মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন জরিপেও এগিয়ে বাইডেন, পিছিয়ে ট্রাম্প

দুই প্রার্থীতেই আস্থার অভাব আরবদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক চুক্তি সম্পাদনে মি. ট্রাম্প তার সাফল্য তুলে ধরলেও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বলেছেন, তারা মনে করছেন মি. বাইডেন মি. ট্রাম্পের চেয়ে ভাল প্রেসিডেন্ট হবেন। আরব দেশগুলোতে চালানো সা¤প্রতিক জরিপের ফলাফলে বেরিয়ে এসেছে যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন কেউই মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার জন্য ভাল হবেন না। জরিপ গবেষণা সংস্থা ইউগভ এবং সউদী মালিকানাধীন সংবাদপত্র আরব নিউজের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক এ মত ব্যক্ত করেছেন। বাকি অর্ধেকের মধ্যে ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার জন্য মি. বাইডেন বেশি উপযুক্ত এবং ১২ শতাংশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভাল মনে করছেন। অনলাইনে গত মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ১৮টি দেশে এ জরিপ চালানো হয়। জরিপের শিরোনাম ছিল, আরবরা কী চাইছেন? এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। এমনটাই উঠে এসেছে একাধিক জনমত জরিপে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন কেউই দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে জনপ্রিয় বলে বিবেচিত হননি। তবে তারা সামান্য এগিয়ে রেখেছেন মি. বাইডেনকে। মূলত, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটি পছন্দ করেননি জরিপে অংশ গ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ। তবে ইরাক এবং ইয়েমেনের মানুষ পছন্দ করেছেন মি. ট্রাম্পকে। তারা মনে করছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন মি. ট্রাম্প যেটা তারা সমর্থন করেছেন।

ইরাকে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৫৭ শতাংশ বলেছেন, এ বছরের গোড়ার দিকে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড-এর নেতা জেনারেল কাশেম সোলেইমানিকে হত্যা করার আমেরিকান সিদ্ধান্তকে তারা অনুমোদন করেন। অন্যদিকে, সিরিয়ার ঠিক একই সংখ্যক মানুষ অর্থাৎ ৫৭ শতাংশ বলেছেন, তারা এ সিদ্ধান্তের বিরোধী।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
মি. বাইডেন ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলে হোয়াইট হাউসে আট বছর কাজ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়, ওই প্রশাসন সম্পর্কে তাদের কী মতামত। উত্তরদাতারা মি. বাইডেন সম্পর্কেও তেমন উৎসাহ দেখাননি। এদের অধিকাংশই বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর দেননি এবং তাদের জন্য তিনি তেমন কিছুই করেননি। তারা বলেছেন, মি. বাইডেন যদি নির্বাচিত হন, তারা আশা করবেন তিনি মি. ওবামার নীতি থেকে দূরে থাকবেন। তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবেন। যদিও এ জরিপে হস্তক্ষেপের কোন ঘটনাই ঘটেনি, তবু এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যাদের সাথে সহযোগিতায় এ জরিপ চালানো হয়েছে তারা হল সউদী আরবের রিয়াদভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান আরব নিউজ এবং এ সংবাদমাধ্যম অনুমোদিত সরকারি সম্পাদকীয় নীতিমালা মেনে কাজ করে থাকে।

সউদী আরব ওই অঞ্চলে ইরানের প্রতিদ্ব›দ্বী এবং ইরানের সাথে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য সউদী নেতৃত্ব কখনও প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ক্ষমা করেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরে এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং আরও কঠোর পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জারি করেন। একই সাথে ইরানের ওপর পারমাণবিক এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণাও দেন মি. ট্রাম্প।

মি. ওবামার সময় করা চুক্তির সমালোচকদের মধ্যে ছিলেন সউদী নেতারা। তাদের যুক্তি ছিল ইরানের ক্ষমতাশালী নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তোলার জন্য, উপসগরীয় এলাকায় গোপন ও বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটা আগ্রাসী নীতি চালু রাখার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে, যে অর্থ দেশটির ব্যয় করা উচিত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য।

নতুন জরিপেও এগিয়ে বাইডেন, পিছিয়ে ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। এমনটাই উঠে এসেছে একাধিক জনমত জরিপে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় স¤প্রতি নতুন করে জরিপ চালায় সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং জরিপ সংস্থা এসএসআরএস । সেখানেও উঠে এসেছে একই রকম চিত্র। সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে তাদের সর্বশেষ এ জরিপেও এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন ৪২ শতাংশ ভোটার।

সিএনএন-এসএসআরএসÑএর জরিপে বলা হয়েছে, আগাম ভোট দিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই জো বাইডেনের প্রতি রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে এমন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি রায় দিয়েছেন ৩৪ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত ভোট দেননি; তবে আগাম ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন এমন ভোটারদের ৬৩ শতাংশই জো বাইডেনের সমর্থক। অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থক ৩৩ শতাংশ।

ইলেক্টোরাল ভোটেই নির্বাচিত হবেন প্রেসিডেন্ট
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের সর্বোচ্চ ভোট পেলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে মোট ৫৩৮ জন ‘ইলেক্টর’ বা নির্বাচকের ভোটের ওপর। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে এ সব নির্বাচকের সংখ্যা নির্ধারিত হয়ে থাকে। মোট ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে জিততে হলে প্রয়োজন ন্যূনতম ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট। একটি অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ‘জনপ্রিয় ভোট’ যিনি পাবেন, সে রাজ্যের নির্ধারিত সব ইলেক্টোরাল ভোট তার খাতায়ই জমা হবে। এ কারণে জনগণের মোট ভোটের হিসাবে এগিয়ে থেকেও কোনো প্রার্থী পর্যাপ্ত ইলেক্টোরাল ভোট পেতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন না।

এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোলে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনের বিষয়টি অনেকটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৪৩৫ ও উচ্চকক্ষ সিনেটে ১০০ আসন রয়েছে। এ বছর প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টির সবগুলো আসনে এবং সিনেটের ৩৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। এবার যে সিনেট আসনগুলোয় নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে ২৩টিতেই রয়েছেন রিপাবলিকান সিনেটর। আর ১২টিতে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। সিনেটের ভোটে ডেমোক্র্যাটদের আসার সম্ভাবনা প্রবল। বর্তমানে সিনেটে রিপবালিকানদের ৫৩ আর ডেমোক্র্যাটদের আসন ৪৭টি। ফলে রিপাবলিকানদের লক্ষ্য সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা। আর ডেমোক্র্যাটরা চাইছে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে। সূত্র : বিবিসি বাংলা, সিএনএন, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন