বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যে ফলাফল নিয়ে উৎকণ্ঠা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মধ্য প্রাচ্যের অনেক মানুষই মনে করেন, তাদেরকে আমেরিকার নির্বাচনে ভোটাধিকার দেয়া উচিত। গত কয়েক দশক ধরেই, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এই অঞ্চলে যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসছেন। বর্তমান সরকারও এর ব্যতিক্রম নন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদও ইরানের সাথে বিরোধের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। তার কারণে সেখানে হত্যাকান্ড, নাশকতার ঘটনা এবং অবরোধের মাধ্যমে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আমেরিকার নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সেই দ্ব›েদ্ব সাময়িক বিরতি আসলেও উদ্বেগ রয়ে গেছে। নির্বাচনের ফলাফরের জন্য পুরো অঞ্চলটি অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে। পারমাণবিক আলোচনার সম্ভাবনা থেকে শুরু করে নতুন লেবাননের সরকার গঠন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে ইরান এবং এর মিত্ররা আমেরিকান নির্বাচনের ফলাফল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। তবে এই নির্বাচন নিয়ে অঞ্চলটির নেতারা যতটা প্রত্যাশা করছেন, বাস্তবে ততটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

গত নির্বাচনে ট্রাম্প ইরান ও বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং ২০১৫ সালে তা বাস্তবায়ন করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমাবদ্ধ করার বিনিময়ে ইরানের জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করা হয়েছিল। যদিও ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির বাইরে যাননি, এবং নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি চাপানো শুরু করার আগেই তার মেয়াদ ক্ষমতার মেয়াদ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। নতুন চুক্তিতে আলোচনার চেয়ে ইরানের নেতারা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দেখেছিলেন, আলোচনা করার সুযোগ খুব সামান্যই রয়েছে। কারণ, ট্রাম্প কী চান, সেটি কখনোই তিনি স্পষ্ট করেননি। আমেরিকাবিরোধী মনোভাবসম্পন্ন একটি দেশের জন্য ভালো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় একজন যুদ্ধবিরোধী প্রেসিডেন্ট থাকলে।

ইরান ও তার মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রকট সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর পরিবর্তে দায়বদ্ধতা এড়াতে তারা প্রক্সিযুদ্ধের উপর নির্ভর করছে। ইরাকি মিলিশিয়ারা যারা বাগদাদে আমেরিকার দূতাবাসে রকেট হামলা চালায় তারা ইরানের সাথে তাদের সম্পর্কের কোনও গোপনীয়তা রাখে না। তবে সম্প্রতি এমনকি তাদের স্বাধীনতাও সীমাবদ্ধ হয়েছে। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অফ মাইক পম্পেও দূতাবাস বন্ধের হুমকি দেওয়ার পরে মিলিশিয়ারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। যুদ্ধবিরতি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চলবে, সম্ভবত বছরের শেষ অবধি।

গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে বিপর্যয়কর বিস্ফোরণের পরে প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও লেবাননের রাজনীতি এখনও পঙ্গু হয়ে রয়েছে। বিস্ফোরণের পরে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট একজন ক‚টনীতিক মোস্তফা আদিবকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য বলেছিলেন। তবে আমেরিকা ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া এবং রাজনৈতিক দল এবং তার মিত্রদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যান্য রাজনীতিবিদরা হিজবুল্লাহর (যারা গত নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হয়েছিল) সাথে মন্ত্রিসভায় যোগদান নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। আদিব পদত্যাগ করলেন। পঙ্গু অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য লেবাননের মরিয়াভাবে নতুন সরকারের দরকার, তবে আমেরিকায় নির্বাচনের আগে পর্যন্ত এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

এসব ঘটনায় মনে হয় ট্রাম্প ইরানকে সুতা ধরে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদেরকে নিষেধাজ্ঞাগুলির মাধ্যমে শ্বাসরোধ করে রাখায় তাদের মিত্ররা একইরকম ভাগ্য হতে পারে বলে অস্বস্তিতে রয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের প্রবল সমর্থকও রয়েছে, যারা এই অঞ্চলটিকে নতুনভাবে রূপ দেয়ার জন্য আরও চার বছর এই ‘প্রচন্ড চাপ’ বজায় থাকবে বলে আশা করছে এবং জো বাইডেন ক্ষমতায় আসলে এই অগ্রগতিটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন। তবে তারাও হতাশ হতে পারেন। নভেম্বরে যে জয়ী হবে, তার সাথে ইরান সম্ভবত একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হবে। এটি আরও চার বছর ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারবে না। তবে কোনও প্রার্থীই পারমাণবিক বিষয় নিয়ে বেশি ছাড় দিতে পারবেন না। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির পক্ষে সমর্থন ইরানের জন্য দর কষাকষির বিষয় নয়, এটি তাদের জন্য একটি আদর্শগত আবশ্যক এবং সুরক্ষা মতবাদের মূল বিষয়। সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনেই ৮১ বছর বয়সী এবং তিনি তার কট্টরপন্থী নীতিগুলি বজায় রাখতে আগ্রহী। ইরানের রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাবশালী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সদস্যরাও তাকেই অনুসরন করে।

তবে এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, তা ইরান ও তার শত্রæ উভয়ের জন্যই হতাশাজনক হতে পারে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-কাদিমি মিলিশিয়াদের উপর লাগাম লাগাতে চান। তবে তিনি আশঙ্কা করছেন যে, বেশি তাড়াহুড়ো করলে রক্তপাত হতে পারে। ওয়াশিংটনের চাপ তার নীতি পরিবর্তন করবে না। এবং লেবানন যতই দারিদ্র ও অস্থিতিশীলতার দিকে আরও গভীরভাবে সরে যাবে, সেখানে হিজবুল্লাহ (অন্যান্য দলগুলির মতো) ততই শক্তিশালী হবে এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের শূন্যস্থান পূরণ করবে। আমেরিকা এখনও মধ্য প্রাচ্যে বড় আকারের প্রভাকক। তবে অঞ্চলটির নিজস্ব রাজনীতিও রয়েছে। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
অমাত্রিক সমীকরণ ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
আমার একটা প্রশ্ন যারা জানেন তারা একটু দয়া করে বলবেন, কাফের কারা এবং কাফেরদের কি কাফের বললে পাপ হবে নাকি?
Total Reply(0)
Atm Abdur Rahim ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
ট্রাম্পের জয় মানে বিশ্বের বিপর্যয়! আর বাইডেনের জয় মানে আমাদের এ অঞ্চলে নাকগলানো বাড়বে আমেরিকার!! এই ইলেকশন বাংলাদেশের জন্য শাঁখের করাত????
Total Reply(0)
Syed Md Kamal Uddin ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
আফ্রিকানরা জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এবং ওবামা প্রীতি দেখাতে গিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জু বাইডেনকে ভোট দিলেও নেটিভ আমেরিকানদের মেজরিটি ভোট ডনাল ট্রাম্পই পাবেন।অন্যান্য ইমিগ্র্যান্টদের ভোট সমান দুভাগে ভাগ হয়ে যাবে।ট্রাম্পের পরাজয় আমেরিকাকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে,মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধের দামামা বাজতে পারে।
Total Reply(0)
Abdul Alim ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
আমেরিকায় ভোট তা আমাদের কি? আমাদের দেশে তো ভোট নাই!!! যা হয় রাতে,আমরা থাকি ঘুমে!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন