মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বিষ দেয়া খাদ্য থেকে সাবধান

| প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর খাদ্যের ওপরই নির্ভর করে সুস্বাস্থ্য। খাদ্য ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। তাই সবার আগে চাই খাদ্য। ধনী-গরিব সবার জন্য চাই খাদ্য। সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহ্ মানুষকে দান করেছেন অফুরন্ত খাদ্য সম্ভার। স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাবার দেহকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে। আবার ভেজাল বাসি-পচা খাবার মারাত্মক মরণঘাতী রোগ ডেকে আনে। তাই বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে আপনাকেই বেছে নিতে হবে আপনার শরীরের উপযোগী খাদ্য। আপনাকে হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন। কিন্তু আমাদের দেশে- ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের নানা পণ্যে ছেয়ে গেছে দেশ । শিশুর গুঁড়ো দুধ থেকে বৃদ্ধের ইনসুলিন, রূপচর্চার কসমেটিক থেকে শক্তিবর্ধক ভিটামিন, এমনকি বেঁচে থাকার জন্য যা অপরিহার্য, সেই পানি এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত এখন ভেজালে ভরপুর । মাছ, দুধ, শাকসবজি ও ফলমূলে ফরমালিন, হলুদে সিসা, মরিচে ইটের গুঁড়া, সরষের তেলে কেমিক্যাল, মশার কয়েলে বিপজ্জনক উপাদান, গরুর গোশতে হরমোন, মুরগির খাবারে বিষাক্ত উপকরণ । টোকাই থেকে ধনীর সন্তান, ভেজালের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ নয় কেউ-‘যেন ভেজালেই জন্ম, ভেজালেই বেড়ে ওঠা, ভেজালের রাজ্যেই বসবাস।’

আমাদের দেশে উন্নত জাতের ফলমূল, শাকসবজির পাশাপাশি নতুন নতুন ধানও এসেছে। উচ্চফলনশীল এসব ধান দেশে বিপ্লব ঘটিয়েছে ঠিকই কিন্তু অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছি। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির এক তথ্য মতে, গবেষণার জন্য চালের যে ২৩২ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, এর ১৩১টিতে মিলেছে বিভিন্ন মাত্রার ক্রোমিয়াম। ১৩০টিতে পাওয়া গেছে ক্যাডমিয়াম ও সিসা। ৮৩টিতে মিলেছে আর্সেনিকের অস্তিত্ব; যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। শুধু কৃষকের অসচেতনতার জন্যই যে খাদ্য অনিরাপদ হচ্ছে এমনটি নয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল মিশাচ্ছেন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণে স্বাস্থ্য যেমন ঝুঁকিতে পড়েছে, তেমনি জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিণতি কমবেশি সবাইকেই ভোগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে শিশুরা । বিশেষ করে এসব কীটনাশকের অপপ্রয়োগের ফলে উৎপাদিত খাদ্য মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়ে থাকে এবং মানুষের শরীরে ঢুকে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের ঝুঁকিতে ফেলছে মানুষকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। সংখ্যাটা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। তবে ভয়ঙ্কর ব্যাপার খাদ্যের ভেজালের কারণে শুধু আমাদের দেশেই নয়; উন্নত অনেক দেশও বড় বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল এবং হচ্ছে। ১৯৯৪ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই স্যালমোনেলা জীবণু বহনকারী আইসক্রিম খেয়ে ২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ রোগাক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালে দূষিত শামুক ও গলদা চিংড়ি খেয়ে চীনে প্রায় ৩ লাখ মানুষ রোগাক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে চীনে তৈরি কয়েকটি কোম্পানির গুঁড়োদুধ পান করে বহু শিশু রোগাক্রান্ত হয়। ওই দুধে মেলামিনের মাত্রা বেশি ছিল। আমাদের দেশেও ভেজাল খাদ্যের ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার খবর প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া যায়।

ইদানীং খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ভেজাল এবং বাজারে ভেজাল খাদ্যে সয়লাব হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের এ ব্যাপারে গৃহিত পদক্ষেপ তেমন লক্ষণীয় নয়। অথচ দেশে আইনের অভাব নেই। অভাব শুধু প্রয়োগের। বিএসটিআইয়ের ভেজালবিরোধী অভিযান এবং প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে খাদ্যকে বিপদজ্জনক করার প্রক্রিয়া লাগামহীনভাবে চলতে থাকলে এক সময় তা মহামারী রূপ নিতে পারে। কাজেই এ সমস্যার আশু সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। আইনের কঠোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; যাতে অন্য কেউ খাদ্যে ভেজাল দেয়ার সাহস করতে না পারে। দেশের কৃষকরা বহুলাংশই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা না জেনেই নিয়মবহির্ভূত রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে জনজীবন হুমকির মুখে ফেলছেন। তাই তাদের এসব বিষয়ে সচেতন করাও জরুরি। সে জন্য সরকারের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। কৃষকদের সচেতনতার পাশাপাশি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে; যাতে উৎপাদিত ফসল স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ না হয়। দেখা যায়, অনেক শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ জেনে ঝুঝি ভেজাল খাদ্য কিনে থাকেন; ফলে বিক্রেতাদের বিক্রিতে বেগ পেতে হয় না। আমাদের বুঝতে হবে, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে উভয়েই সমান অপরাধী। কাজেই এসব পণ্য ক্রয় করে অসাধু ব্যবসায়ীদের গতিপথ ত্বরাম্বিত করা মোটেও সমীচীন নয় । সচেতন মানুষ হিসেবে তাদের পরিত্যাগ করাই যথাযথ। ভেজাল খাদ্য বিক্রি প্রতিরোধে বাজারগুলোতে মনিটনিং সিস্টেম জোরদার করতে হবে; যাতে কেউ খাদ্যে ভেজাল দিতে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বিক্রি করতে না পারেন। পরীক্ষামূলকভাবে খাদ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলেই এ সমস্যার অনেকটা লাঘব হবে বলে আশা করা যায়।

অতএব, ভেজালের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু আইন করে সবকিছু হবে না। র‌্যাবের ভয় যেখানে ব্যর্থ-রবের ভয়ই পারে ভেজাল বন্ধ করতে। রব সব দেখছেন। রবের ভয় থাকলে কেউ ভেজালের মতো অপর্কম করতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন নৈতিক প্রশিক্ষণ। তাই সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য -
* সুষম খাবার খান। সময়মতো খান।

*অতি ভোজন থেকে বেঁচে থাকুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, পেটকে তিন ভাগ করে খাও-এক ভাগ খানি, একভাগ পানি আর এক ভাগ রাখো খালি।

* পরিমাণের চেয়ে এক মুঠো ভাত কম খান। দৈনিক ১২ গ্লাস পানি পান করুন।

* তেল মসলা কম খান। চর্বি, ঘি ভুলে যান।

* ঝুঁকিমুক্ত খাবার খান। কখনও পোলাও -মাংস যদি খেতেই হয় সঙ্গে সালাদ রাখুন। সবশেষে টক দই খান।

* ভেজাল চিনে খাবার খান। কোল্ড ড্রিংক্স, ফ্রুটজুস-না বলুন ডাবের পানি পছন্দ করুন। * টাটকা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার খান।

* অধিক রাতে খেতে মানা, সন্ধ্যায় সারুন রাতের খানা।

* রাত ১০ টার দিকে ঘুমাতে যান, খুব ভোরে উঠে যান।

* প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। যখন পারুন হাঁটুন, যত পারুন হাঁটুন।

* নিজের যত্ন নিজে নিন, সুস্থ থাকুন নিত্যদিন।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মাদ সাকিব হাসান হাবীব ৫ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১১ এএম says : 0
আমার জাতির একটি সদস্যও যেন ভুল না করে তার বাস্তবায়ন নিজের ভালো বুঝে প্রত্যেককেই ও আমাকেই করতে হবে। এ জন্যই পারফেক্ট পিস পলিটিক বা নিখুঁত শান্তি রাজনীতি যা জীবন ব্যাপী।আমার দ্বারাই আমার জাতির অমঙ্গল হলে আমার শিড় কর্তন আবশ্যক ।এই হিম্মত না থাকলে আমি কিসের নেতা?আমি অবশ্যই জাতির আশীর্বাদ তবে অভিশাপ নই।(ব্যক্তিগত)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন