বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবী করিম (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইমাম নববী রহ. তাহযীব নামক কিতাবে লেখেন, আল্লাহ তায়ালা চরিত্র ও অভ্যাসের সকল মাধুর্য উচ্চ গুণাবলি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র সত্তায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের যত গুণ-গরিমা কল্পনা করা যায়, সে সবগুলো দ্বারাই তাকে ভূষিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন উম্মী। মানবকুলের মধ্যে কেউ তার গুরু ছিল না। এতদসত্তে¡ও তাকে এমন জ্ঞান দান করা হয়, যা সমগ্র সৃষ্টিজগতে কাউকে দেয়া হয়নি। তাকে ভূমন্ডলের রত্মভান্ডারের চাবি পেশ করা হয়, কিন্তু তিনি পার্থিব ধনৈশ্বর্যের বদলে সর্বদা পরকালকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত ছিলেন। তিনি সর্বাদিক সম্মানকারী, সর্বাধিক ন্যায়বিচারক, সর্বাধিক মননশীল ও সংযমশীল, সর্বাধিক সৎ, মানুষের সর্বাধিক উপকারকারী এবং মানুষের নির্যাতন ও উৎপীড়নে সর্বাধিক সবরকারী ও ধৈর্যশীল ছিলেন। (ওসায়েলুল ওসুল ইলা শামায়িলির রাসূল)।

বুখারী ও মুসলিমে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) সকল মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সুশ্রী, বীর ও উদারপ্রাণ ছিলেন। কারণ, তিনি সকল মানুষের সেরা মানব এবং সর্বাধিক মিতাচারী ছিলেন। এমন সব মহতী গুণে গুণান্বিত ব্যক্তির কর্ম ও আচার-আচরণই তো সর্ব মানবের জন্য আদর্শ হয়ে থাকে। তার মধ্যে যাবতীয় দৈহিক ও আধ্যাত্মিক গুণ সন্নিবেশিত ছিল এবং তিনি সৌন্দর্য ও অনুপম চরিত্রমাধুর্যের বাহক ছিলেন। তিনি সর্বাধিক উদার, সর্বাধিক ভদ্র ও সর্বাধিক দানশীল ছিলেন।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর উৎকৃষ্ট চরিত্র ও প্রশংসনীয় গুণাবলির প্রশংসা করে বলেছেন, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল কালাম : আয়াত ৪)। এর আগের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার জন্য আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আল কালাম : আয়াত ৩)। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলিকে পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে বাযযার)।

এ থেকে জানা গেল, রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পবিত্র সত্তায় সুন্দর ও উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। কেননা তার প্রত্যক্ষ শিক্ষাদাতা আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত। হযরত আয়েশা (রা.) রাসূলে আকরাম (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, ‘তার চরিত্র ছিল কোরআন।’ এর বাহ্যিক অর্থ এই, কোরআনুল কারীমে বর্ণিত সকল প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণাবলি দ্বারা তিনি গুণান্বিত ছিলেন।

কাযী আয়ায রহ. কিতাবুশ শিফায় আরও উল্লেখ করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তুষ্টি ছিল কোরআনে পাকের সন্তুষ্টির সাথে এবং তার অসন্তুষ্টি ছিল কোরআনের অসন্তুষ্টির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদ্দেশ্য এই, তার সন্তুষ্টি ছিল খোদায়ি আদেশ পালনের মধ্যে এবং অসন্তুষ্টি ছিল খোদায়ি আদেশ লঙ্ঘনে ও পাপ কর্মের মধ্যে।

আধ্যাত্ম জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য কিতাব আওয়ারেফুল মাআরেফে আছে, উপরোক্ত বাক্য দ্বারা হযরত আয়েশা (রা.) এ কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, কোরআনের মধ্যেই নবী করিম (সা.)-এর চরিত্র নিহিত ছিল। সত্য ঘটনা এই, কারও বিবেক-বুদ্ধি ও অনুমান হুযুর (সা.)-এর মর্যাদার মহান স্বরূপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না এবং আল্লাহ ব্যতীত কেউ এর স্বরূপ চিনতেও পারে না এবং যেমন আল্লাহতাআলাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতো যথার্থভাবে কেউ চিনতে পারেনি। এর ‘যথার্থ’ অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। (মাদারিজুন নবুওয়াত : আব্দুল হক দেহলভী)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Yousuf Sohag ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 0
মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহামানব ও শ্রেষ্ঠতম রাসূল। যার অসাধারণ বৈশিষ্ট্য সমূহ শুধু পূর্ববর্তী ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা নয়। স্বয়ং মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তাইতো তাকে বলা হয় ‘সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গম্বর’।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 0
যার চরিত্র গুণাগুনের ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আরব জাতিতে শান্তির পথ দেখিয়ে ছিলেন। কোন মানুষের সাথে যার কোন তুলনা চলেনা, যিনি ছিলেন একাধারে একজন এতিম, একজন মেষ পালক, একজন শ্রমিক, একজন সফল ব্যবসায়ী, একজন রনকৌশলী যোদ্ধা, একজন সেনাপতি, একজন ন্যায় বিচারপতি, একজন শিক্ষক, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন গভর্ণর, একজন বৈজ্ঞানিক, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক।
Total Reply(0)
সোলায়মান ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ। ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, দয়া, দানে, কাজে কর্মে, আচার-আচরণে, মানবতা ও মহত্ত্বে তিনি ছিলেন সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ।
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২৩ এএম says : 0
রসুল (সা.) হলেন সমগ্র মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম নমুনা বা মডেল। তিনি মহান চরিত্রের অধিকারী। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুসরণ করা একান্ত জরুরি।
Total Reply(0)
শাহাব হাওলাদার ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২৪ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘(হে নবী) আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ সূরা আল কলম : ৪। অন্য আয়াতে ঘোষিত হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ রাখে তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ সূরা আহজাব : ২১। আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করি, তাদের উচিত এই কামনা করা যে, প্রিয় নবীর উত্তম চরিত্র যেন আমাদের মধ্যেও আসে।
Total Reply(0)
Md. Yousuf ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১১:০১ এএম says : 0
বিভিন্ন পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় মহোদয়গনের লেখা গুলোর লিং গুলো বিভাগের নিচে দেওয়া থাকে। পাঠক প্রয়োজনে প্রিয় লেখকদের লেখা পড়তে পারেন। ইনকিলাবে ও এই রকম ব্যবস্থা চাই।
Total Reply(0)
আবদুল কাইয়ুম শেখ ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১০:০৬ পিএম says : 0
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
Total Reply(0)
Mohammad Ashraf Siddiqui ২৩ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩১ এএম says : 0
লেখা টির অনেক বড় একটা ভুল রয়েছে্ দয়া করে সংশোধন করুন্
Total Reply(0)
Mohammad Ashraf Siddiqui ২৩ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩২ এএম says : 0
লেখা টির অনেক বড় একটা ভুল রয়েছে্ দয়া করে সংশোধন করুন্
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন