শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কারাগারে কনস্টেবল টিটু দাস

আকবর পালানোয় সহযোগী শনাক্তের প্রতিবেদন দাখিল বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত কনেস্টবল টিটু চন্দ্র দাসকে। দু’দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিলো। এদিকে রায়হান হত্যা ঘটনার মূল হোতা এস আই আকবর পলায়নে সহযোগী শনাক্তে পুলিশ সদর দফতরের গঠিত ৩ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে জল্পন-কল্পনা দেখা দিয়েছে জনমনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বা হবে কি-না তা নিয়েও বিরাজ করছে কৌতুহল। এদিকে রায়হান হত্যা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট। গতকাল বিকেলে জো্েটর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রায়হান পরিবারের সাথে দেখা শেষে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ দিয়ে পুলিশের তদন্ত হবে না। আকবর গ্রেফতার নিয়ে নাটক হচ্ছে বলে জানান বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা।

স্বীকারোক্তি দেয়নি কনেস্টবল টিটু : ধারণা ছিল রায়হান খুনের সাথে দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি প্রদান করবে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির কনেস্টবল (বরখাস্তকৃত) টিটু চন্দ্র দাস। জবাববন্দি প্রদানে অস্বীকৃতি করায় ২ দফা রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু গতকাল ২য় দফা রিমান্ডের ৩ দিন শেষ হওয়ায় আদালতে হাজির করা হয় টিটুকে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সিলেট অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক জিয়াদুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আদালত সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত পুলিশ কনস্টেবল টিটু প্রথম দফার ৫ দিনের রিমান্ডে থাকাকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দি প্রদানে রাজি হয়নি সে। জবানবন্দি না দেয়ার কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবারো ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কিন্তু গতকালও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেনি টিটু। পরবর্তীতে দুপুরে আদালতের বিচারক কনস্টেবল টিটুকে কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। গত রোববার দ্বিতীয় দফায় সিলেট অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক জিয়াদুর রহমানের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম টিটু চন্দ্রের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, গত ২০ অক্টোবর পুলিশ লাইন্স থেকে টিটুকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়েছিল পিবিআই।

আকবর পলায়নে সহযোগী শনাক্তের প্রতিবেদন আইজিপি বরাবরে জমা : রায়হান হত্যা ঘটনায় অভিযুক্ত এস আই আকবর পলায়নে সহযোগী শনাক্তে পুলিশ সদর দফতরের গঠিত ৩ সদস্যের টিম জমা করেছেন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন। গত মঙ্গলবার আইজিপি ড. বেনজির আহমেদের কাছে প্রতিবেদন জমা প্রদান করেন কমিটির প্রধান এ আই জি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মো. আয়ুব।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রায়হান হত্যা ঘটনায় এস এম পির শীর্ষ পর্যায় থেকে মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যন্ত অনেকেই দায় এড়াতে পারবেন না। দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এছাড়াও তদন্ত কমিটির মত অনুযায়ী কারও দায় থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আকবরকে বরখাস্ত করা হয় গত ১২ অক্টোবর। এরপর থেকেই সে লাপাত্তা। এ ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিলেও আকবরকে নেয়া হয়নি।
কেন তাকে নেয়া হয়নি, কে তাকে পালানোর সুযোগ দিয়েছে তা চিহ্নিত করতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। হেডকোয়ার্টাসের এ আই জি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মোহাম্মদ আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা ছিলেন- সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম, এস এম পির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মুনাদির ইসলাম চৌধুরী।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আকবরকে পালাতে সরাসরি সহায়তা করেছেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির (টু-আই-সি) এস আই হাসান। আকবরকে গ্রেফতার করা হবে একটি সূত্রে এ খবর জানতে পারে হাসান। সেই তথ্য আকবরকে জানিয়ে দেন তিনি। ঘটনার দিন বেলা ৩টা ৫৬ মিনিটে বন্দর ফাঁড়িতে হাসানের কাছে অস্ত্র, ওয়্যারলেস সেট ও মোবাইল সিম হস্তান্তর করে বেরিয়ে যান আকবর। কিন্ত সন্ধ্যা ৬ টার দিকে হাসান এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানান। এছাড়া এস আই হাসান বন্দর ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পাল্টানোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাও এসএমপির তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। তবে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি সিলেটে আসার পূর্ব পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেন নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। এ বিষয়টিকেও তদন্তে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। তদন্তেও প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়- এস আই আকবর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। এরপরও কেন তাকে পুলিশ লাইনে হেফাজতে নেয়া হয়নি এ বিষয়টি তদন্তের মূল গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু ছিল।

আকবরকে বরখাস্তের নির্দেশনার সঙ্গে হেফাজতে নেয়ার নির্দেশনা ও পালিয়ে যাওয়ার আগে আকবর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে থাকা অবস্থায় তার প্রতি নজরধারী রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যারা গড়িমসি করেছেন তাদেরকেই দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বাতেন কেন আকবরকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক রাখেননি সে বিষয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

এদিকে, নবনিযুক্ত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেছেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার এসাইমেন্ট নিয়ে সিলেট এসেছেন তিনি। একদিকে তদন্ত প্রতিবেদন এছাড়া তার নিজস্ব এসাইমেন্ট এর কার্যকারীতা বাস্তবায়ন হলে, আকবরের মদদদাতাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হয় তা দেখার অপেক্ষায় সিলেটবাসী। আকবরের ঊর্ধ্বতন তদারকি কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নির্লিপ্ততা ছিল। তাদের কারণেই বন্দরবাজার ফাঁড়ি এলাকায় অপরাধের চাষ ও অবৈধ অর্থের প্রতি মনোযোগী হতে বাধ্য হয় আকবর। অর্জিত অর্থের ২৫ হাজার টাকা প্রতিদিন এক বড় কর্তাকে দিতে হতো আকবরকে। এছাড়া ওই কর্তার স্ত্রীর বাজার সওদা করে দিতেন প্রতিদিন আকবর। এ ঘটনাগুলো মুখে মুখে ফিরছে সিলেটবাসীর। এখন এই কর্তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় এটাই ভাবছে সিলেটের সচেতন মহল। কারণ ছাগল নাচে খুঁটির জোরে। সেই খুটি আকবরের ছিলেন ওই বড় কর্তা।

রায়হান পরিবারের সাথে দেখা করলো বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা : বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল বিকেল ৩টায় দেখা করেন রায়হান পরিবারের সাথে। কথা বলেন তার মায়ের সাথে। মানববন্ধন করেন নিহত রায়হানের আখালিয়াস্থ এলাকায়। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ দিয়ে পুলিশের তদন্ত হবে না। প্রয়োজন বিচার বিভাগীয় তদন্তের। নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার।
তারা বলেন, রায়হানের মাকে শান্তনা দেয়ার সময় এখনও আসেনি। ১৮দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার মূল হোতা আকবর এখনও আটক হয়নি। তারা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুব জোরালো ভাবে বলেছিলেন, আকবর দেশের মধ্যে আছে, তাহলে কেন আকবর আটক হচ্ছে না। তারা আকবর আটকের জন্য পুলিশকে ব্যর্থ বলতে নারাজ, এ ব্যর্থতা সরকারের। সরকারের সিগন্যাল পেলেই আকবর আটক সম্ভব।
তারা বলেন, আকবর গ্রেফতার নিয়ে অভিনয় চলছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে যে কথা বলে আদালতে সে কথা অস্বীকার করছে। তারা বলেন দেশের গোয়েন্দা বা বিশেষ বাহিনী এতো অদক্ষ নয় যে আকবর ধরতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আকবর কোথায় আছে তা অবশ্যই জানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, কিন্তু ধরতে সিগন্যাল দরকার। এ উপস্থিত ছিলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লা কাফি রতন, বাসদ কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন