে যে রূপ প্রিয় মনে করে সে রূপ যেন তার ভাইকেও প্রিয় মনে করে এবং নিজের সত্ত্বার প্রতি যে আচরণ করে সেরূপ আচরণ যেন তার ভাইয়ের প্রতিও করে। মুসলমান তো সেই ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।
হে মানুষ ! পরস্পরের রক্ত, ইজ্জত, আবরু সম্পদ-এর কোনটারই ক্ষতি সাধন তোমরা করোনা। মানুষের চারিত্রিক গুণাবলীর মধ্যে এমন দু‘টি গুণ রয়েছে যার চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই। এর প্রথমটি হচ্ছে অল্লাহর প্রতি ঈমান, আর দ্বিতীয়টি, মুসলমানের উপকার সাধন। দোষাবলীর মধ্যেও এমন দু‘টি দোষ রয়েছে যার চেয়ে নিকৃষ্টতম আর কিছু নেই। প্রথমটি, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, দ্বিতীয়টি, কোন মুসলমানের ক্ষতি সাধন করা। কোন অবস্থায়ই এক মুসলমান ভাইয়ের উপর জুলুম অন্য মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। বিপদকালে মুসলমান ভাইকে সাধ্যমত সাহায্য করা অবশ্য কর্তব্য।
মনে রাখতে হবে ঈমানবিহীন কর্ম আর কর্মবিহীন ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং খাঁটি ঈমান অবশ্যই থাকতে হবে অর্থাৎ আমাদেরকে শিরকবিহীন ঈমানদার হতে হবে। তারপর যা কর্তব্য তা হলো, মুসলমানের কল্যাণ সাধণ এবং অকল্যাণ বর্জন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি সাধন থেকে বিরত থেকে কল্যান সাধনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন