শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

কুটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতি রাখা হয়েছে ভোটার তথা জনগণের ওপর অনাস্থা থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী এই পদ্ধতিতেই একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের আইনের জটিল এক সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মানুষ চাইলেও যাতে নিজেদের পদ্ধতির বাইরে কাউকে ক্ষমতায় বসাতে না পারে এ জন্যই দেশটির ফাউন্ডিং ফাদার তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়করা এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তখন তারা এর নাম দেন ‘মিনি-কংগ্রেস’।

পরে এটি ইলেক্টোরাল কলেজ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। তাত্তি¡কভাবে বলা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে সারা দেশে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান ইলেক্টোরাল কলেজ তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করে থাকে। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে থাকেন। ৫৩৮টির মধ্যে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ কারণে জনগণের ভোটে জয়ী হলেও হেরে যেতে হতে পারে একজন প্রার্থীকে। উদাহরণের জন্য দূরে যাওয়ার দরকার নেই। ২০১৬ সালেই জনগণের ভোটে জয়ী হয়েও হেরে যান ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

হিলারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখের মতো বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই বেছে নেয়। এটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের ভোটে জয়ী না হয়েও প্রেসিডেন্ট হওয়ার পদ্ধতি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন প্রার্থীরা সারা দেশে ভোটারদের কাছ থেকে যেসব ভোট পান সেগুলোকে বলা হয় পপুলার ভোট এবং ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটকে বলা হয় ইলেক্টোরাল ভোট। কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যাবেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেক্সাস রাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী যদি ৫০.১% ভোট পান, তাহলে ওই রাজ্যের ৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট তাদের পকেটেই যাবে। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি সবগুলো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ দিলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। মোট ইলেক্টোরাল ভোট ৫৩৮ এর অর্ধেক ২৬৯ এবং জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে আরো একটি ভোট এভাবেই ২৭০টি ভোট পেতে হবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য।

১৭৮৭ সালে মার্কিন ডেলিগেটরা তখন মিনি কংগ্রেস হিসেবে এই পদ্ধতি চালু করেন। জনগণ সঠিক লোককে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারে কিনা, এমন আশঙ্কা থেকে তখন সমঝোতায় আসেন তারা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করবে কে- জনগণ সরাসরি নাকি কংগ্রেস, এমন আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে মিনি কংগ্রেস বা আজকের ইলেক্টোরাল পদ্ধতি। আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা দেশটির মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার জন্য অন্যান্য দেশের মতোই কিছু উদ্যোগ নেন। দাসের মালিক এসব প্রতিষ্ঠাতা দ্বিমুখী কাজ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, সব মানুষকে সমানভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং স্রষ্টা অবিচ্ছেদ্য কিছু অধিকার তাদের দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে- জীবন, স্বাধীনতা ও সুখ খুঁজে নেয়ার মতো বিষয়। এটি মুখে বললেও তারা এই আদর্শ নিজেদের জীবনে লালন করেননি।

এ কারণে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষায় দশকের পর দশক তারা দাসপ্রথা চালু রেখেছেন। সাদা পুরুষেরা ক্ষমতার স্বাদ পেতে থাকলেও ভোটাধিকারসহ নানা বিষয়ে নারীদের ঠকানো হয়েছে আরও ১৫০ বছর। উত্তরাঞ্চলীয় দাস-মালিক রাজ্যগুলোর দাবি ছিল মিনি কংগ্রেস ধরনের কিছু করার জন্য। না হলে তারা প্রভাবশালী উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর প্রভাবের নিচে পড়ে যেতে পারে। ফাউন্ডিং ফাদারাও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণকে বিশ্বাস করতে না পেরে ব্যালেন্স একটি পদ্ধতি হিসেবে ইলেক্টেরাল পদ্ধতি বের করে আনে। এতে প্রতিটি রাজ্যে কিছু ইলেক্টর বানানো হয় রিপ্রেসেন্টেটিভস ও সিনেটরদের সমান করে। প্রতিনিধিত্বহীন এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আজও যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান। এটি অনেকটা ভোটার দমনের পদ্ধতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sanaullah Ansary ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩০ এএম says : 0
অনেক জানলাম ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Anhar Chowdhury ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩২ এএম says : 0
Humorously analysed so much details and tidbits of US election. Thank you.
Total Reply(0)
Jahirul Babul ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
America will be turned into different history if Trump reelects as president.
Total Reply(0)
Jahangir Jan Alam ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
ট্রাম্প আরও একবার ক্ষমতা এলে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবে অর্থৎ বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় আমাদের ভালো বলতে জোয়ার ভাটা বুঝে উঠতে পারলে সবাই ভালো।
Total Reply(0)
Jasim Uddin ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 2
Of course Trump is better for Bangladesh.
Total Reply(1)
Md Habib Hasan ৪ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৪৭ এএম says : 0
Your prediction is not right.
আশিক ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
এবার মনে হচ্ছে যে বেশি ভোট পাবে সেই জিতবে
Total Reply(0)
রোদেলা ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
এরকম আমাদের দেশে করলে কেমন হয়?
Total Reply(0)
hsm sazzad ৪ নভেম্বর, ২০২০, ২:১৫ পিএম says : 0
যদি বাইডেন জিতে যায় পাশের দেশের দাদাদের কি হবে???
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন