শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ প্রয়োগের অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে ভিন্নমত দমন করতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা অ্যাকটিভিস্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করে প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন বাধা নেই।

স¤প্রতি ফ্রান্সে অবস্থানরত ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের বগুড়া জেলার বাড়িতে দুজন পুলিশ সদস্য তার বৃদ্ধ মা এবং মামাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন মি. ভট্টাচার্য।
মি. ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে তার লেখার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সেইসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। তার এ লেখালেখির জেরেই পরিবারকে এমন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন। এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়িতে হাজির হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাকে ভিন্নমত দমনের ক্ষেত্রে এক ধরনের পরোক্ষ চাপ বলে মনে করছেন মি. ভট্টাচার্য।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাপারে কিছু জানার থাকলে তারা আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবে। আমার বাসায় গিয়ে পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা তো এক ধরনের পরোক্ষ হুমকি। আমি খুবই উদ্বিগ্ন। আসলে এগুলো হল আমার লেখালেখি বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টির কৌশল। যেন আমি লেখালেখি থেকে বিরত থাকি।
এর আগে জুলাই মাসে ব্লগার আসাদ নূরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি তার বরগুনার বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তার বাবা মাসহ পরিবারের ৬ জন সদস্যকে দুদিন আটক রাখারও অভিযোগ রয়েছে।
এপ্রিলে সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক তাসনিম খলিল অভিযোগ করেছিলেন যে, তার লেখালেখির কারণে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় তার মায়ের বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ভয়ভীতি দেখিয়েছে।

বাংলাদেশে মানবাধিকারকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন চলমান হয়রানি বন্ধ করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চারটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তারা হল: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।

যারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করেন এবং এ কারণে যাদেরকে হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাদের ওপর এমন চাপ প্রয়োগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এসব সংস্থা। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে দেশটির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে বলেও উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এসব সংস্থা। তারা বলছে, এ আইনের আওতায় তারা নির্বিচারে গ্রেফতার, অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখাসহ মানুষকে গুম করে দিচ্ছে।

এমন অবস্থায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি হয়রানির এসব অভিযোগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। না হলে গণতান্ত্রিক দেশটিতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন।
মি. খান বলেন, ‘যারা যৌক্তিকভাবে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন তাদেরকে আইন প্রয়োগ করে বা না করে হেনস্তার ঘটনা সামনে এসেছে। ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমের মতো অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিককে হেনস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মত প্রকাশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে’।

এ হুমকি ও হয়রানির অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে যারা এসব অভিযোগ আনছেন তাদের কেউ অফিশিয়ালি অভিযোগ দায়ের না করায় এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তার মতে, বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন বাধা নেই।

তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী এবং স্বাধীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লেখেন তারা সমালোচনা করার অধিকার রাখেন। এজন্য যদি কাউকে হয়রানি করা হয় বা ভয়ভীতি দেখানো হয় তাহলে তার উচিত হবে নিকটস্থ থানা, তথ্য মন্ত্রণালয় না হলে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করা। তাহলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

গত জুনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে জানায় যে, ডিজিটাল নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশের অবাধ তথ্য প্রবাহ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। ভিন্ন মতপ্রকাশের জেরে সারাদেশে হামলা, মামলা, হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলো উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ জানায় সংস্থাটি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন