শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৮ মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

গত মধ্যরাত থেকে সারা দেশে জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। যা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। গত ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত উপকূলের ৭ বর্গ কিলোমিটার প্রধান প্রজননস্থলে সব ধরনের মাছ আহরণ এবং সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং মৎস্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপক‚লীয় এলাকায় নজরদারি করছে।

মৎস্য অধিদফতরের মতে, দেশে যে পরিমাণ জাটকা আহরণ হয় তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে ইলিশের উৎপাদন আরো অন্তত ১ লাখ টন বৃদ্ধি পেত। নজরদারি বৃদ্ধির ফলে জাটকার উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯,২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। যা পরবর্তী বছরগুলোতেও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ২০০৮-০৯ সালের ২.৯৮ লাখ টন থকে গত অর্থবছরে ৫ লাখ ৩০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।

এবার ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা বেশি ছিল। ইলিশ আহরণে বাঁধা দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলারও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সরকার চলমান মূল প্রজননকালে ইলিশ আহরণ বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ থাকবে। পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর-জানুয়ারি মাসকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখা হবে। একইভাবে নিম্ন মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল, তেঁতুলিয়া নদী, শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুরের মতলবের মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকবে। এছাড়াও বরিশালের হিজলা উপজেলার নাছকাটা, হরিনাথপুর, ধুলখোলা, ধর্মগঞ্জ ও নয়া ভাঙনী নদী এবং মেহেদিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর পয়েন্ট এলাকার মেঘনার শাখা নদীসহ লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন স্রোতের বিপরীতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম। জীবনচক্রে ইলিশ স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক‚লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্তভাবে ভাসমান ডিম ছাড়ার পরে তা থেকে ফুটে বের হবার পরে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে। এরা খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ আবার স্বাদু পানির নার্সারি ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

যেসব এলাকায় জাটকা খাদ্যগ্রহণ করে বেড়ে ওঠে সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ নার্সারি ক্ষেত্র হিসেবে চিহিৃত করে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুুলিয়া নদীর ১শ’ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এবং বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থলের মোট ৬টি অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করায় উৎপাদন বাড়ছে।

ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘ্ন রাখা এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্র্যকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরণ ব্যবহার বন্ধে আরো কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন