শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিতে কাজ করছি -স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন ৮ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশকে আরো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে দেশকে বিশ্বে আরো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করছে। আমরা অন্যের সহায়তা না নিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমার লাখো শহীদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। তাদের এবং আমার লাখো মা-বোনের সেই আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই আমরা এই বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা কেন অন্যের কাছে হাত পেতে, মাথা নিচু করে চলব?

বাংলাদেশ এখন তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্যই আমরা আমাদের সমস্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
আসন্ন শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহŸান পুনর্ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের আগমনে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও আমাদের সরকার এটা মোকাবেলায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে; দেশের মানুষ যেন এর থেকে সুরক্ষা পায় এবং দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা না হারায়। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা যখন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করলেন; ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এই হত্যা (জাতির পিতা) শুধু একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকেই নয়, আমার মা’ (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা) যিনি প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে জাতির পিতার পাশে থেকেছেন এবং এ দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাকে; ১০ বছর বয়সের ছোট ভাই রাসেল, ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামালসহ তিনভাই, নব পরিণীতা দুই ভাতৃবধূ, একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসেরসহ একই দিনে রাজধানীর তিনটি বাড়িতে আক্রমণ করে পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী এদিনও জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের পুরস্কৃত করা, যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনর্বাসন এবং ইতিহাস বিকৃতি তথা বঙ্গবন্ধুর নামকে ‘বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা’র থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টার অভিযোগে সাবেক পেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে কারাগারে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেন। যদিও জাতির পিতা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই বিচার শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে যারা দেশ ছেড়ে গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে আনেন, মন্ত্রিত্ব দেন এবং উপদেষ্টা করেন। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। এরা সেই খুনি যারা গর্ব করে বলতো কে তাদের বিচার করবে। তিনি বলেন, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে হত্যাকারীদের বিচারের পথরুদ্ধ করে দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে ইতিহাস বিকৃত করা, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, প্রতিটি মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা, প্রত্যেক ঘরে আলো (বিদ্যুৎ) জ¦ালানো, প্রত্যেক ভ‚মিহীন-গৃহহীনকে ঘর-বাড়ি তৈরি করে এবং অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাশীল করার লক্ষ্য নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। ‘দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এখন জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের সংবিধান স্বীকৃত প্রত্যেকটি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রযুক্তি শিক্ষার দিকেও তারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছেন।

সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই ভার্চুয়ালি স্বাধীনতা দিবসের পদক প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু স্বাধীনতা পুরস্কার সকলের হাতে তুলে দেয়া আমাদের কর্তব্য। যে কারণে, এভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করতে হয়েছে এবং আমরা যে দিতে পারলাম সেটাই সব থেকে বড় কথা। যাঁরা সমাজের জন্য জাতির জন্য এবং দেশের জন্য অবদান রাখেন তাদের সম্মান করা, গুণিজনের সম্মান করাটাও আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য।

প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নেওয়ায় এবং করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও বিশে^র মানুষের মুক্তির জন্যও সকলের দোয়া কামনা করেন। তিনি স¤প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, ইউরোপে যখন আসে এর ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসে। আমরা এখন থেকেই প্রস্তুত, বিভিন্নভাবে তৈরি হচ্ছি এবং বিভিন্ন জেলা হাসপাতালকেও আমরা প্রস্তুত রাখছি। সবরকম চিকিৎসা এবং সেবার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা সে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করেন। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরিচালনা করেন এবং পুরস্কার বিজয়ীদের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনান। অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে প্রফেসর ডা. এ কে এম এ মুকতাদির অনুভ‚তি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

এ বছর সরকার দু’জন মরণোত্তরসহ ৮ ব্যক্তি ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, চিকিৎসাবিদ্যা, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২০’ এ ভ‚ষিত করে।
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেনÑ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দাস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, কমান্ডার (অব.) মরহুম আবদুর রউফ (মরণোত্তর), মরহুম বুদ্ধিজীবী মুহম্মদ আনোয়ার পাশা (মরণোত্তর) ও আজিজুর রহমান। চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুকতাদির। সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস ও ফেরদৌসী মজুমদার। শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমস্। আজিজুর রহমান স¤প্রতি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ পদক, সনদপত্র এবং ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সরকার এ পুরস্কার প্রদান করে আসলেও এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। যা আজ অনুষ্ঠিত হলো।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন