শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবী করিম (সা.)-এর সহনশীলতা ও ক্ষমা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

হুজুর আকরাম (সা.)-এর সবর, সহনশীলতা ও ক্ষমার গুণাবলি নবুওয়াতের মহোত্তম গুণাবলির অন্যতম। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কিংবা ধনৈশ^র্যের খাতিরে কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ নেননি; কিন্তু এমন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন, যে আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম সাব্যস্ত করেছে; আর এ ধরনের লোকের কাছ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তেই প্রতিশোধ নিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বাধিক কঠিন সবর ছিল ওহুদ যুদ্ধে, যেখানে কাফেররা তার সাথে যুদ্ধ ও মোকাবিলা করে এবং গুরুতর কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি কেবল সবর ও ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের প্রতি স্নেহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে তাদের এ অন্যায় মূর্খতাপ্রসূত কাজকে ক্ষমার্হ সাব্যস্ত করে বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইহদি ক্বাওমি ফা ইন্নাহুম লা ইয়া’লামুন’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমার সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করুন। কেননা, ওরা অজ্ঞ। এক রেওয়াতে আছে, হে আল্লাহ ওদেরকে ক্ষমা করুন।

কিন্তু ব্যাপারটি সাহাবায়ে কেরামের কাছে অসহনীয় ঠেকে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি ওদের জন্য বদদোয়া করুন, যাতে ওরা নির্মূল হয়ে যায়। তিনি জবাব দিলেন, আমি অভিসম্পাত করার জন্য প্রেরিত হইনি, বরং আমি সত্যের দাওয়াত ও বিশ^জাহানের জন্যে রহমতরূপে প্রেরিত হয়েছি। (শিফা; মাদারিজুন নবুওয়াত)।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর পথে আমাকে যতটুকু ভয় দেখানো হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। আল্লাহর পথে আমাকে যতটুকু নির্যাতিত করা হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে করা হয়নি। একবার ত্রিশটি দিবা-রাত্র আমার এমন অতিবাহিত হয়েছে, যখন আমার ও বেলালের জন্যে এমন কোনো আহার্য বস্তু ছিল না, যা কোনো প্রাণী খেতে, সেই বস্তু ছাড়া, যা বেলাল তার বগলে লুকিয়ে রেখেছিল। (মাআরিফুল হাদীস; শামায়েল)।

মক্কার কাফেররা নবুওয়াতের একুশ বছর পর্যন্ত রাসূলে আকরাম (সা.) ও তার নাম উচ্চারণারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। জুলুম উৎপীড়নের এমন কোনো পদ্ধতি ছিল না, যা ওরা প্রয়োগ করেনি। অবশেষে ওরা তাকে বাস্তুভিটা ও স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের এই জঘন্য শত্রæদল পুরোপুরিভাবে রাসূলে আকরাম (সা.)-এর দয়া ও কৃপার পাত্র হয়ে পড়ে। তার একটি অঙ্গুলির ইশারা ওদের সবাইকে রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারত। কিন্তু বাস্তবে হয়েছি কী!

এককালের দোর্দন্ডপ্রতাম কুরাইশ সরদাররা ভয় ও অনুশোচনার ভারে মাথা নত করে রাসূলে কারীম (সা.)-এর সামনে দন্ডায়মান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমার নিকট কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো? ওরা সম্মিলিত কণ্ঠে জবাব দিলো, হে সত্যবাদী, হে বিশ্বস্ত, আপনি আমাদের সম্ভ্রান্ত ভাই, সম্ভ্রান্ত ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা সর্বদাই আপনাকে দয়ালরূপে পেয়েছি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, অদ্য আমি তোমাদের তা-ই বলব, যা হযরত ইউসুফ (আ.) তার ভ্রাতাদের বলেছিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। যাও আজ তোমরা সকলেই মুক্ত। (শিফা; সীরাতে ইবনে হিশাম)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 0
নবী করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুকরণ-অনুসরণের মাঝে রয়েছে প্রকৃত সফলতা।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 0
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অতুলনীয়, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী, পরোপকারী, সদালাপী সহৃদয়সহ সকল প্রকার মহৎ গুণে গুণান্বিত অনুপম চরিত্রের অধিকারী।
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
শবকাল থেকে মহানবী (সা.)-এর জীবনে এক দুর্লভ ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুটিত হয়। দয়া ও ন্যায়পরায়ণতার মূর্ত প্রতীক হিসেবেও নবী করিম (সা.)-এর বেশ সুনাম রয়েছে। দানশীলতা, উদারতা ও বদান্যতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় উদাহরণ।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
সহনশীলতায় ও ক্রোধ সংবরণে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ আদর্শের প্রতীক। কখনও তার পক্ষ হতে মন্দ কথন ও কর্ম প্রকাশ পায়নি, নির্যাতন-অবিচারের শিকার হলেও কখনও প্রতিশোধ নেননি। কখনও কাউকে প্রহার করেননি।
Total Reply(0)
রাজি হোসেন ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 0
সদা চিন্তাশীল, কোমল, শান্ত ও ভদ্র চরিত্রের অধিকারী নবী করিম (সা.) নিয়ামত কম হলেও বেশি মনে করতেন। ব্যক্তিগত বা পার্থিব স্বার্থে আঘাত হলে রাগ করতেন না। আল্লাহর বিধান লংঘিত হলে প্রতিবিধান না করা পর্যন্ত ক্রোধ থামাতেন না এবং ক্ষান্ত হতেন না। হাসির সময় প্রায় মুচকি হাসতেন। এক কথা তিন বার বলতেন। তিন বার সালাম দিতেন। তিন বার অনুমতি চাইতেন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 0
সাহসিকতা, নির্ভীকতা, যথাসময়ে উদ্যোগ গ্রহণ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ গুণ ছিল। তার সাহিসকতা বড় বড় বীরদের নিকট অবিসংবাদিতভাবে স্বীকৃত। এক কথায়, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চরিত্রে মানবীয় গুণাবলীর সকল বৈশিষ্ট্যের চূড়ান্ত সম্মিলন ঘটেছিল।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২২ এএম says : 0
সহনশীলতার যে অনুপম দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন তা আবহমানকাল ধরে ইসলামী দুনিয়াকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন