মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আলু নিয়ে ক্রেতারা ক্ষুব্ধ

দামের হাফ সেঞ্চুরি : বাজারে উপেক্ষিত সরকারের নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বেগুন, টমেটো, ঢেঁঢ়স, শিমসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য ইতোমধ্যেই সেঞ্চুরি করেছে। গরীবের তরকারি খ্যাত আলু করেছে হাফ সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি করেছে মিষ্টি কুমড়ার কেজিও। ভর্তা, ডাল, ভাজি, চিপস, ঝোলসহ সব ধরণের তরকারিতে ব্যবহার হওয়া আলুর হাফ সেঞ্চুরিতে বিপদে পড়ে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যারা আলু ভর্তা ও তরকারি দিয়ে সকাল-দুপুর-রাতের খাবার খান তারা পড়ে গেছেন বিপদে। এতো দামে আলু কিনে খাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ দেশে উৎপাদিত এই আলুর দাম কৃষক পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বৃদ্ধি করে তা পকেটে তুলছেন কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। সরকার আলুর দাম ৩০ টাকা কেজি বেঁধে দিলেও মনিটরিং না থাকায় কেউ তা মানছেন না।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার বাইরে গিয়ে প্রতি কেজি আলুতে ২০ টাকা লাভ করছেন। তবে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। যে দামে ব্যবসায়ী কিনেছে, কত লাভ করবে, কিনেছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা করে। কিন্তু এটা তাদের ৪৫-৫০ টাকা করে কেন বিক্রি করতে হবে? ন্যূনতম নৈতিকতা তাদের মধ্যে কাজ করে না। বর্তমানে চাহিদা থাকায় সে সুযোগ তারা নিচ্ছে।

দেশে বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়। কৃষি বিপণন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় এক দশমিক ৯ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। অথচ দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায়, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রফতানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজের স্বল্পতা এবং কোল্ড স্টোরেজ মালিকসহ কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা বেশি আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখার সুযোগ পান না। ফলে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। আবার চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম পান না কৃষকরা। তবে এবার আলুর বাজারে প্রায় এক মাস ধরে চলছে অস্থিরতা। গত দুই সপ্তাহ ধরে লামাগহীন এই নিত্যপণ্যটির দাম। হাফ সেঞ্চুরি করা অস্থির আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে ৩০ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। অথচ খুচরা বাজারে মানা হচ্ছে না সরকারের (কৃষি বিপণন অধিদফতর) নির্ধারিত আলুর দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

সরকারের নির্ধারিত দামকে ক্রেতাসাধারণ সাধুবাদ জানালেও বর্ধিত দাম রাখছেন বিক্রেতা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা। আর বিক্রেতা বলছেন, আগে বেশি দামে আলু কেনায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। গতকাল রাজধানীর ফকিরাপুল, কমলাপুর, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কাঁচা বাজার, খিলগাঁও বাজার, মালিবাগ ও মগবাজার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে প্রতি কেজি রাজশাহী ও রংপুরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বিক্রমপুরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে।

সরকার নির্ধারণ করে দিলেও দাম না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছেন, এখন সরকারের নির্ধারিত দাম মানছেন না। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। কিন্তু সরকার দাম বেঁধে দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দোকানের সব আলু আগের বাড়তি দামে কেনা ছিল তাই কিছুটা কমিয়ে দাম রাখা হচ্ছে। পাইকারি ৪৮ টাকা কেজি দরে আলু কেনা আছে। এটাতো অর্ধেক লোকসান দিয়ে বেচতে পারি না। তবে নতুন দামে আলু দোকানে উঠালে তখন ৩০ টাকায় দিতে পারবো।

এর আগে গত বুধবার প্রতি কেজি আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজে ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা ও খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। একইসঙ্গে উল্লেখিত দামে কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে আলু বিক্রি করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে ডিসিদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন