বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

নিরাপদ বিনিয়োগে আইডিএলসির নতুন প্রডাক্ট ‘ইজি ইনভেস্ট’

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : নতুন ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ইজি ইনভেস্ট’ নামে নতুন একটি বিনিয়োগ স্কিম চালু করেছে প্রথম সারির মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এ সেবার আওতায় বিনিয়োগকারীরা প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আইডিএলসির হাতে তুলে দেবেন। ক্রম সঞ্চয়ের এ অর্থ স্টক এক্সচেঞ্জের বøু-চিপ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে গ্রাহকদের মুনাফা দেবে প্রতিষ্ঠানটি। পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকদের আশা, এতে বছর শেষে গ্রাহক ব্যাংকের তুলনায় আকর্ষণীয় মুনাফা পাবেন।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আইডিএলসির নতুন এ প্রডাক্টের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। নতুন এ সেবার বিস্তারিত তুলে ধরেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসি লিমিটেডের এমডি আরিফ খান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী, সাবেক সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালীসহ পুঁজিবাজার- সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
দেশে সম্পূর্ণ নতুন এ সেবা সম্পর্কে মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে শেয়ারবাজারে আনার লক্ষ্যেই আইডিএলসি নতুন এ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। প্রতি মাসের সঞ্চয়ের একাংশ নির্ভরযোগ্য পেশাদার পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকদের অধীনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে মানুষ। ব্যাংকের চেয়ে আকর্ষণীয় মুনাফা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবে তহবিল ব্যবস্থাপকরা। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বিনিয়োগের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেবেন এ পেশাদাররা।
তিনি আরো জানান, ‘ইজি ইনভেস্ট’ হিসাব খোলার মাধ্যমে একজন গ্রাহক প্রতি মাসে অন্যূন ৩ হাজার টাকা বা এর বেশি হাজারের অঙ্কে জমা রাখবেন। তিন, পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদি স্কিম বেছে নিতে পারবেন তারা। তাদের অর্থ শেয়ারবাজারের বøু-চিপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে আইডিএলসি। একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হিসাব খুলে লেনদেনের পর প্রতিদিনই গ্রাহককে তাদের পোর্টফোলিও এবং বিনিয়োগের বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে। পেশাদার তহবিল ব্যবস্থাপকরা সহজেই বছর শেষে গ্রাহকদের সঞ্চয়কৃত অর্থের ওপর ১০-১৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি মুনাফা দিতে পারবে। এভাবে মেয়াদ শেষে একজন গ্রাহক তার বিনিয়োগের কয়েক গুণ পর্যন্ত রিটার্ন পেতে পারেন। মেয়াদের আগেও কোনো গ্রাহক ইচ্ছেমতো তাদের হিসাব বন্ধ করে চলে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এক বছরের আগে বের হয়ে গেলে মোট সঞ্চয়ের ৫ শতাংশ ও এক বছর পর বের হলে ১ শতাংশ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে।
বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের এমডি বলেন, শেয়ারবাজারে একজন বিনিয়োগকারীর সাধারণ হিসাবের মতোই ইজি ইনভেস্টমেন্টের কার্যক্রম চলবে। হিসাব চালু করতে একজন বিনিয়োগকারীর ৫০০ টাকা প্রয়োজন হবে। বছর শেষে গ্রাহকের হিসাবের মোট পোর্টফোলিওর ৩ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে এবং ৭৪ টাকা বীমা বাবদ নেয়া হবে। এছাড়া প্রতি হিসাবের লেনদেনে দশমিক ৫০ শতাংশ ব্রোকারেজ ফি ও সিডিবিএলের চার্জ বাবদ বছরে ৫০০ টাকা করে দিতে হবে।
নতুন এ সেবা সম্পর্কে আরিফ খান বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশে অর্থনীতির সূচকের নেতৃত্বে রয়েছে শেয়ারবাজার। তবে বাংলাদেশে অর্থনীতির অন্য সূচকের তুলনায় শেয়ারবাজার পিছিয়ে। দেশের ব্যক্তিখাত বর্তমানে বেশ ইতিবাচক থাকলেও সেখানে শেয়ারবাজারের অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। উন্নত দেশের মতো সামষ্টিক পেশাদার তহবিলে বিনিয়োগকে শক্তিশালী করতে পারলে বাজারের চলমান সংকট কিছুটা কমবে। আইডিএলসি নতুন এ প্রডাক্টের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে উৎসাহী করতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি।
শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানির সা¤প্রতিক প্রাধান্য ও ভালো কোম্পানির সংখ্যা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে ১০-১৫টি ভালো কোম্পানি দিয়ে হবে না। আরো অনেক ভালো কোম্পানি আনতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ডের একটি ভালো সম্ভাবনা থাকলেও এর ব্যবহার সঠিক না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আইডিএলসির নতুন এ সেবা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগের চর্চা বাড়াবে।
শাকিল রিজভী বলেন, ২০০৯-১০ সালে বিনিয়োগ করে লোকসান করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে যাদের অনেকের জ্ঞানের অভাব ছিল। এ কারণে তাদেরকে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়েছিল। সেকেন্ডারি বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের দর যথেষ্ট না হওয়ায় সেখানেও আশানুরূপ ফল পাননি ইউনিটধারীরা। তবে নতুন এ স্কিম ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে যারা শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন না, তারা উপকৃত হবেন। বিএসইসি, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমালোচনা করে আহমেদ রশীদ লালী বলেন, শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইমেজ সংকট। দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু সরকারি কোম্পানিও শেয়ারবাজারের ইমেজ নষ্ট করেছে। তিতাস গ্যাস ইস্যুতে জ্বালানি নিয়ন্ত্রকদের আচরণ, ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও সংকটে পড়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনে ঋণ প্রদান ও তা আদায় করতে না পারায় ব্যাংকে টাকা সঞ্চয়ে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। অস্থিতিশীলতার কারণে শেয়ারবাজার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক বিনিয়োগকারী।
এমন অবস্থায় বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তুলনামূলক উচ্চ মুনাফার এ স্কিম ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতেও ভূমিকা রাখবে এ ধরনের ইনভেস্টমেন্ট প্রডাক্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন