শ রী ফ হো সে ন ফু য়া দ
রুমেল সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবা-মা, ভাই-বোনদের সাথে নাস্তা সেরে স্কুলের দিকে রওনা হলো। প্রতিদিন রুমেল সকালে স্কুলে যায়। আজও তাই ঘটল। দশম শ্রেণির ছাত্র রুমেল। তার সাথে যায় কয়েকজন বন্ধু শাহীন, আবিদ ও রাজন। রুমেলের ভালো লাগে বন্ধুদের সাথে স্কুলে যেতে আর তাদের সাথে আড্ডা দিতে। স্কুলে যাওয়ার পথে রুমেল বন্ধুদের উদ্দেশে বলল, স্কুল ছুটির পর আজ বেশিক্ষণ তোদের সাথে থাকতে পারব না। শাহীন জানতে চাইল কেন, বিশেষ কোনো কাজ আছে? রুমেল বলল, আজ সন্ধ্যার পর বাবা-মার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। আবিদ বলল, সন্ধ্যার পর যাবি, ছুটির পরে কী? তৎক্ষণাৎ রাজন বলল, তুই কী গোয়েন্দগিরি করতে যাবি? উত্তরে রুমেল বলল, আরে না, তাদের সাথে আমাকে একটি নিমন্ত্রণে যেতে হবে। তাই একটু আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া। বন্ধুরা একসঙ্গে বলল, ও আচ্ছা।
রুমেল লেখাপড়ায় বেশি ভালো না হলেও কিছু কাজে সে পটু। বিশেষ করে গোয়েন্দাগিরি করতে মজা পায়। সময়মতো স্কুলে ঘণ্টা বাজল, ক্লাস শুরু হলো এবং যথাসময়ে স্কুল ছুটিও হলো। ছুটির পর রুমেল একটু আগেই বাড়ি ফিরল। দিনের কাজকর্ম শেষে সন্ধ্যায় রুমেল তার বাবা-মা, ভাইবোনদের সাথে নিমন্ত্রণে যেতে প্রস্তুত হলো। বাড়ি ফিরতে রাত ১০টা বাজবে। বাড়ি থেকে রুমেল সবার শেষে বের হয়েছে বলে টিপতালা সে লক করে এসেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার ভাই জানতে চাইল, তালার চাবি ঠিকমতো আনছে কিনা এবং ছোট বোন রুনা জিজ্ঞাসা করল চাবি কার কাছে। আরেক বোন রুবি বলল, যে শেষে বের হয়েছে চাবি তার কাছে আছে। রুমেল দেখল ভুলবশত তালার চাবি কেউ সঙ্গে আনেনি। বাড়ির ভিতরে আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে রুমেল তার বাবা-মার কাছে গিয়ে বলল, আমি ঘণ্টাখানেক পরে আসছি। কাছেই থাকে আমার এক বন্ধু, তার সাথে লেখাপড়ার বিষয়ে একটু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব ইত্যাদি বলে রুমেল চলে গেল। কিন্তু বুঝতে দিল না তালার চাবি কেউ সঙ্গে আনেনি। বাড়ির ভিতরেই রয়ে গেছে।
তারপর রুমেল বাড়ি এলো। কিন্তু ভিতরে ঢোকার উপায় নেই। কী করবে, কীভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকবেÑ এসব ভাবতে লাগল রুমেল। কী করবে এদিক-ওদিক তাকিয়ে এসব ভাবতেই আধা ঘণ্টা অতিবাহিত হলো। হঠাৎ তার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো। টেলিভিশনে দেখা ম্যাকগাইভারের কথা ভাবল এবং বইতে পড়া গোয়েন্দা শার্লক হোমস বুদ্ধি খাটিয়ে জটিল রহস্য উদঘাটন করে এবং সমস্যা সমাধান করে ইত্যাদি কল্পনা করল।
বাড়ির সাথেই একটি গ্যারেজ আছে। এর গেটের তালা কখনো খোলা থাকে কখনো বন্ধ থাকে এবং বাড়ির ভিতরে গ্যারেজে প্রবেশের একটি দরোজা আছে। অন্য পাশে সংযুক্ত দুটি রুম আছে। রুমে যারা থাকে তারাই গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করে। গেটের একটি চাবি থাকে যারা গ্যারেজে গাড়ি রাখে তাদের কাছে। আরেকটি থাকে যারা সংযুক্ত রুমে অবস্থান করে তাদের কাছে।
রুমেল বাড়ির সামনে থেকে কিছু দূর গিয়ে গ্যারেজের রুমে থাকে সেই লোকটির আড্ডাস্থলে গিয়ে তার কাছ থেকে চাবি আনল এবং পরিচিত প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে একটি স্ক্রুড্রাইভার সংগ্রহ করে বাড়ির সামনে গ্যারেজের গেট খুলে কাজ শুরু করে দিল। রুমে কেউ না থাকায় তার বেশ সুবিধা হলো। অবশ্য সন্ধ্যার সময় সাধারণত রুমে কেউ থাকে না, বাড়ির ভিতরে গ্যারেজে প্রবেশের দরোজার পেছন দিকে হ্যাজবোর্ডের খিল তার হুকের উপর স্ক্রুড্রাইভার দিয়ে পেরেক ঘুরিয়ে হুক খুলে ফেলল। তারপর ভিতরের খিল খুলতে চেষ্টা করল। সহজে পারল না কিন্তু পরে পারছে। বলতে হয় রুমেলের সৌভাগ্য শীতকাল বলে পরিবেশ অনুকূলে। রাত দিনের চেয়ে বড়। সন্ধ্যা হয় ৬টার কিছু আগে। ওরা নিমন্ত্রণে রওনা হয়েছে সন্ধ্যা ৬টার দিকে। আর এখন বাজে ৭টার একটু বেশি। ভিতরের রুমে দরোজার উপরের ছিটকিনি সাধারণত বন্ধ করে আসে। তবে আজ তাড়াহুড়ো ব্যস্ততায় ভুলবশত বন্ধ করা হয়নি। রুমেল দরোজা খুলে তালার চাবিটি এনে আবার আগের মতো হ্যাজবোর্ডের খিল ঠিকভাবে লাগিয়ে দিল। কেউ বুঝবে না এই হুক খোলা হয়েছিল। তারপর রুমেল সবকিছু ঠিকঠাক মতো রেখে নিমন্ত্রণের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যেতে আধা ঘণ্টা লাগায় পৌঁছতে রাত ৮টা বেজে গেল। তাকে দেখে তার বাবা-মা, ভাই-বোনেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, এতক্ষণ কোথায় ছিলি? রুমেল ঠা-া মাথায় শান্ত গলায় উত্তর দিলÑ যেন এখানেও গোয়েন্দাগিরি। আগের মতো তার মুখে সেসব কথা। পরীক্ষা শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই। পড়াশোনার ব্যাপারে সাজেশন নিয়ে আলোচনা করতেই তো এত সময় লেগেছে। তাই আসতে দেরি হয়েছে কিন্তু আসল ঘটনাটি চেপে রাখল রুমেল। তাকে দেখলে কেউ সহজে বুঝবে না কী ঘটেছিল কিন্তু তার ভাইবোনেরা অনেকটা বুঝতে পেরেছিল। তাদের একজন বলল, সত্যিই আমার ভাই গোয়েন্দা। রুমেল দেখল তাকে এখন বলা হচ্ছে গোয়েন্দা রুমেল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন