শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ই-কমার্সের উন্নয়নে কাজ করছে ই-ক্যাব

শাহেদ নুর | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২০, ২:৪১ পিএম

বাংলাদেশের ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। দেশের ই-কমার্স সেক্টরের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি এই সেক্টরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো সমাধানে কাজ করছেন তারা। উদ্যোক্তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে নানা বিষয়ে নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগ সাইটের মাধ্যমেও উদ্যোক্তাদের তারা বিভিন্ন সহায়তাও দিচ্ছে। ফলে প্রসারিত হচ্ছে ই-কমার্স, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসাগুলোকেই মূলত ই-কমার্স বলা হয়। অনলাইন শপ ও সার্ভিসগুলো ই-কমার্সের প্রধান খাত। এছাড়া বেশ কিছু সাপোর্টিং খাতও রয়েছে, যেগুলোকে ই-কমার্স সহায়ক বা ই-কমার্স অ্যানাবেলার বলা হয়।

বাংলাদেশে ই-কমার্স শুরু হয়েছে নব্বই দশকের শেষ ভাগে। প্রথম দিকে ধীর গতি থাকলেও গত পাঁচ বছরের এটি দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে মানুষ দীর্ঘদিন ঘর বন্ধি ছিলো। ফলে এই সময়ে এর চাহিদা আরও অনেক বেড়েছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর তথ্য মতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ছিলো ৫৬০ কোটি টাকা, পরের বছর ৮ হাজার ৬৩২ কোটি, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৫০৪ কোটি এবং গত বছর ছিলো ১৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ৯ মাসে এটি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬১৬ কোটি টাকায়। এর বাইরেও এফ-কমার্স (ফেইসবুক কমার্স), জেলা-উপজেলার ই-কমার্সগুলোর মার্কেটের আকার আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা।

তাদের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০ লাখ অনলাইন ক্রেতা রয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে এই সংখ্যাটা পাঁচ কোটি ছাড়াবে বলে আশা করছেন তারা।

বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ওয়েবসাইট ও পঞ্চাশ হাজার ফেইসবুকভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শুধু পণ্য কেনাকাটা নয়, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরের সেবাও প্রদান করা হচ্ছে ই-কমার্সের মাধ্যমে।

সম্ভাবনাময় এই সেক্টরের উন্নয়নে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি রাজিব আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে ই-ক্যাব। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ই-ক্যাব ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠন সংশ্লিষ্টদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সঠিক দিকনির্দেশনা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ নানা পদক্ষেপের কারণে আজ ই-কমার্সের একটি বিশাল মার্কেট তৈরি হয়েছে।’

ই-ক্যাবের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন শিপন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমরা উদ্যোক্তাদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এই সেক্টরের উন্নয়নে অনলাইন শপ, ই-সার্ভিস, ই-পেমেন্ট, ই-সিকিউরিটি, সার্ভিস ডেলিভারি, সচেতনতা, পণ্যের মান উন্নয়ন ও গবেষণার উপর জোর দিচ্ছি। ব্যবসায়ীদের নিয়েও আমরা কাজ করছি, যাতে তারা ই-কর্মাসের মাধ্যমে কাস্টমারদের যথাযথ সার্ভিস দিতে পারে। এছাড়াও পলিসিগত বিষয় আমরা অনেকগুলো কাজ করছি, যেগুলো ই-কমার্সের সার্বিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে।’

করোনা পরিস্থিতিতে ই-কমার্সের বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে যখন অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছিলো, তখন ই-ক্যাবের উদ্যোগে অনেকগুলো কোম্পানি এগিয়ে আসে। মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও মেডিসিন সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করে। এসময় আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। করোনার কারণে সৃষ্ট ব্যবসায়ীক মন্দা কাটিয়ে উঠতে ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ’

জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই মূহুর্তে যাদের সামার্থ আছে, তারা এই লোনটি নিচ্ছে। পাশাপাশি অন্যদেরকেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করেছি, পরবর্তীতে যাতে তারাও নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনে লোনটি নিতে পারে।’

দেশের পণ্যগুলো আন্তজার্তিক বাজারে পৌঁছে দেয়ার জন্য জন্য ই-ক্যাব কাজ করছে উল্লেখ করে শিপন বলেন, ‘ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে। পলিসি রিফর্মের বিষয় আছে। আমরা সেগুলো নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করছি। যাতে করে যেকোন ব্যবসায়ী ই-কমার্সের মাধ্যমে সহজে বিদেশে পণ্য বিক্রি করতে পারে। ’

ই-ক্যাবের একটি ব্লগ (http://blog.e-cab.net/) আছে। সেখানে ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট প্রচুর আর্টিকেল রয়েছে, যার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে পারে। এছাড়া তাদের পৌনে তিন লক্ষ মেম্বারের একটি ফেইসবুক গ্রুপ (https://www.facebook.com/groups/eeCAB/) রয়েছে। উদ্যোক্তরা সেখানে তাদের পণ্য বা সেবার প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে। পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যাও নিয়ে পোস্ট দিতে পারে। সেই পোস্টগুলোতে অন্যান্য সদস্যরা পরামর্শ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে যেমন ব্যবসায়িক প্রসারের ঘটে, ঠিক তেমনি সমস্যার সমাধানও পান তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন দেশের তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে তারা অনলাইনে পণ্য কিনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ই-কমার্স এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় পণ্যগুলোর বাজার তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে পণ্য, বড় হচ্ছে ই-কমার্সে বাজার। আর ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি শুরু হলে বাজার আরও অনেক প্রসারিত হবে। যত দিন যাবে, ই-কমার্সের বাজার ততই বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন