মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাজী সেলিমের দখলবাজি

আতঙ্কে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

পুরান ঢাকায় আধিপত্য বিস্তার করে একের পর এক জমি দখল করেছেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার পরিবার। কখনো তান্ডব চালিয়ে, আবার কখনো জোরপূর্বক, কখনো মামলা-হামলা করে জমি, বাড়ি ও মার্কেট দখল করেছেন তারা। তাদের দখলের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলও। তবে হাজী সেলিম বাহিনীর ভয়ে কেউ কথা বলতে চাচ্ছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে হাজী সেলিম বাহিনীর ভয়ঙ্কর ভ‚মি দখলের কাহিনী জানা গেছে। তারা বলছেন, হাজী সেলিম পুরান ঢাকার অন্তত আড়াইশ’ স্পটে বাড়ি, দোকান ও মার্কেটের জায়গা দখল করেছেন। ১৯৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে হাজী সেলিমের দখলবাজি শুরু করেন। তার দখলবাজিতে অতিষ্ট পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই যুগে হাজী সেলিমের লোকজন শত শত মানুষের জমি দখলে নিয়েছে। পাকা ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অনেক পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে। হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জমি দখলের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন, নবাব পরিবারের সম্পত্তি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। সেলিম বাহিনীর দলবাজি চললেও কেউ কিছুই করতে পারেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ যাওয়ার পর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে বারবার বলা হলেও কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি হাজী সেলিম।

তিব্বত হল দখল : পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল জোরপূর্বক দখল করেন হাজী সেলিম। ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনের ৮.৮৮৯ কাঠার জমি দখলের পর ২০০১ সালে মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। নিজের স্ত্রী গুলশান আরার নামে মার্কেটটির নামকরণ করেন তিনি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। কিন্তু কয়েক দফা আন্দোলন করেও হলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে হলের জমি নিজস্ব বলে দাবি করেন হাজী সেলিম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ৯০ দশকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা হলটির দোতলায় আগুন দেয়। এরপর থেকে জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিব্বত হল লেখা সাইনবোর্ড ঝুলানো ছিলো। পরবর্তীতে সাইনবোর্ডটিও সরিয়ে ফেলেন হাজী সেলিম বাহিনী।

শহীদ আনোয়ার শফিক হল : আরমানিটোলা মাহুতটুলির ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডের ৪০ কাঠার হলটিও হাজী সেলিমের দখলে রয়েছে। পুরানো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করে টিন, হার্ডওয়ার ও ফার্নিচারের গোডাউন তৈরি করেছেন তিনি। এর আগে ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে হলটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা।
অগ্রণী ব্যাংকের জায়গা দখল : পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার এলাকায় ১৪ শতক জমি দখলে রেখেছিলেন হাজী সেলিম। অবশেষে গত সোমবার অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা দখলমুক্ত করে। সেদিন সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেদের জায়গা বুঝে নেয়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, মৌলভীবাজার এলাকায় ১৪ শতাংশ জমির উপর একটি দুইতলা ভবন ছিল। স্বাধীনতার পর নির্মিত ভবনটি অনেক পুরাতন হওয়ায় কিছু দিন আগে নতুন ভবনে শাখা স্থানান্তর করা হয়। তবে বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ব্যাংকের শাখাটিও বন্ধ ছিল। এখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী ভল্ট পাহারা দিতে ভেতরে অবস্থান করে। সেই সুযোগে চলতি বছরের মে মাসে পুরোনো ভবনটি গুড়িয়ে দিয়ে দখলে নেয় হাজী সেলিম।
বধির সমিতির জমি দখল : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের লালবাগ থানা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুলের ১ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। জমিটি দখলমুক্ত করতে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার জানান, ২০০৫ সালে বধির সমিতিকে জায়গাটি সরকার বরাদ্দ দেয়। এরপর ২০০৭ সালে সেটি দখলে নেন হাজী সেলিম।

সরদার কোল্ড স্টোরেজ : বেড়িবাঁধ এলাকার ১৬/বি হোল্ডিংয়ের ছোটকাটরায় হাজী সেলিম সরদার কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। এটিও এক ব্যক্তির জমি দখল করে বানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, জায়গাটি দখলে নেয়ার পর আজও তা উদ্ধার করতে পারেনি ওই পরিবার। বাধ্য হয়ে আদালতে তারা মামলা করে। কিন্তু সেই মামলার পর বিভিন্ন সময় নোটিশ পাঠানো হলেও কোনো তোয়াক্কা করেননি হাজী সেলিম।

মদিনা আশিক টাওয়ার : চকবাজারে অবস্থিত মদিনা আশিক টাওয়ারের জায়গাটিও দখল করেছিলেন হাজী সেলিম। ওই জায়গার মালিকের নামে ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করে পুরো জায়গা দখল করে নেন তিনি। শুধু তাই নয়, আশিক টাওয়ারের জমি দেখিয়ে পূবালী ব্যাংক থেকে হাজী সেলিম ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেন, যা এখনও শোধ করেননি। তারপরও মার্কেটের পজিশন বিক্রি করছেন তিনি।
জিলাপি বিক্রেতার বাড়ি দখল : চকবাজার এলাকায় এক জিলাপি বিক্রেতাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় হাজী সেলিম বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে জমিটি হাজী সেলিমের নামে লিখে নেয়া হয়। পরবর্তীতে জিলাপি বিক্রেতার পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

আরো যত দখল : চকবাজারের মৌলভীবাজারে সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখল করেছেন হাজী সেলিম। শুধু তাই নয়, ঐতিহ্যবাহী আহসান মঞ্জিলের পাশে নবাব পরিবারের জমি দখল করে সেখানে মার্কেট করেছেন হাজী সেলিম। চকবাজারের মৌলভীবাজারে গুলমদন টাওয়ারের পাশে বিসমিল্লাহ টাওয়ার মার্কেটটিও দখল করেছে সেলিম বাহিনী। এছাড়া পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের পাশে কামালবাগে খাল দখল করে ড্রামপট্টি তৈরি করেছেন হাজী সেলিম। যেখান থেকে তার প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি।

গতকাল র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল রকিবুল হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দখলবাজি নিয়ে এখনো আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Fardin Tahmid ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
সকল এমপির একই ক্যাটাগরির
Total Reply(0)
Muhammad Asadul Islam ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
একজন সংসদ সদস্যেরই এই অবস্থা??
Total Reply(0)
Mohd Hossain ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
আগে কেন রিপোর্ট করেন নি।
Total Reply(0)
Md Mominul Islam ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
আরো খুঁজেন কয়েক মাসেও রিপোর্ট করে শেষ করতে পারবেন না।
Total Reply(0)
Mohin Uddin ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
এতদিন সাংবাদিক আর পুলিশ র‍্যাব কোথায় ছিল ? এত টাকা খরচ করে আমাদের গোয়েন্দা রাখার কি দরকার ছিল!!
Total Reply(0)
Sohel Rana ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
বাংলাদেশি হাজারো টর্চার সেল আছে আমার মনে হয়। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক, আল্লাহ আমাদের জালিমদের হাত থেকে রক্ষা করুক।
Total Reply(0)
Shadad Hossain ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
হাজী সেলিম ভয়ংকর একটি নাম। শুনা গিয়েছিল তৎকালীন বাগেরহাটের শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারের সহচর ছিল। আর এরাই হচ্ছে দলের সুবিধা বাদী, অনুপ্রবেশকারী।
Total Reply(0)
Saymon Sheikh ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
হাজি সেলিম এক্তা দখল বাজ ঢাকা শহরে সব জায়গায় মানুষের মালিকানা কিনা জায়গা তার দখলে কেও সাহস পায় না তার বিরুদ্ধে এক্সেন নিতে। আমরা চাই এই দেশে সন্ত্রাস মুক্ত হক বাংলাদেশের মানুষ ভালবাবে বাস্তে চায়।
Total Reply(0)
গাজী আরিফুর রাহামান ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
একজন মানুষ খুব বেশি হলে একশো বছর বাঁচে, মৃত্যুর পর কেউ কি পকেটে একটা টাকা কিংবা সাড়ে তিন হাতের বেশি জমি কবরে নিয়ে যেতে পারে? তাহলে কি উদ্দেশ্য মানুষ এই পাপ জুলুম? সম্পদ ও সম্পত্তি তো দুনিয়াতেই থেকে যায় তাহলে কি লাভ হারাম সম্পদ দখল করে অন্যদের হক নষ্ট করা
Total Reply(0)
Mohammed Nazrul Islam Khan ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৪১ এএম says : 0
হাজি সেলিম এক্তা দখল বাজ ঢাকা শহরে সব জায়গায় মানুষের মালিকানা কিনা জায়গা তার দখলে কেও সাহস পায় না তার বিরুদ্ধে action নিতে। আমরা চাই এই দেশে সন্ত্রাস মুক্ত হক . What the Govt. and DUDAK are doing ? Those have been evicted they should complain to RAB with proper document immediately.
Total Reply(0)
Zubaer Ahmed ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ৯:০৭ এএম says : 0
উইপোকা বেশি উড়লে পাখা ভেঙে পড়ে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন