শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলিস্তানে উচ্ছেদ-উচ্ছেদ খেলা

রেকার দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে হকারদের বসতে দেয়ার সুযোগ, লাইনম্যানদের কোটি টাকা চাঁদাবাজি

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

নূরুল ইসলাম : সব নাটকীয়তার অবসান! উচ্ছেদ-উচ্ছেদ খেলাও শেষ! ‘ক্লিন গুলিস্তান’ করার দক্ষিণ সিটি মেয়রের ঘোষণা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। গুলিস্তানের ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকারদের সরানো যায়নি। পুরো গুলিস্তান এলাকা আগের মতোই হকারদের দখলে। পুলিশের চোখের সামনেই ফুটপাত ও রাস্তা ‘বরাদ্দ’ দিয়ে কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে লাইনম্যান নামধারী দালালরা। অভিযোগ রয়েছে, লাইনম্যানদের সাথে যোগসাজশ করে সার্জেন্ট আহাদ বক্সের পুলিশই নানা অজুহাতে রাস্তা বন্ধ করে হকারদের বসার সুযোগ করে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকালে পুরো গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান কমপ্লেক্সের উত্তর পাশের দুটি লিংক রোড বন্ধ রাখা হয়েছে রাস্তার মাথায় একটি রেকার দাঁড় করিয়ে রেখে। একইভাবে সুন্দরবন ট্রেড সেন্টারের সামনের লিংক রোড দুটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মুন্সীগঞ্জ রুটের বাস দাঁড় করিয়ে রেখে। এই সুযোগে বন্ধ রাস্তায় শত শত হকার বসে গেছে। সোহরাব নামে এক হকার বলেন, আগে এসব রাস্তায় বসলে একশ’ টাকা করে দিতে হতো। এখন ‘সিস্টেম’ করে রাস্তা বন্ধ করতে হয় বলে রেট দ্বিগুণ হয়েছে। দিতে হয় দুইশ’ টাকা। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানের ফুটপাত ও রাস্তায় সাতসকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হকারদের ভিড়ে যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীরাও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে না। সাথে ভিক্ষুক, ক্যানভাসার, ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, প্রতারকচক্র, পরিবহন শ্রমিক, টাউট-বাটপাড়দের উৎপাত তো আছেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। একই সাথে হকারদের সঠিক তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনেরও কথাও বলেন তিনি। গত বছরের ১২ নভেম্বর নগর ভবনে হকারদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ ঘোষণা দেন সাঈদ খোকন। সেদিন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, এখন থেকে গুলিস্তানের রাস্তা ও ফুটপাতে কোনো হকার বসবে না। সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, কেউ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত হলে তাকে পুলিশে দেয়া হবে। ‘ক্লিন গুলিস্তান’ করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন জানান, গুলিস্তান এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপরই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। মেয়রের কথামতো সবকিছুই হয়েছে। হকারদের তালিকা তৈরির কাজও প্রায় চূড়ান্ত। এর মধ্যে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু হকারদের সরানো যায়নি। সরেজমিনে গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানের ফলাফল হিসেবে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত হকারমুক্ত করা হয়েছে। আলাপকালে হকার সমিতির এক নেতা জানান, ওই রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা মানতেই শুধু ওই রাস্তার দু’পাশ পরিষ্কার রাখা হয়েছে। তবে সরেজমিনে ওই রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে না বসতে দিলেও হকাররা রাস্তার ওপর ভ্যানগাড়িতে করে পসরা সাজিয়ে বেচাকেনা করছে। রমনা ভবনের সামনে এবং রেলওয়ে মার্কেটের সামনে বহু ভ্যানগাড়িতে করে তাদের বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। ভ্যানচালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লাইনম্যানদের এক বেলার জন্য একশ’ টাকা করে দিয়ে তারা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে বেচাকেনা করতে পারছেন। লাইনম্যানদের টাকা না দিলে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে তুলে দেয়।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের হিসাবমতে, শুধু গুলিস্তান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ হয়ে ফুলবাড়ীয়া পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলে লাইনম্যানরা। মাসশেষে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা। হকাররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দিয়ে কেউই ফুটপাতে টিকতে পারেন না। মারধর করে তুলে দেয়াসহ পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে দক্ষিণ সিটি মেয়রের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের ঘোষণার পর থেকে হকারদের ফুটপাতে রাখার জন্য নানা চেষ্টা-তদবির শুরু হয়। বিশেষ করে লাইনম্যানরা টাকার বিনিময়ে রাস্তার হকারদের রাখার বিষয়ে জোর তদবির করতে থাকে। সেই তদবিরের অংশ হিসেবে ফুটপাত তো দূরের কথা, এখনও রাস্তা থেকে হকারদের সরানো যায়নি বলে মনে করছেন হকার্স সমিতির নেতারা।
পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান কমপ্লেক্সের (সাবেক সিনেমা হল) সামনে দিয়ে রাজধানী হোটেল পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করার জন্য সেখানে পুলিশের একটি রেকার রাখা হয়েছে। রেকারের কারণে উত্তর দিক থেকে কোনো গাড়ি এই লিংক রোডে প্রবেশ করতে পারছে না। এই সুযোগে দুই রাস্তার ওপর প্রায় একশ’ দোকান বসিয়েছে হকাররা। তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। হকাররা জানান, ব্যস্ত সময়ে রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছেন তারা টাকার বিনিময়ে। প্রতি দোকানের জন্য দুইশ’ করে টাকা দিতে হয় তাদের। এখান থেকে টাকা তোলে হিন্দু বাবুল, তার সহযোগী আবদুর রব, সরদার বাবুল, খোরশেদ ও হাসান। গুলিস্তান সেন্টারের পূর্ব পাশের রাস্তা থেকে টাকা তোলে কানা সিরাজ ও ভোলা এবং দক্ষিণ পাশের রাস্তা থেকে টাকা তোলে রাহাতের সহযোগী সালেহ। একই দৃশ্য দেখা গেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সুন্দরবন স্কোয়ারের উত্তর পাশের রাস্তায়। সেখানেও মুন্সীগঞ্জ রুটের বাস থেকে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানকার হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলে উত্তর পাশে জজমিয়া এবং পূর্ব পাশে সেলিম ও জয়নাল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার পর বাঁ দিকে যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। সব গাড়িকেই বাধ্যতামূলক ডান দিকে চলতে হবে। কোনো গাড়ি যদি ফুলবাড়িয়ার দিকে যেতে চায় তবে তাকে জিপিও ঘুরে তারপর যেতে হবে, কারণ গুলিস্তান স্কোয়ার থেকে বাঁ দিকের রাস্তা বন্ধ। একইভাবে সুন্দরবন স্কোয়ারের একদিকের লিংক রোডও বন্ধ। ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাঁ দিকে কাপ্তান বাজারের দিকে চলতে গেলেও ভয়াবহ যানজট। এখানে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই যানবাহন আটকা থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ কাছেই সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স থেকে মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, ‘আপনার যে কোনো বিপদে পাশেই আছে পুলিশ।’ একজন যাত্রী এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ নিজেই বিপদ তৈরি করে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে চলেছে দিনের পর দিন। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এমন অবস্থা চলতে পারে না। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটিও হকারদের দখলে। জানা গেছে, হাকরমুক্ত ক্লিন গুলিস্তান গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেও রাস্তা দখল করে হকারদের এই উন্মুক্ত ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ। এজন্য পুলিশের তদারকিতে নিয়োগ করা আছে ‘লাইনম্যান’ পদবির একশ্রেণীর দালাল। এরা আবার প্রভাবশালী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। এই দালালরাই সরকারি রাস্তা ‘ভাড়া’ দিয়ে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে দেড় কোটি টাকা। প্রতিদিন রাস্তা ও ফুটপাতের প্রতিটি দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এই চাঁদার বড় অংশ যায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মতিঝিল থানা ও সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের কর্মকর্তাদের পকেটে। যারা সরাসরি এই চাঁদার টাকা তোলে, তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ বলে এরা কাউকে ভয়ও করে না। হকারদের ভাষায়, এরা নিজেদের ‘পুলিশ’ মনে করে। সে কারণে কথায় কথায় হকারদের লাঠিপেটা করে, অপমান করে, মালামাল কেড়ে নেয়। হকাররা জানান, আগে ফুটপাতের দোকানগুলোর চাঁদা ছিল দেড়শ’ টাকা। আর রাস্তায় দোকানের জন্য দিতে হতো ৮০ টাকা। ফুটপাত উচ্ছেদের ঘোষণার পর এই রেট দ্বিগুণ হয়েছে। লাইনম্যানরা পুলিশের দোহাই দিয়ে এই রেট দ্বিগুণ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের ইনচার্জ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নূরুন্নবী ইনকিলাবকে বলেন, অফিস ছুটির আগে বা পরে রেকার রেখে রাস্তা বন্ধ করা হয় যানজট এড়ানোর জন্য। তা না হলে গাড়িগুলো এমনভাবে প্রবেশ করে তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি বলেন, এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। হকারদের রাস্তা দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সার্জেন্টরা একদিক থেকে হকারদের তুলে দিলে আরেক দিক দিয়ে তারা আবার বসে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা কি গাড়ির দিকে দেখবে নাকি হকারদের দেখবে। এ বিষয়ে আরও জানতে তিনি এসি পেট্রোলের সাথে কথা বলতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরূপী লাইনম্যানরা আগের চেয়ে আরও বেশি তৎপর হয়েছে। তারা ফুটপাত ও রাস্তায় হকার বসিয়েই চলছে। অনুসন্ধানে পুরো গুলিস্তান এলাকার লাইনম্যান ও তাদের চাঁদা তোলার স্পটের নাম জানা গেছে। বঙ্গভবনের পার্কের সামনে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সাথের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে লম্বা হারুন ও তার শ্যালক দেলোয়ার। জাতীয় গ্রন্থ ভবনের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে সুলতান ও লিপু। রমনা ভবনের পশ্চিম পাশের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে মনির ও তরিক আলী। পূর্ণিমা ¯œ্যাকসের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে আখতার ও জাহাঙ্গীর। বেলতলা বেল্টের গলির রাস্তা ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে কালা নবী, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সোনালী ব্যাংকের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে সাবেক সর্দার ছালাম। জিপিও’র দক্ষিণের রাস্তার দোকান থেকে চাঁদা তোলে শহীদ ও দাড়িওয়ালা সালাম। মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে আলী মিয়া। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কাদের ও খলিল। বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম দিকের মিনারের কাছের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কোটন, জাহাঙ্গীর ও নসু। বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্বর্ণের মার্কেটের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে তমিজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও বাবুল ভূঁইয়া। জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে সাজু। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সামনের ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে কবির হোসেন, ফুলবাড়ীয়া টিঅ্যান্ডটির সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে ঘাউরা বাবুল, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের পশ্চিমের রাস্তা ও ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে বিমল।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, গুলিস্তানকে যানজটমুক্ত করার জন্য রাস্তার হকারদের তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা রাস্তা দখল করে হকারদের বসাচ্ছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় ভয়াবহ যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরাও চাই এটা বন্ধ হোক। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই ফেডারেশন ও সমিতির পক্ষ থেকে লাইনম্যান নামধারী চিহ্নিত চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জোর দাবি জানিয়ে আসছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Babul ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১:৫১ পিএম says : 0
immediately tader uthaia dea houk
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন