বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৃদ্ধ পাদ্রীকে গ্রেফতার করে সমালোচিত মোদি সরকার

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

ভারতে এবার সন্ত্রাসবাদের অভিয়োগে স্ট্যান স্বামী নামের ৮৩-বছর বয়সী এক জেসুইট পাদ্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচি শহরের কাছ থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) গোয়েন্দারা তাকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় মোদি সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা।
ভারতে এ পর্যন্ত যত মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে, ফাদার স্বামী তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ। ২০১৮ সালে সংঘটিত জাতপাত-ভিত্তিক এক সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তান সাথে মাওবাদীদের সম্পর্ক আছে বলে দাবি করা হয়। মুম্বাইতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ফাদার স্বামী গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিন আগে একটি ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন। এতে তিনি বলেছিলেন, গোয়েন্দারা তাকে জুলাই মাসে পাঁচদিন ধরে প্রায় ১৫ ঘন্টা জেরা করেছে। গোয়েন্দারা নাকি তার কম্পিউটার থেকে কিছু জিনিস পেয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মাওবাদীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। তিনি বলেছিলেন, এগুলি বানোয়াট - চুরি করে এসব জিনিস তার কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের তিনি বলেছিলেন, তার বয়স, জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তার পক্ষে মুম্বাই পর্যন্ত যাওয়া কষ্টকর। তিনি আশা করেছিলেন তাদের মধ্যে ‘মানবিক বিবেচনাবোধ’ কাজ করবে।

ভারতের পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে মাওবাদী বিদ্রোহীরা সক্রিয়। মাওবাদীরা কমিউনিস্ট শাসন কায়েম এবং উপজাতি ও গ্রামের গরীব মানুষের অধিকার রক্ষায় লড়াই করছে বলে দাবি করে। ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের ভিমা কোরগাঁও গ্রামে যে সহিংসতা ঘটেছিল, তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার সে বছরের জুন মাস হতে এ পর্যন্ত ১৬ জনকে জেলে ভরেছে। এদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে নামকরা কিছু গবেষক-শিক্ষক, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং একজন বয়োবৃদ্ধ কবি পর্যন্ত রয়েছেন। এই কবি পরে জেলখানায় কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হন। একটি ঢালাও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এদের জামিনের আবেদন বার বার প্রত্যাখ্যান করা হয়। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সরকার এই আইনটিকে বিরুদ্ধ মত দমনে ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস, অ্যামহার্স্টের পাবলিক পলিসির অধ্যাপক সঙ্গীতা কামাট বলেন, ‘পরিস্থিতি একেবারেই ভয়াবহ। ভারতে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নিপীড়ন এত চরমে আর কখনো যায়নি।’

ফাদার স্বামী বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে আটকে আছেন বেশ অনেক দিন। কিন্তু যারা তাকে জানেন, তারা বলছেন যে এই নম্রভাষী ফাদার আসলে তার জীবন সঁপে দিয়েছেন উপজাতি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে। ১৯৯১ সালে ঝাড়খন্ডে আসার পর থেকে এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। ভারতের উপজাতীয়রা সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত এবং দরিদ্র। ফাদার স্বামীর সমর্থকরা বলছেন, তিনি এই উপজাতীয়দের পক্ষে ক্লান্তিহীনভাবে লড়ছিলেন। তিনি হাইকোর্টে গিয়ে মামলা লড়েছেন ৩ হাজার তরুণ এবং তরুণীর মুক্তি দাবি করে। তাদের মাওবাদী বলে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এরপর তারা জেল খাটছিলেন। তিনি পায়ে হেঁটে দুর্গম পাহাড়ী গ্রামগুলোতে গিয়ে লোকজনকে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করেছেন। ২০১৮ সালে উপজাতীয়রা যে বিদ্রোহ করেছিল, তিনি তাতে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। বড় বড় করপোরেশনগুলো কীভাবে কারখানা আর খনির জন্য উপজাতীয়দের জমি কেড়ে নিচ্ছে, সেটি নিয়ে তিনি লিখেছিলেন।

বেলজিয়ান বংশোদ্ভূত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ জ্যাঁ ড্রিজ জানান, তিনি ফাদার স্বোয়ামীকে জানেন কয়েক দশক ধরে। ফাদার স্বামী, তার ভাষায় একজন ‘ভদ্র এবং সৎ মানুষ, সময়ানুবর্তী, ধর্মনিরপেক্ষ। নিজের কাজ এবং বিশ্বাসের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি বলেন, ‘মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন মানুষদের হয়তো তিনি সাহায্য করেছেন, এটি ঝাড়খন্ডের মতো জায়গায় অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তার সঙ্গে এখন সেই আচরণই করা হচ্ছে, যে আচরণ করা হয় তিনি যাদের রক্ষার জন্য সারাজীবন লড়াই করেছেন, তাদের সঙ্গেও।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন