শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনলাইন ক্লাসে ভোগান্তি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা বিপাকে ক্লাসের বাইরে অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থী রেকর্ড দিতে নারাজ শিক্ষকরা

কুবি থেকে মেহেদী হাসান মুরাদ : | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর তাগিত দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন গত ১৫ জুলাই থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের অভাব, ইন্টারনেট উচ্চমূল্য, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক অসুবিধা, অসচ্ছলতাসহ অনলাইন ক্লাস গ্রহণের বিষয়ে নীতিমালার অভাবে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছেন না ক্লাসে।

ইউজিসি থেকে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের জন্য শিক্ষা ঋণ প্রদানের বিষয়ে নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। শিক্ষা ঋণের জন্য ৬৩৩ জন শিক্ষার্থীর নাম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে পাঠানো হলেও সেই কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড বা ভিডিও দেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষকই ক্লাস রেকর্ড দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিতে না পারলেও একাধিক বিভাগে উপস্থিতি গণনা করা হয়, যা চূড়ান্ত পরীক্ষার ৪০ নম্বরের ইনকোর্সে যুক্ত হবে। অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ^বিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের প্রায় ৪০টি চলমান ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিভাইস না থাকা ও ইন্টারনেট সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাসে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছেন না আবার যারা এই দুটি সঙ্কট কাটিয়ে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন তারা অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত না হওয়ায় প্রতিনিয়তই পড়ছেন বিপাকে। ক্লাসের রেকর্ড দিতে অনিহা প্রকাশ করেন প্রায় সকল শিক্ষকগণ। এতে অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের এমন ভোগান্তি থাকলেও সমস্যা দূরীকরণে নেই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ।

একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, নানামুখী সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেন না। তারমধ্যে ইন্টারনেট স্পিড না থাকা, শিক্ষকের কথা না শোনতে পাওয়া, কথা শোনতে পেলেও বোঝতে না পারা, পরবর্তীতে নোট বা অ্যাসাইনমেন্ট করতে না পারা। তাছাড়া অনেক সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উভয়ের পাঠ্য বিষয়গুলো রিমাইন্ড করার জন্য হলেও ক্লাস রেকর্ড দেয়া উচিত।

তবে শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ থাকলেও শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসে পড়াতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে হয়। যেখানে সমাজ, ধর্ম, রাজনৈতিক ইস্যু চলে আসে। যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। তাই গোপনীয় রক্ষার্থে অনেক শিক্ষক রেকর্ড করতে দিতে চায় না। অনেক সময় এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগও একটা অন্যতম কারণ।
এদিকে, ইউজিসি থেকে স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের জন্য শিক্ষা ঋণ প্রদান করতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের যে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেটারও নেই কোন অগ্রগতি। যদি সেই ঋণটি পাওয়া যেত তাহলে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে পারতেন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষা ঋণ প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সকল কিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনটি মোবাইল সিম আপারেটরের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়েছি সুলভ মূল্যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য। শিক্ষার্থীরা তাদের সকল ক্লাস রেকর্ড নেটে পাবেন আর যে কোন সময়ে তারা তা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, রেকর্ড দেয় না সে বিষয়টি জানা ছিল না। অবশ্যই শিক্ষকদের বলবো ক্লাস রেকর্ড যেন শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। প্রয়োজনে নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি শিক্ষকদের জানাবো। ক্লাস রেকর্ড দিলে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসটি করতে পারবেন। ইউজিসির নির্দেশনায় অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬৩৩ জনের তালিকা ইউজিসির কাছে পাঠানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন