বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে আতঙ্কিত বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। কোটি কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মৃত্যুর শিকার হয়েছে। বাংলাদেশেও ৫ হাজারের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে মারা গেছে। আগামী শীতে বাংলাদেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েব দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে প্রস্তুতির কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু নিরব ঘাতক হিসেবে ইতিমধ্যে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুভার্বও ইতিমধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। সারাদেশে এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক মানুষ ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে অন্তত ৪৬জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আগের তিন সপ্তাহের সংখ্যার প্রায় সমান। তবে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। সরকারি হিসাবেই গত বছর জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং মৃতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে সরকারি হিসাবে ঢাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অন্তত ৭৫ জন। সাধারণত বছরের শুরুতে এবং বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রাদুভার্ব দেখা গেলেও এবার শীতের আগেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিষয়টি এলার্মিং বলে মনে করা হচ্ছে।

করোনার ভাইরাসের মত ডেঙ্গুর ভাইরাসেরও কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক নেই। ডেঙ্গুতে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার করোনার মত এত বেশি না হলেও এতে ভোগান্তি ও শারিরীক ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি এবং দীর্ঘ মেয়াদি। ডেঙ্গু বিস্তারের সুনির্দ্দিষ্ট কোনো বাহক চিহ্নিত করা এখনো সম্ভব না হলেও ডেঙ্গুর মূল পরিবাহক হিসেবে এডিস মাশার বিস্তার রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সফল হলেও আমরা এখনো নাগরিক জীবনে ডেঙ্গুর ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে বসবাস করছি। এ থেকে আমাদের পরিচ্ছন্নতা, ড্রেনেজ সিস্টেম ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অসঙ্গতিই ফুটে ওঠে। সরকারি হিসেবে গত বছর ঢাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যা’ ছিল বিগত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এবার বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মৃত্যু ভয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের আশঙ্কা। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে আতঙ্ক দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে এডিস মশা নিধন এবং মশার সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থলগুলোতে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে যে সব উদ্যোগ ও সতর্কতা জারি করা হয়েছিল এবার এখনো সে ধরণের কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না।

শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েব শুরুর পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। আমরা জানি, করোনায় আক্রান্ত রোগীরা মূলত ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টে ভুগে থাকেন। ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার মত পুরনো উপসর্গগুলোর সাথে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের বাড়তি জটিলতা দেখা দিতে পারে। আগামী বছর নাগাদ একাধিক করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যাপারে বিশ্ব আশাবাদী। তবে ডেঙ্গুর মত প্রাণঘাতি রোগের ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিয়ে তেমন কোনো আশাবাদী তথ্য না থাকলেও নাগরিক সমাজের সাধারণ পরিচ্ছন্নতা, সতর্কতা ও এডিস মশা নিমূর্লে নগর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব। এহেন বাস্তবতায় নগরীর পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুয়্যারেজ সিস্টেম এবং এডিস মশা নিমূর্লে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সময়ে করোনা এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা থাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ, সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। এডিস মশা নিধন, নিউমোনিয়ার মত শীতকালীন স্বাস্থ্য সমস্যা কমিয়ে আনতে শহরের ধূলোময়লা, বাতাস ও পরিবেশ দূষণের মত বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। করোনার কারণে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা ও সীমিত হয়ে পড়ার বাস্তব প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গু মোকাবেলায় যে সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন তা এখনি করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:২৩ পিএম says : 0
PM and government people they have visited several European country/Australia/America. Didn't they see that country is so clean they why our country is like a dustbin>>???? reason behind that government don't love our beloved country they just want to remain in power and loot our hard earned money and send it to foreign country. In Islam cleanliness is Major part of Iman.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন