বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাসংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিমানবন্দরসহ সকল প্রবেশপথে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা এবং বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর এ নির্দেশ অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। অনেকেরই জানা, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব হয়েছিল বিদেশফেরতদের সংস্পর্শ থেকে। ইটালি থেকে করোনার জীবাণু বয়ে আনা বাংলাদেশীদের মাধ্যমেই করোনার বিস্তার সূচিত হয়েছিল। তখন বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়নি। এর খেসারত আমাদের হাড়ে হাড়ে দিতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয়, সেটা সহজেই বুঝা যায়। করোনা একটি বহুরূপী প্রাণঘাতী ভাইরাস। এর রূপবদলের রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছিল, এতে একবার আক্রান্ত হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার আশংকা নেই। এ অভিমত টেকেনি। দেখা গেছে, একবার নয়, একজন বারবার আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমণের ঢেউ উঠতে পারে বার বার। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের মতো দ্বিতীয় ঢেউও ভয়ংকর। গত ৩০ অক্টোবর একদিনে সারাবিশ্বে রেকর্ড ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওইদিন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ১ লাখের বেশি লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, জার্মানি, বৃটেন প্রভৃতি দেশ রীতিমত বিচলিত ও আতংকিত। ইতোমধ্যে ফ্রান্স ও বৃটেনে দ্বিতীয় লকডাউন শুরু হয়েছে।

শীতে বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে আশংকা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ আশংকার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। শীত আসার আগেই আলামত যা দেখা যাচ্ছে, তা মোটেই সুবিধাজনক নয়। ইতোমধ্যে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজারে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কিছু প্রস্তুতি সরকার ইতোমধ্যেই নিয়েছে। এর মধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাকিদ দেয়া, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। পরিতাপজনক হলেও বলতে হচ্ছে, এসব নির্দেশনা ঠিকমত পালিত হচ্ছে না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেকেই তা মানছেনা। সরকারি - বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরে না গেলে প্রবেশ করা ও সেবা পাওয়া যাবে না বলা হলেও সেটা খুব একটা কাজে আসছে না। স্বাস্থ্যবিধিতো ব্যাপকভাবেই লংঘিত হচ্ছে। দুরত্ব বজায় রাখার নিয়ম কেউই গ্রাহ্যে আনছে না। করোনা চিকিৎসায় নির্দিষ্ট হাসাপাতালগুলো কতটা প্রস্তুুত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাস্ক পরতে বাধ্য করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্লেখ করা দরকার, মাস্ক পরলে ৮০ ভাগ নিরাপদ থাকা যায়। মাস্ক পরা কতটা আবশ্যক, এ থেকে তা অনুধাবন করা যায়। ওদিকে মসজিদসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে করোনাকেন্দ্রিক সরকারি নির্দেশনা অন্তত দিনে দু’বার বলার কথা থাকলেও সেটা বলা হচ্ছে না।

করোনার কোনো প্রতিষেধক আজো আবিস্কৃত হয়নি। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের অগ্রগতির কথা বলা হলেও এ বছর কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। এমতাবস্থায়, করোনাসংক্রমণ রুখতে সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন, মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধান মান্য করার বিকল্প নেই। আমরা শুরু থেকেই দেখে আসছি, আমাদের দেশের মানুষের সচেতনতার বড় অভাব, সতর্কতার নিদারুন ঘাটতি। তারা করোনাপরীক্ষায় অনীহ, কোয়ারেন্টিন বা ঘরে থাকতে নারাজ, মাস্ক পরতে কিংবা দূরত্ব বজায় রাখতে অনুৎসাহী। কারোনাক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধির এটা একটি বড় কারণ। অন্য কারণটিও কারো অজানা নয়। পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগের অভাব, সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতা, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের অপারগতা ও ব্যর্থতা ইত্যাদি করোনাঝুঁকি, আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার ক্ষেত্রে অসচেতনতা, বিশৃংখলা দায়িত্বে অবহেলা, অপারগতা, ব্যর্থতার যেন লেশমাত্র না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যসব নির্দেশনাও। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনসহ সম্ভাব্য অন্যান্য উপায় অবলম্বন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন