শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

নয় সন্তানসহ আইএসে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিন বোন

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গত গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড থেকে নিজেদের নয় সন্তানকে নিয়ে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পালিয়ে যান ব্রিটেনের তিন বোন খাদিজা দাউদ (৩০), জোহরা দাউদ (৩৩) এবং সুগরা দাউদ (৩৪)। তাদের পাঁচ মেয়ে এবং চার ছেলের বয়স তিন থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। সউদি আরবে হজ পালন করার পর বাড়িতে না ফিরে তারা বিমানে করে ইস্তাম্বুলে যায়। সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়ায় পাড়ি জমায়। ওই তিন বোন তাদের ভাই আহমেদ দাউদের সঙ্গে যোগ দেয়। আহমেদ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করছিল। ব্রিটেন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দেওয়া স্কুলছাত্রী খাদিজা সুলতানার ঘটনা সামনে আসার পর ব্রিটেনের নারীদের আইএসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনায় এসেছে। পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন স্কুলের শিক্ষার্থী ১৭ বছর বয়সী খাদিজা স্কুলের ছুটি কাটানোর সময় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে ছিল দুই বন্ধু শামীমা বেগম ও আমীরা আব্বাসি। সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর। আর শামীমা ও আমীরার বয়স ছিল ১৫ বছর। তুর্কি সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে তারা আইএসে যোগ দেয় বলে জানা গেছে। বিমান হামলায় খাদিজা নিহত হয়েছে বলে তার পরিবার জানিয়েছে। সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর খাদিজার বিয়ে হয়েছিল এক সোমালি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে। তার স্বামীও নিহত হয়। ওই তিন কিশোরীর পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, আমীরা এবং শামীমারও আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। আমীরার স্বামীও নিহত হয়েছে। তবে ওই দুই কিশোরী জীবিত রয়েছে বলে আকুঞ্জি জানিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার খাতিরে তাদের অবস্থান জানাননি তিনি। ২১ বছর বয়সী আকসা মাহমুদ আইএসে যোগ দিতে গ্লাসগো থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যায় ২০১৩ সালের নভেম্বরে। সে এর আগে আইএসের হামলার পক্ষে অনলাইনে প্রপাগান্ডা চালাত আর ব্রিটিশ নারী ও তরুণীদের আইএসে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাত। ধারণা করা হয়, বেথনাল গ্রিন স্কুলের তিন শিক্ষার্থীর আইএসে যোগ দেওয়ার পেছনেও তার হাত রয়েছে। আকসা এক আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন। তাকে আইএসের আল-খানসা ব্রিগেডে উচ্চপদ দেওয়া হয়। ওই নারী ব্রিগেডের কাজ হলো নারী এবং শিশুদের আইএসের কথিত শরিয়া অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা। শাস্তির মধ্যে রয়েছে নারীদের পুরুষ নিকটাত্মীয় ছাড়া ঘরের বাইরে আসলে গ্রেফতার ও মারধর এবং ন¤্র আচরণ না করলে দোররা মারা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আকসা এবং স্যালি-অ্যান জোনস-এর ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্টের বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী স্যালি-অ্যান জোনস (আইএসের দেওয়া নাম উম হোসাইন আল-ব্রিটানি)-এর জন্ম খ্রিস্টান পরিবারে হলেও সে কিশোর বয়সে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্যালি ২০১৩ সালে সিরিয়ার পথে পা বাড়ায়। সেখানে আইএস হ্যাকার জুনাইদ হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ড্রোন হামলায় জুনাইদের মৃত্যুর পর স্যালি টুইটারে জানিয়েছিল, সে তার স্বামীর জন্য গর্বিত। মার্কিন ও ব্রিটেন ড্রোন হামলার তালিকায় স্যালির নাম রয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ তরুণী ডেয়ার আইএসে যোগ দেয়া একেবারে প্রথম দিককার ব্রিটিশ নাগরিক। ২০১২ সালে আইএসে নাম লেখাতে তিনি সিরিয়ায় যান। সঙ্গে করে তার একমাত্র শিশু ইসাকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। ডেয়ারের জন্মও দক্ষিণ লন্ডনের এক খ্রিস্টান পরিবারে। কিন্তু কিশোর বয়সে সে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। চ্যানেল ফোর-এ ব্রিটিশ নারীদের আইএস যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে নির্মিত এক প্রামাণ্যচিত্রে তার কথা উল্লেখ করা হয়। সিরিয়ায় পৌঁছে তার নতুন নাম হয় মরিয়ম। তখন তার বিয়ে হয় সুইডিশ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি আবু বকরের সঙ্গে। পরে আবু বকর নিহত হয়। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তখন তার গর্ভে ছিল আরেকটি শিশু। কিন্তু ডেয়ার সিরিয়া ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে এবং সেখানেই তার সন্তানকে বড় করে তুলবে বলে জানিয়েছিল। তার এই বক্তব্য আইএর প্রপাগান্ডায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ডেয়ারই আইএসের হাতে বন্দি জেমস ফলিকে জবাই করে হত্যা করেছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার ছেলে চার বছর বয়সী ইসাকে আইএসের এক প্রপাগান্ডা ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে সে আইএসের হেড ব্যান্ড পরেছিল। ওই ভিডিওতে ইসা বলছিল, আমরা এখানে সব কাফেরদের হত্যা করব। অনেক ব্রিটিশ নারী মরীচিকার সুখে আইএসে যোগ দিতে পাড়ি জমিয়েছে সিরিয়ার পথে। কিন্তু এখানে খাদিজা সুলতানার ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। স্বামী নিহত হওয়ার পর ঘোর কাটতে থাকে খাদিজার। সে বুঝতে পারে, আসলে সে এক মরীচিকার দিকে ছুটছিল। খাদিজার সামনেই ১৭ বছর বয়সী অস্ট্রীয় কিশোরী সামারা কেসিনোভিচকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সামারাকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা খাদিজার ওপর ভীষণ প্রভাব বিস্তার করে বলে খাদিজার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি জানিয়েছেন। তিনি বিবিসি নিউজনাইটকে বলেন, যদি পালাতে গিয়ে আপনি আইএসের হাতে ধরা পড়েন, তাহলে তারা আপনাকে শাস্তি দেবে, আর এই শাস্তি ভীষণ বর্বর। তিনি আরও বলেন, আইএস ত্যাগ করাটা, অ্যালকাত্রাজ (সান ফ্রান্সিসকোর একটি বিচ্ছিন্ন দীপ, যেখানে রয়েছে মার্কিন সেনা কারাগার) থেকে বেরিয়ে আসার মতোই। যেখানে হত্যার জন্য গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া আছে। তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, যে সপ্তাহে সে (খাদিজা) আইএস ছেড়ে আসার কথা ভাবছিল, এক অস্ট্রীয় কিশোরী (সামারা কেসিনোভিচ) আইএস এলাকা থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে। তাকে জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে। তিনি আরও বলেন, সম্ভবত খাদিজা ওই ঘটনায় ভয় পেয়ে সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। অস্ট্রীয় কিশোরী সামারা কেসিনোভিচ গত বছর তার দেশ থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে আইএসে যোগ দিয়েছিল। মোহভঙ্গ হওয়ায় সে আইএস থেকে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল। খাদিজার আইএস ত্যাগের চেষ্টা অন্যদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আকুঞ্জি বলেন, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার একটা ইতিবাচক দিক হতে পারে, যারা এখনো সেখানে যেতে আগ্রহী, যুদ্ধ এলাকা সম্পর্কে তারা একটা ধারণা পেতে পারেন। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন