শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়

আইএসপিএবি-কোয়াবের ধর্মঘট স্থগিত হাত জোড় করে মন্ত্রীর অনুরোধ : ৭ দিন সময় চাইলেন প্রতিমন্ত্রী : মেয়রের সাথে বৈঠক আজ সমাধান না হলে শনিবার থেকে আবারও ধর্মঘট : আইএসপিএবি সভাপতির হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলায় এক সময় ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা ছিল রমরমা। ক্যাবল অপারেটর দৌর্দন্ড প্রতাপ, ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনেকগুলো লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তথ্য প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এই ব্যবসার সেই স্বর্ণযুগ এখন নেই। তবে তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এখন চলছে ইন্টারনেটের ব্যবসা। সিন্ডিকেটের বদৌলতে সেই ক্যাবল অপারেটরদের অনেকেই এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে ক্যাবল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা কোন ধরণের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যত্রতত্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরের সড়কে তার ঝুঁলিয়ে ব্যবসা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। কোথাও বিদ্যুতের খুটি, কোথাওবা ভবনের সাথে তার টেনে শহরের সড়কগুলোকে গড়ে তুলেছে বিপদজনক তারের জঞ্জাল। তাদের এই জঞ্জালে নানা ধরণের বিপদের মুখে পড়ছেন মানুষ। সরকার বার বার উদ্যোগ নিলেও সিন্ডিকেটের কারণে রাজধানীকে তারের জঞ্জাল মুক্ত করতে পারছে না। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলছেন, ক্যাবল সিন্ডিকেটের খুঁটির জোর কোথায়?

তারের এই জঞ্জাল সরাতে ২০০৮ সালে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। তাদের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ এবং ঝুলন্ত তার অপসারণে ১২ বছর ধরে বিটিআরসি ও পরবর্তীতে ২০১২ সাল থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু তাদের ব্যর্থতার কারণে গত আগস্ট থেকে তার অপসারণে মাঠে নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ইতোমধ্যে এই সিটির বেশ কিছু জায়গায় ঝুলানো তার অপসারণও করে ডিএসসিসি। ধারাবাহিকভাবে তার অপসারণের কারণে নাখোশ হয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ক্যাবল অপারেটররা। গত ১২ অক্টোবর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) তার অপসারণ বন্ধ করার হুমকি দেয়। ঘোষণা দেয়া হয় ১৭ অক্টোবরের মধ্যে তার অপসারণ বন্ধ না করলে ১৮ অক্টোবর থেকে তারা সারাদেশে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট ও ক্যাবল অপারেটর সংযোগ বন্ধ রেখে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করবে।

তাদের হুমকিতেও কোন ধরণের কর্ণপাত করেনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বরং দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দেন ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কগুলো তারমুক্ত করবেন। এদিকে গত শুক্রবার আইএসপিএবি তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্মসূচি পালনের জন্য চিঠি দেয়, অন্যথায় সদস্যপদ বাতিলের হুমকি দেয়া হয়। বিদ্যমান করোনাকালে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি জটিলাকার ধারণ করে। আইএসপিএবি ও কোয়াব এই দুই সংগঠনের সিন্ডিকেটের হুমকী-ধামকীর কাছে অসহায় হয়ে পড়ে সরকার। বিগত দিনের মতো এবারও তারা গ্রাহকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে দুই সংগঠনকে নিয়ে গতকাল ভার্চুয়াল সভায় বসেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এই বৈঠকে মোস্তাফা জব্বার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন এবং তাদেরকে ধর্মঘট কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। অন্যদিকে জুনাইদ আহমেদ পলক ৭ দিনের সময় চেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তাদের অনুরোধের পর কোয়াব সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন। আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম আগামী ৭ দিনের মধ্যে সমাধান না হলে শনিবার থেকে আবারও ধর্মঘটের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

জরুরি এই সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তারা কাটা শুরু করে। মেয়র হয়তো কোন না কোনভাবে ভুল ধারণা নিয়ে আছেন বা তাকে সঠিক ধারণা দেয়া হয়নি। এই ঘটনার পর আমি স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি যেনো আর কোন তার কাটা না হয়, মন্ত্রী আমার চিঠি পেয়ে সাথে সাথেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন যাতে তার কাটা বন্ধ করা হয়। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া এখন একটি মুহূর্তও চলে না। এ অবস্থায় যদি আপনাদেরকে (আইএসপিএবি-কোয়াব) কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য করা হয় তা ঠিক হবে না।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিবের সাথে আমি কথা বলেছি, তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যেনো তার কাটা না হয়। মূখ্য সচিব জানিয়েছেন তিনি রোববার (আজ) বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলবেন। মেয়র ছাড়া বাকী সকলেই একমত হয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া যেনো তার কাটা না হয়। তিনি (মূখ্য সচিব) আইএসপিএবি ও কোয়াবকে বলতে বলেছেন, কর্মসূচি প্রত্যাহার করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আছে। তিনি কি সিদ্ধান্ত দেন সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেন, আপনাদের আন্দোলনের ইতোমধ্যে চমৎকার বিজয় হয়েছে। সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে কাজ করছে। মেয়র আসলে কথা বলে আমরা সমাধানের দিকে যেতে পারবো।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হন আমরা তা কোন অবস্থাতেই হতে দেব না। সকলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি, আরও কিছুদিন সময় দেন যাতে সমস্যার সমাধান করতে পারি। ধর্মঘট প্রত্যাহার করলে জাতি আপনাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাবে। আপনাদের কাছে হাতজোর করে অনুরোধ করছি ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন। যাতে আমরা সমাধান করতে পারি।

এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক দুই সংগঠনের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেন। ৭ দিন সময় দেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে আমরা কথা বলছি, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। ৭ দিনের মধ্যে একটা যৌক্তিক সমাধান করবো।

প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কোয়াবের সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরাও গ্রাহককে বিপদে ফেলতে চাই না। কিন্তু এমন অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে যে এর বিকল্প আমরা দেখিনি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি। এসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কোয়াবকে অভিনন্দন জানান।

আইএসপিএবি’র সভাপতি মো. আমিনুল হাকিম বলেন, আগামীকাল (আজ রোববার) সাড়ে ১০টায় নগর ভবনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে আমাদের বৈঠক আছে। সেখান থেকে একটা সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, আইএসপিএবি, কোয়াব ও এনটিটিএন অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সমন্বয় কমিটি চাই। যাতে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়।

তিনি আরও জানান, আগামী ৭ দিনের মধ্যে তার কাটার বিষয়টি সমাধান না হলে আগামী শনিবার থেকে আবারও ধর্মঘট কর্মসূচিতে ফিরে যাবে আইএসপিএবি।

অ্যাক্টিভ শেয়ারিংয়ের অনুমতি চেয়ে আমিনুল হাকিম বলেন, বিটিআরসি ১২ হাজার আইএসপি অপারেটরকে লাইসেন্স দিয়েছে। প্রতিটি অপারেটর তার টানলে একটি সড়কে ১২ হাজার ক্যাবল ঝুঁলবে। অ্যাক্টিভ শেয়ারিং হলে ১০-১২টি ক্যাবল থাকবে। এছাড়া তিনি এনটিটিএন সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার জন্যও মন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানান। এসময় সভায় বক্তব্য রাখেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আফজাল হোসেন। সভায় আইএসপিএবি ও কোয়াবের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Shohidul Islam ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
সরকার নিজেই অসাধু দের সাথে জড়িত। মানে এই অসাধু সিন্ডিকেট কারিরা সরকারেরই লোক।
Total Reply(0)
Mhr Milton ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
এটা সরকারের ই আরেকটা অপকৌশল!
Total Reply(0)
Md Ali ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
অসহায় নয়,সিন্ডিকেটের গঢ ফাদার।সরকারের চতুরমুখি বক্ত্যে এটাই প্রমান করে।
Total Reply(0)
Moksudul Karim ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
সরকারের লোকজন ও জড়িত
Total Reply(0)
Ariful Islam Tilock ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
এই দেশের সিন্ডিকেট এমপি মন্ত্রীদের। সিন্ডিকেট কি ভাবে খুজে পাবে তারা আর উনাদের কি লজ্জা শরম আছে ! লজ্জা শরমতো মেয়েদের থাকে
Total Reply(0)
Md Rahul ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
অসহায় নিরউপায় সরকার নয় আমারা জনগণ। আর এদের কাছে সরকার অসহায় হবে কেন সরকার ত এদের পৃষ্ঠপোষক।
Total Reply(0)
Mizanur Rahman ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
ব্যাবসাহি জখন সরকারে এমপি মনএী হয়। তখন জনগনের পিছে বা... ভালো করে দিতে পারে।।।
Total Reply(0)
Shoaib Ahmed Mukut ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
সরকার আবার অসহায় হয় কিভাবে...? সরকারি লোকজন জড়িত
Total Reply(0)
Ayman Rafi ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
সামান্য ব্যবসায়ীর কাছে যদি সরকার অসহায় হয়, তাহলে সরকার গদিতে বসে থেকে লাভ কি? ব্যর্থতা নিয়ে পদত্যাগ করা উচিৎ।
Total Reply(0)
Abu Shopian ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
সরকার চাইলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমাধান সম্ভব।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ জাকির হোসেন ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
কে কি বলল না বলল নগরকে সুন্দর করা হউক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন