রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : যাঁকে ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না-২

মাওলানা আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ইসলামের শিক্ষার যথার্থতা যে, ইসলাম মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঠিক ক্ষেত্র নির্দেশ করেছে। কোথায় ব্যবহৃত হবে অনুরাগ-ভালোবাসার শক্তি, আর কোথায় বিরাগ-বিদ্বেষের শক্তি- কোরআন-সুন্নাহয় তার পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনার সারনির্যাস এই হাদীসটি- যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহর জন্য দেয়, আর আল্লাহর জন্য দেয়া থেকে বিরত থাকে- তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮১)।

এই হাদীস শরীফ আমাদের জানাচ্ছে যে, কর্মের ক্ষেত্রে যেমন আমাদের স্বাধীন-স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি নেই আবেগ-অনুভূতি ও অনুরাগ-বিরাগের ক্ষেত্রেও। মুমিনের ভালোবাসাও হবে আল্লাহর জন্য, বিদ্বেষও আল্লাহর জন্য। আর তাহলেই বিদ্বেষ-ভালোবাসার মতো দুটি মানবীয় বৃত্তিও হয়ে যাবে ঈমানের পূর্ণতার উপায়।
চিন্তাশীল যে কেউ শান্ত মনে চিন্তা-ভাবনা করলে ইসলামের এই শিক্ষার যথার্থতা উপলব্ধি করতে পারবেন। আজকের মানব-সমাজের অবক্ষয়-অনৈতিকতার এক বড় অংশই কি নয়- মানবের অনুরাগ-বৃত্তির বিপথগামিতার ফল? তেমনি সমাজের হানাহানি, জুলুম-অবিচারেরও এক বড় অংশ কি নয়- মানবের অসংযত ‘বিদ্বেষের’ কুফল? কাজেই মানবস্বভাবের এই দুই বৃত্তিকে অবশ্যই লাগাম পরাতে হবে। একে স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে ফেরাতে হবে এবং সঠিক ও যথার্থ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষা দান করে।
আল্লাহর জন্য যে ভালোবাসা তার মধ্যে পবিত্রতম ও গভীরতম ভালোবাসা হচ্ছে তাঁর রাসূল খাতামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা। মানবের প্রতি মানবের এর চেয়ে পবিত্র ও যথার্থ ভালোবাসা আর হতেই পারে না। তিনি মুমিনের কাছে তার বাবার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মানের, আপন সন্তানের চেয়েও বেশি আপনার, জগতের সকল পছন্দের মানুষের চেয়েও বেশি পছন্দের। মুমিন-হৃদয়ের এই নির্মল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতার প্রকাশ ঘটবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সকল অঙ্গনে। চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, কর্ম ও প্রেরণা, উদ্যম ও উদ্দীপনা সকল ক্ষেত্রে।

এই পবিত্র-ভালোবাসার প্রকাশ ঘটবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন সাধনা- দ্বীন ও শরীয়তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, সমর্পণ ও ভালোবাসার মাধ্যমে। সুন্নাহ ও শরীয়তের পঠন-পাঠন, অনুসরণ-অনুশীলন, বিস্তার ও সংরক্ষণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মুমিন নিজেকে অগ্রণী ও অগ্রগামী করবে। আর তা করবে হৃদয়ের গভীরের সেই পবিত্র-ভালবাসা থেকে। কে না বুঝবে যে, দ্বীন ও শরীয়তের অনুসরণের মধ্য দিয়েই আমরা পেতে পারি সুন্দর জীবন ও কল্যাণ সমাজ?

আর তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে জীবন গঠন ও সমাজ গঠনেরও অতি বড় উপায়। সুস্থ-সুন্দর জীবন গঠনে এবং শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে এর কোনো বিকল্প নেই।
তাই আসুন, আমাদের ঈমানকে মজবুত করি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও জগৎকে আলোকিত করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 1
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল। একজন মুসলমান নবীজিকে পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা এবং ধন-সম্পদের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।
Total Reply(0)
বায়েজীদুর রহমান রাসেল ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 1
নবীকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসা মুমিনের একান্ত কর্তব্য। এমন ভালোবাসা না থাকলে কেউ প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৪৮ এএম says : 1
আল কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনায় মুমিনদের রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৫৩ এএম says : 1
প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে নবীর প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা ইমানের দাবি। যার মাঝে নবীপ্রেম নেই তার মধ্যে ইমান নেই।
Total Reply(0)
Iftikhar Bappy ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৫৩ এএম says : 1
রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।’ বুখারি।
Total Reply(0)
Ikramul Sheikh ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ৪:৫৪ এএম says : 1
রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সাহাবিদের কাছে তাঁদের জীবনের চেয়েও প্রিয়। হজরত ওমর (রা.) রসুল (সা.)-কে বললেন, ‘হে রসুল! আমি আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তবে আমার নিজের চেয়ে বেশি নয়। রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমার নিজের চেয়েও আমাকে বেশি ভালোবাসতে হবে। তখন ওমর (রা.) বললেন, এখন আমি আপনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। অতঃপর রসুল (সা.) বললেন, হে ওমর! তাহলে এখন ঠিক আছে।’ বুখারি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন