শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হুজুরে আকরাম (সা.) এলেন যেদিন

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

স্মৃতিময় রবিউল আউয়াল মাসে রাসূল (সা.) ধরার বুকে আগমন করেন এবং এ মাসেই তিনি ধরা থেকে প্রস্থান করেন। জীবনের শুরু ও শেষ তথা মিলাদ ও ওফাত এ মাসেই সংঘটিত হয়। এছাড়াও নবী জীবনের পট-পরিবর্তনকারী ‘হিজরত’ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ইসলামের বিজয় নিশান পত পত করে উড়েছে বিশ্বব্যাপী। নবী করিম (সা.) ছিলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট শেষ নবী হিসেবে নির্ধারিত ছিলাম, যখন আদম (আ.) মৃত্তিকার মাঝে বিদ্যমান ছিলেন।’ অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘সৃষ্টিগতভাবে আমি প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে আমি শেষ।’

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তার আগমনের পূর্বে নবীগণের নিকট থেকে আল্লাহ তায়ালা তার আনুগত্যের ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং স্বয়ং নিজেই এ অঙ্গীকারের ব্যাপারে সাক্ষী হয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি কিতাব ও হিকমাহ থেকে যা তোমাদের দান করেছি, অতঃপর তোমাদের কাছে তোমাদের নিকট বিদ্যমান বিষয়াবলির সত্যায়নকারী হিসেবে যে রাসূল আগমন করবেন, তখন তোমরা সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সহযোগিতা করবে’।

তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছ? এবং এই শর্তে আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮১)।

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণের পূর্বেই প্রস্তুতিমূলক অনেক বিষয় সম্পাদন করেন। যেমনÑ তার আগমনের সাথে সাথেই তাঁর প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার ব্যাপারে নবীগণ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং সে অঙ্গীকার গ্রহণের ব্যাপারে নবীগণও নিজেকে সাক্ষী হিসেবে রেখেছেন।

স্মর্তব্য, নবীগণ কখনই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। তবুও তাদের নিকট থেকে কড়া অঙ্গীকারনামা গ্রহণ এবং তাদের ও স্বয়ং আল্লাহ নিজেই সাক্ষী থাকা রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিষয়টির সর্বাধিক গুরুত্ব ও বিশেষত্বের প্রতি প্রকাশ্য ইঙ্গিত বহন করে। অতএব বোঝা গেল, ধরার বুকে রাসূল (সা.)-এর আগমন সাধারণ বিষয় নয়।

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবাঘর নির্মাণ করে রাসূল (সা.)-কে প্রেরণের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন। এ ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের মাঝে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াত পাঠ করবেন, তাদের কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা : আয়াত নং ১২৯)।

পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থে রাসূল আগমনের আগাম সুসংবাদ উল্লেখ ছিল এবং আম্বিয়ায়ে কেরামও তাদের উম্মতদের দিয়েছিলেন। যেমনটি ঈসা (আ.) প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে : ‘যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা (আ.) বললেন, ‘হে বনী ইসরাঈল, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের ব্যাপারে সত্যায়নকারী এবং আমার পরবর্তীতে একজন রাসূলের ব্যাপারে সুসংবাদদতা। যার নাম হবে ‘আহমদ’। (সূরা সাফ, আয়াত নং-০৬)।

এ বিষয়গুলোই হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেবো। আমি ইবরাহীম (আ.) দোয়ার ফল, ঈসা (আ.) সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছেন যে তার থেকে একটি ‘নূর’ বের হলো আর তা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করল।’ (মুসনাদে আহমাদ : হাদিস নং-১৬৫৩৮)।

উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্টতই আলোকপাত করেছে যে, রাসূল (সা.)-এর আগমনের বিভিন্ন প্রস্তুতি আদম (আ.)-এর আগমনের পূর্ব থেকে চলে আসছে। সবশেষে আল্লাহ তায়ালা বহুল প্রত্যাশিত ও আকাক্সিক্ষত শেষ জামানার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসে ধরার বুকে প্রেরণ করেন, যা জগৎবাসীর জন্য অশেষ রহমত ও অনুগ্রহের কারণ।

রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখ রাসূল সা.-এর আগমন, এ নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক মত রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, তিনি ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন। মোটকথা, তিনি আমুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন, যা আদম (আ.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রায় ছয় হাজার একশ’ তের বছর পর। বিশ্বব্যাপী ১২ রবিউল আউয়াল ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.)’ পালন করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Milton Ahmed ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩১ এএম says : 0
##we_love_mohammad_ﷺ_challenge
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানবজাতিকে সঠিক পথ ও মুক্তির দিশা দেয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা তাঁকে দুনিয়াতে পাঠান।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহ বলেন, হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। (সূরা আহযাব ৪৫-৪৬)।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
মানবজাতির আদর্শ হজরত মুহাম্মদ (সা.)। দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পরকালে মুক্তির জন্য তিনি জীবন ভর মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করেছেন। হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে শ্রেণিবৈষম্যকে অতিক্রম করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব জাগ্রত করেছেন। আকাবার শপথ, মদিনা সনদ ও হুদায়বিয়ার সন্ধি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
নাসিম ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৫ এএম says : 0
সিরাত বা মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করলে মানবতার কল্যাণে তার মহৎকর্ম ও কৃতিত্ব বোঝা যায়।
Total Reply(0)
গাজী ওসমান ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে হলে তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান-৩১)।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা পেতে হলে তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ বলেন, আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান-৩১)।
Total Reply(0)
হৃদয়ের ভালোবাসা ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে ভালোবাসা মুমিন হওয়ার অন্যতম শর্ত। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন