বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

করোনা সংক্রমণ, দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইউরোপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৫৮ পিএম

চলতি বছরের জুলাইতে ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপিয় নেতারা। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ (বামে), ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখ্যোঁ (মাঝে) এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল (ডানে)


কমপক্ষে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বলে ফ্রান্স শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মহাদেশটির উদ্বিগ্ন সরকারগুলি আবারও তীব্রতর হওয়া এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর বিধিনিষেধ তৈরি করছে।

ইউরোপের করোনায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা গত ১০ দিনে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। লাতিন আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় অঞ্চল হিসেবে ইউরোপে করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃত্যু ২ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ইউরোপ দৈনিক রেকর্ড সংক্রমণের কথা জানানোর পর শনিবার অঞ্চলটিতে মৃত্যুর সংখ্যা এই দুঃখজনক মাইলফলক পার হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্সের টালি। এখন পর্যন্ত ইউরোপে প্রায় ৮০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে আড়াই লাখের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের দুই-তৃতীয়াংশই যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া, বেলজিয়াম ও স্পেনের বাসিন্দা। প্রায় ৪৫ হাজার মৃত্যু নিয়ে এ তালিকায় যুক্তরাজ্য ইউরোপের শীর্ষে আছে; এরপরই আছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে শীত মৌসুমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা মুছে গিয়েছে।

প্যারিসের নিকটবর্তী একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যেয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখ্যোঁ বলেছেন, ‘বিজ্ঞানীদের কথা অনুযায়ী আমরা মনে করছি যে, পরের গ্রীষ্ম করোনা সংক্রমণ থাকবে।’ শুক্রবার বিশ্বের সপ্তম দেশ হিসেবে ফ্রান্সে মোট সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। এ দিন নতুন করে আরও ৪২ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে যা দৈনিক সংক্রমণের দিক থেকে আগের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সে নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোভিড-১৯ রোগীতে ইতিমধ্যে ফ্রান্সের ৫ হাজার নিবিড় পরিচর্যা শয্যাগুলির অর্ধেক ভরে গিয়েছে এবং সরকারের একজন পরামর্শদাতা সতর্ক করেছেন যে, বসন্তের তুলনায় ভাইরাসটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে অর্থনীতি বাঁচাতে মরিয়া সরকারগুলি এখনও লকডাউন এড়ানোর জন্য নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। আরেক ক্ষতিগ্রস্থ দেশ বেলজিয়াম সামাজিক যোগাযোগ আরও সীমিত করেছে এবং ভক্তদের খেলা দেখতে মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপে মাথাপিছু সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে উপরে থাকা চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিস বন্ধ হতে যাওয়ার কথা ছিল এমন একটি রেস্তোঁরায় সভা করা ও মাস্ক ব্যবহার না করে নিয়ম লঙ্ঘন করায় তার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ১০ লাখ সংক্রমণের মাইলফলক অতিক্রমকারী স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার ক্যাসিটেলা এন্ড লিওন ও ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলদুটির স্থানীয় সরকারকে রাতের বেলায় কারফিউ আরোপ করতে বলেছে। ইউরোপের মধ্যে স্পেনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তবে প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজের মতে আসল চিত্রটি আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেছেন, দেশব্যাপী অ্যান্টিবডি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এর পরিমাণ হতে পারে ৩০ লাখেরও বেশি। ইতালির শীর্ষ জনস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, পরিস্থিতি অনেক অঞ্চলে উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে এবং সবাইকে চিহ্নিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নিজস্ব হাসপাতালগুলি ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে পড়ায় নেদারল্যান্ডস রোগীদেরকে জার্মানিতে পাঠাতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, মহামারীর গতি হ্রাস করতে যুক্তরাজ্য শুধু টিকার ওপর নির্ভর করবে না, অন্যান্য পদক্ষেপও গ্রহণ করবে।

ইউরোপের ক্রমাগত সংক্রমণ বৃদ্ধি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে জটিল অবস্থা বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারির কারণে উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত দেশগুলো ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন