বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দেড় কোটির অলিম্পিকেও অর্জন শূন্য!

প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : অংশগ্রহণে আগের আট আসরের মতো রিও অলিম্পিক গেমসেও এবার চরম ব্যর্থ বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে প্রথম অংশ নেয়ার পর থেকে নিয়মিতই এই আসরে খেলে আসছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞের কোন আসরে সাফল্য পাওয়া তো দূরে কথা, নিজেদের সেরাটাই দেখাতে পারেননি তারা। অনেক আশা নিয়ে এবার রিওতে নবমবারের মতো অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ খ্যাত এই আসরে অতীতের মতই চরম ব্যর্থ লাল-সবুজরা। পদক পাওয়া তো স্বপ্ন, রিও অলিম্পিকে নিদেন পক্ষে ভালো করার প্রতিশ্রæতিটুকুও রক্ষা করতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। এবার অলিম্পিকের পাঁচ ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের সাত ক্রীড়াবিদ অংশ নেন। এদের মধ্যে একজন গলফার সিদ্দিকুর রহমান সরাসরি খেলার সুযোগ পান। কিন্তু একমাত্র সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ছাড়া অন্যরা রিও’তে নিজেদের ভালো করার প্রতিশ্রæতিটুকুও রাখতে পারলেন না। উল্টো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ফল করেই দেশে ফিরছেন তারা। অথচ রিও অলিম্পিকে খেলার জন্য অনুশীলন ক্যাম্প ও অংশগ্রহণ বাবদও বাংলাদেশের খরচ হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
সাত ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কোন কাজ ছাড়াই রিও’তে গেছে বাংলাদেশ কর্মকর্তাদের বিশাল বহর। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রিও অলিম্পিক বাবদ বাংলাদেশের ব্যয় হওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকার সিংহভাগই গেছে বিমান ভাড়া বাবদ। ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দলের বিমান ভাড়ায় লেগেছে ৪৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে দেরী হওয়ায় গলফ (২), অ্যাথলেটিকস (৩) ও সাঁতার (৩) দলের ৮ জন সদস্য রিও’তে গেছেন ১ আগস্ট টার্কিশ এয়ারওয়েজ যোগে। জন প্রতি দু’লাখ ৭০ হাজার টাকা করে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া খরচ হয়েছে তাদের পেছনে। আর অন্য আটজন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসেসিয়েশনের (বিওএ) সদস্য গেছেন ব্যয়বহুল অ্যামিরেটস বিমান যোগে। এই ৮ জনের বিমান ভাড়া লেগেছে ২৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা (প্রতিটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার)। এতো বিশাল অংকের অর্থ খরচ হয়েছে যে অলিম্পিকে, সেখানে বাংলাদেশের সাফল্য শূন্য। অথচ রিও’র উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে সাত ক্রীড়াবিদের সবাই নিজেদের সেরাটা দেয়ার কথাই বলেছিলেন।
একমাত্র কথা রাখতে পেরেছেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। তিনি ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলের হিটে সময় নেন ২৩.৯২ সেকেন্ড। যা লন্ডন অলিম্পিক গেমসের (২৪.৬৪) চেয়ে .৭২ সেকেন্ড কম। আরচ্যার শ্যামলী রায় অ্যালিমিনেশন (১/৩২) রাউন্ডে মেক্সিকান গ্যাব্রিয়েলার কাছে সরাসরি ৬-০ পয়েন্টে হেরেছেন। আবদুল্লাহেল বাকী ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২১.২ স্কোর করে ৫০ জনের মধ্যে ২৫তম হন। খুব বাজে ফলাফল করেছেন সাঁতারু সোনিয়া আক্তার টুম্পা এবং অ্যাথলেট মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার। সাঁতারু টুম্পা ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে হিটে ২৯.৯৯ সেকেন্ড সময় নেন। হয়েছেন ৬৯তম। অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারী হিটে সাতজনের সঙ্গে দৌঁড়ে শিরিন ১২.৯৯ সেকেন্ডে সবার শেষে থামেন। তার ক্যারিয়ার সেরা ছিল ১১.৯৯ সেকেন্ড। প্রিলিমিনারী রাউন্ডে ২৪ অ্যাথলেটের মধ্যে শিরিনের অবস্থান ১৭তম। মেজবাহর’র অবস্থাও একই রকম। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারী হিটে সাত জনের মধ্যে ১১.৩৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে চতুর্থ হন। আর প্রিলিমিনারী রাউন্ডের তিন হিটে সব মিলিয়ে ২১ জন স্প্রিন্টারের মধ্যে ১৪তম হন বাংলাদেশের দ্রæততম মানব! কিন্তু তার ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং ছিল ১০.৪৩ সেকেন্ড।
সরাসরি অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়েও তা ব্যর্থতায় শেষ করেছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। যাকে নিয়ে দেশবাসীর অনেক আশা ছিলো, সেই সিদ্দিকুর গলফে ৬০ জনের মধ্যে হয়েছেন ৫৯তম। তার এই ফলাফলে হতাশ পুরো বাংলাদেশ। যেখানে ফিজি, পুয়ের্তো রিকে এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশের ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশ কি পাচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন দেশের আপামর ক্রীড়াপ্রেমীর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন