শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবীজী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা মুমিনের ঈমান

মাওলানা বাশীরুদ্দীন আদনান | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এ ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। হযরত আনাস রা. বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। (সহীহ বুখারী : ১৫)।

এ শুধু নীতিবাক্য নয়; বাস্তবেই মুমিনকে পৌঁছাতে হবে নবীপ্রেমের এ স্তরে। সকলের উপর, সবকিছুর উপর প্রাধান্য দিতে হবে আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলকে; এমনকি নিজের জানের উপরও। শুনুন ওমর রা.-এর ঘটনা- আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রা. বলেন, একদিন আমরা নবীজী (সা.)-এর সাথে ছিলাম। নবীজী ওমর রা.-এর হাত ধরা ছিলেন। ওমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার জান ছাড়া। তখন নবীজী (সা.) বললেন, না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জান তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর রা. বললেন, হ্যাঁ এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী (সা.) বললেন, হ্যাঁ ওমর! এখন হয়েছে। (সহীহ বুখারী : ৬৬৩২)।

আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা যদি সবকিছুর উপরে না হয় তাহলে মুমিন পথ চলবে কীভাবে? আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের আদেশের সামনে সমর্পিত হবে কীভাবে? আজ বাধা হবে সন্তান, কাল স্ত্রী, পরশু পিতা। কখনো বা জানের মায়ায় লংঘিত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ। আর মুমিন তো সেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মহব্বত ও নির্দেশের সামনে সবকিছু পিছে ঠেলতে জানে।

মুমিনের সবচে বড় দৌলত ঈমান। এই মহা দৌলতের স্বাদ যার নসীব হয়, সমস্ত দুঃখ কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। মহব্বতের কারণে সকল তিক্ত মিষ্টে পরিণত হয়। আর এই স্বাদ সে-ই পায়, যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম হলো, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবচেয়ে প্রিয় হবে। (সহীহ মুসলিম : ৬৭)।

ঈমানের স্বাদ আস্বাদনের নগদ ও সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো ইবাদত ও আনুগত্যে আগ্রহ লাভ হওয়া। বরং ইবাদতই তখন প্রশান্তির কারণ হয়ে যায়। নবীজীর প্রতি ভালোবাসা যেমনিভাবে ঈমান ও আমলে উৎকর্ষ লাভের উপায়, তেমনি তা আখিরাতে মহাসাফল্য অর্জনের সম্বল। আর প্রত্যেক মুমিনের কাক্সিক্ষত সে সাফল্য হলো আখিরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গলাভ। স্বয়ং নবীজী (সা.) বলে গেছেন, ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তার হাশর হবে। (সহীহ মুসলিম : ২৬৪০)।

এ সম্পর্কে বড়ই শিক্ষণীয় ও চমৎকার একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন হযরত আনাস রা.। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলে কারীম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল : ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিয়ামত কবে? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কী প্রস্তুতি নিয়েছ কিয়ামতের? সে জবাব দিলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা। তখন নবীজী (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যাকে তুমি ভালোবাস, (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই থাকবে।

হযরত আনাস রা. বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচে’ খুশির বিষয় ছিল নবী কারীম (সা.)-এর এই কথা, ‘নিশ্চয়ই যাকেতুমি ভালোবাস, (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই থাকবে।’ আনাস রা. আরও বলেন, আর আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। আবু বকর ও উমরকেও। তাই আশা রাখি, আখেরাতে আমি তাঁদের সাথেই থাকব, যদিও তাঁদের মতো আমল আমি করতে পারিনি। (সহীহ মুসলিম : ২৬৩৯)। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে আখিরাতে তাঁর রাসূলের সঙ্গ দান করেন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
বাশীরুদ্দীন আদনান ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 0
আমরা ছিলাম পথহারা, দিশেহারা। হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে ছিলাম অজ্ঞ। অতপর মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি এসে আমাদেরকে সত্য-মিথ্যা চিনিয়েছেন। আমাদের নিকট সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন। এ ছিল আমাদের প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 0
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনিভাবে নবীগণের সর্দার তেমনিভাবে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেও তিনি সকলের চেয়ে মহান। তিনি এমন এক উৎকৃষ্ট সমাজ রেখে গেছেন, যার নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীরাও উৎকর্ষের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে।
Total Reply(0)
সোলায়মান ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবার হৃদয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দেন। তাঁর সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২০ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা দান করুন এবং তার আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করার তওফিক দান করুন। আর যারা রাসুলুল্লাহকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি কিংবা ব্যঙ্গ করে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিন। আমিন।
Total Reply(0)
শাফায়েত ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২২ এএম says : 0
আমাদের উচিত রবিউল আউয়াল মাসে রাসুলের (সা.) ভালবাসাকে সীমিত না রেখে বছরের প্রতিটি দিনে, প্রতি ক্ষণে, প্রতি মাসে এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর রেখে যাওয়া জীবনাদর্শকে বাস্তবায়ন করা।
Total Reply(0)
তকী ইব্রাহীম ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৩ এএম says : 0
ঈমানই মুমিনের প্রধান গুণ, এক অমূল্য সম্পদ। ঈমানের স্বাদ পেতে হলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়। তবেই ঈমানের স্বাদ অনুভব করা যায়। সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জগতের সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত রাখা ঈমানের এক অপরিহার্য অংশ। যার হৃদয়ে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা নেই, তার হৃদয় অন্ধ, আলোহীন। সে হৃদয় জাহান্নামের উপযুক্ত।
Total Reply(0)
Mohammed Nazrul Islam Khan ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৯:২৯ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা দান করুন এবং তার আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করার তওফিক দান করুন। আর যারা রাসুলুল্লাহকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি কিংবা ব্যঙ্গ করে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিন। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের তাঁর সুন্নাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন, আমীন
Total Reply(0)
Mohammed Nazrul Islam Khan ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৩৩ এএম says : 0
আমাদের কাছে সবচে’ খুশির বিষয় ছিল নবী কারীম (সা.)-এর এই কথা, ‘নিশ্চয়ই যাকেতুমি ভালোবাস, (কিয়ামতের দিন) তার সাথেই থাকবে।’ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। আবু বকর ও উমরকেও। তাই আশা রাখি, আখেরাতে আমি তাঁদের সাথেই থাকব, যদিও তাঁদের মতো আমল আমি করতে পারিনি। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে আখিরাতে তাঁর রাসূলের সঙ্গ দান করেন। আমীন।
Total Reply(0)
saiful ৪ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০১ এএম says : 0
এমন উত্তম লেখার জন্যে সন্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবে। ইয়া আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এর থেকে শিক্ষানিয়ে নিজেদেরকে ধন্যকরার তৌফিক নসিব কর।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন