রাজধানীর গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফিরলেও করোনাকালের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য এখনো থামেনি। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই হচ্ছে বাকবিতন্ডা। করোনার পর গণপরিবহন চালুর সময় যে সব শর্ত দেয়া হয়েছিল সেই শর্তও মানছেন না কেউই। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছু নেই। সব মিলে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারের উচ্চমহল থেকে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সরব হয়েছিল পরিবহন মালিক সমিতিও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। করেনোর গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর শুরুতে কিছুটা শৃঙ্খলিত থাকলেও সময়ের সাথে সবই হারিয়ে গেছে। আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে গণপরিবহন সেক্টর। সড়ক-মহাসড়কে চলছে ফিটনেসবিহীন লক্কর ঝক্কর বাস, চলছে চালক হেলপারদের দৌরাত্ম। চালকদের সিগনাল না মানা, যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, পাল্লা দিয়ে ছুটে চলার প্রবনতা এখনও বহাল আছে। একই সাথে পথচারীদের পুরনো অভ্যাসও পরিবর্তন হয়নি। তারাও ফুটওভার ব্রিজ রেখে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দ্বিধা করছেন না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে কোনোদিনই গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। তিনি বলেন, বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক নির্মাণ ও অবকাঠামোখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। সে হিসাবে সড়ক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, রাজধানীর সিটি সার্ভিস বাসে নিয়মিত চলাচল করেন এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, মনে করিয়ে না দিলে নিজ ইচ্ছায় আগের ভাড়া নিচ্ছে না পরিবহনগুলো। সেই করোনার সময় নির্ধারিত ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হচ্ছে। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাড়া নিয়ে কোনো নৈরাজ্য নেই। আগের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে মাঝে-মধ্যে যে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়, সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আর করোনা থেকে রক্ষা পেতে যে স্বাস্থ্যবিধি সরকারে নির্দেশনায় রয়েছে তার বালাই নেই কোনো পরিবহনে। যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাড়া নিয়ে অনেক বাসে যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতন্ডা হচ্ছে হরহামেশা। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে অনেক কন্ডাক্টর। মিডওয়ে পরিবহনের যাত্রী খোরশেদ আলম বলেন, আগের ভাড়ার কথা কন্ডাক্টরদের মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। তা না হলে তারা করোনাকালের জন্য যে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল সেই ভাড়াই রেখে দিচ্ছে। আমার ক্ষেত্রেও এমন করা হয়েছে।
পল্লবী এলাকার বাসিন্দা মাহবুব আলম বলেন, কালশী থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভাড়া আগে ছিল ৪০ টাকা, কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। পল্লবী পরিবহনের যাত্রী রবিউল হোসেন বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব ভাড়া ১৮ টাকা, করোনাকালীন এখান থেকে ৩৫ টাকার মতো আদায় করা হতো। কিন্তু আজ ২৫ টাকা নিয়েছে। বিকল্প পরিবহনের চালক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, আমরা আগের ভাড়াই আদায় করছি। কিন্তু কিছু কিছু যাত্রী সেই ভাড়াও দিতে চায় না। যে কারণে কারও কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, কোনো যাত্রীর কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ এলে সেই পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন আছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন