বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বাতজ্বর : কারণ ও প্রতিকার

| প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হলো জ্বর সহ শরীরের অস্থিসন্ধি বা গিঁরাগুলোর একটি প্রদাহ জনিত রোগ। আক্রান্ত রোগীর শরীরে জ¦র ছাড়াও তীব্র ব্যথা হতে পারে। তবে একধরনের জীবানুদিয়ে গলায় ব্যথা বা টনসিলের প্রদাহ বাতজ¦রের প্রধান উৎস।

কারণ ঃ
অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে শিশুরা স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া বা জীবানু দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হয়। গলায় প্রদাহ বা গলাব্যথা, বারবার টনসিল আক্রমন, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর শরীরের গিরাঁগুলি একটির পর একটি আক্রান্ত হয়ে ফুলে যায়, ফলে তীব্র ব্যথা হয় এবং চলাফেরার অসুবিধা হয়্ দারিদ্র, ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অপরিষ্কার এবং অজ্ঞতাই বাতজ্বরের প্রধান কারণ। যেসব শিশুর দীর্ঘদিন পাঁচড়া ও টনসিলের রোগ থাকে তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
অনেকের ধারণা, যেকোন বয়সে গিরাঁয় গিরাঁয় ব্যথা হওয়া মানে বাতজ্বর। কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয়। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েরা যার গিরাঁ বা হাঁটু ব্যথার সাথে জ্বর এবং ষ্ট্রেপটোকক্কাস জীবানু দ্বারা টনসিলের ব্যথায় আক্রান্ত হয় অথবা যাদের টনসিল প্রদাহের ইতিহাস আছে তারাই বাতজ¦রে আক্রান্ত হতে পারেন।

লক্ষণ ঃ
শুরুতে কিছুদিন গলাব্যথা, কাশি, জ¦র। তারপর ২ থেকে ৩ সপ্তাহের বিরতি।
সাধারনত একটি বড় গিঁরা ব্যথা হয়ে ফুলে যাওয়া, কয়েকদিনের মধ্যে সেরে গিয়ে আরেকটি বড় গিঁরাতে আক্রমন।

গিঁরাগুলোতে আক্রমণ কালে ফুলে যাওয়া, তীব্র জ¦র এবং অত্যাধিক ব্যথার কারণে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়।

চামড়ায় লাল দাগ বা চামড়ার নিচে উঁচু গোটা হতে পারে।

শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা দেখা দিতে পারে। হৃৎপিন্ড প্রদাহের ফলে বুক ধড়ফড় করা।

অল্প বয়সে রোগিটি হয় বলে শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

খাদ্য অরুচী , পায়ে পানি আসা, প্রচন্ড দূর্বলতা অনুভব হওয়া।

চামড়ার নীচে প্রদাহের ফলে লালচে দাগ বা ত্বকে ছোট ছোট উদ্ভেদ দেখা দেয়।
মাস্তিস্ক প্রদাহের ফলে কাঁপুনি, খিঁচুনী দেখা দেয়।

স্নায়ুর প্রদাহের ফলে অনিয়ন্ত্রিত অঙ্গ সঞ্চালন হওয়া ইত্যাদি

অন্যান্য লক্ষণ ঃ
বাতজ্বর নির্ণয় মূলত রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণনির্ভর। এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষার তেমন ভূমিকা কম। তাই এ রোগটি অনেক সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়। তাই রোগীর বাতজ্বর হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য এসব লক্ষণ বিবেচনা করতে হবে।

রোগীর ঘনঘন জ্বর থাকবে।
প্রায়ই কোনো না কোনো গিঁরায় ব্যথা থাকবে।
বুক ব্যথা, বুক ধড়ফড় এর ইতিহাস থাকবে।
ইসিজি করালে হৃৎপিন্ডের কিছুটা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা করালে রক্তের এএসও টাইটার ও ইএসআর স্বাভাবিক থেকে অনেক বেশি হবে।

চিকিৎসা ঃ
বাতজ্বর চিকিৎসার জন্য প্রথমে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এতে হৃৎপিন্ড হতে কাজের চাপ কমায়। ফলে হৃৎপিন্ড দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

বাতজ্বর চিকিৎসার জন্য রোগীর ইতিহাস ও লক্ষনের উপরে নির্ভর করে চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রয়োজন হলে জীবানুনাশক, ব্যথা নাশক ও স্টেরয়েড দেয়া হয়।

এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করানো যেতে পারে। কারণ হোমিওপ্যাথিক লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।

রোগ নির্ণয় হওয়ার পর দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকটে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিরোধ ঃ
বাতজ্বর হৃদরোগের একটি প্রধান কারন। বাতজ¦র প্রতিকারের জন্য স্ট্রেপটোকক্কাস জীবানু দ্বারা যেন আক্রমণ না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
বাচ্চাদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ঘনবসতিপূর্ণ, স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বর্জন করতে হবে।
সবসময় সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সবসময় নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ না করে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বসতির আশেপাশে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এর সাথে ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
সাধারণ জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালট্যান্ট রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেট
চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০।
০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Md Asadul Islam ২২ জুন, ২০২১, ১১:৩৩ এএম says : 0
বাতজর হলে বিয়াম করা জাব
Total Reply(0)
Md. Saiful Islam ৬ জুলাই, ২০২১, ৮:০৫ এএম says : 0
হোমিওপ্যাথি ঔষধে দ্রুত আরোগ্য হবে কিনা।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন