শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে জামে মসজিদের ইমাম ও তার সহকারী নিহত

ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণার জেরেই ইমামকে হত্যা করা হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশে দাবি

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুনের শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জামে মসজিদের ইমাম ও তার সহকারী। নিহত ইমাম হলেন আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫), তার সহকারীর নাম থারা উদ্দিন (৬৫)। গত শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ২টার দিকে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ওজোন পার্ক এলাকার আল ফুরকান জামে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে তারা খুন হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তারা দু’জনই ঐতিহ্যবাহী ইসলামি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এর কয়েক মিনিট আগেই আল ফুরকান জামে মসজিদে তারা একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এ হত্যাকা-ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। তাদের দাবি, রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা কথিত ইসলামভীতির কারণেই এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকা- মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। এ হত্যাকা-ের পর স্থানীয় মুসল্লিরা ঘটনাস্থলে এক প্রতিবাদ সমাবেশে সমবেত হন। আল ফুরকান নামক জামে মসজিদে সমবেত হয়ে তারা এ হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। তারা দাবি করেন, একমাত্র ধর্মীয় কারণেই সুনির্দিষ্টভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম (৩৩) বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত চিত্র নয়। আমরা এ ঘটনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছি। ট্রাম্প ও তার নাটক ইসলামভীতি সৃষ্টি করেছে। আল ফুরকান জামে মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি মসজিদের সভাপতি কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বিচলিত, বিধ্বস্ত। আমাদের এর গভীরে যাওয়া দরকার। এটা জানা দরকার যে, শুধু ধর্মীয় কারণেই তারা এ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন কিনা। আহমেদ জাকারিয়া নামের একজন মুসল্লি বলেন, তিনি ছিলেন একজন চমৎকার, মৃদুভাষী ও নিরহঙ্কার মানুষ। কারও সঙ্গে তার কোন বিরোধ ছিল না। ইমাম হিসেবে তিনি ছিলেন একজন রোল মডেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি আকস্মিকভাবে পাঁচটি গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এটা বাজির শব্দ নয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী ব্যক্তি ছিলেন একজন লম্বা হিস্পানিক (স্প্যানিশ ভাষাভাষী যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী)। গাঢ় নীল রঙ-এর শার্ট ও শর্ট প্যান্ট পরা ওই ব্যক্তি একটি বড় আকারের বন্দুক বহন করছিলেন। ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ২৭ বছরের স্টিভেন নাউথ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার ছোট জ্ঞাতিভাই সেখানে ছিল। আমি তাকে সেখান থেকে দৌড়াতে বলি। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জনক। দুই বছরেরও কম সময় আগে তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একজন প্রসিদ্ধ আলেম হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আল ফুরকান জামে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে তারা খুন হন। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র ভাই মাশুক উদ্দিন জানান, একটি বুলেট তার ভাইয়ের মস্তিষ্কে আঘাত করে। মৃত্যুর আগে তাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমি খুবই মর্মাহত। পুরো শরীর কাঁপছে। কারও সঙ্গে তার কোন বিরোধ ছিল না। তিনি শুধু মসজিদে যেতেন, নামাজ পড়তেন এবং বাসায় ফিরতেন। আমরা সবাই কান্নাকাটি করছি। এটা খুব বেদনাদায়ক। ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র ভাতিজা ২৬ বছরের রাহি মাজিদ। তিনি জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার কোন ঝামেলা ছিল না। রাহি মাজিদ বলেন, তিনি একটি মাছিকেও আঘাত করতে পারেন না। আমি নিশ্চিত নই যে, কি ধরনের একটা পশু এই মানুষটিকে খুন করেছে। হত্যাকা-ের শিকার ইমাম আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি’র সহকারীর নাম থারা উদ্দিন (৬৫)। গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার ঘণ্টার মাথায় তার মৃত্যু হয়। নিউ ইয়র্ক পুলিশের একজন মুখপাত্র টিফানি ফিলিপস এ জোড়া খুনের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার একটি রাস্তায় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খুব কাছ থেকেই দুজনের মাথায় গুলি করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে এ হত্যাকা-ের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md Tanbir ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:১৬ পিএম says : 0
এসবের কোন বিচার হবে কি?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন