অবশেষে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ‘কফিল প্রথা’ বাতিলের ঘোষণা দিল সউদী আরব। গতকাল বুধবার সউদী আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়।
মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ১৪ মার্চ থেকে ছোট মোয়াচ্ছাছার (কোম্পানি) শ্রমিকদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে নেওয়া হবে। যার ফলে প্রচলিত ‘কফিল প্রথা’ আর থাকবে না। তবে এই আইন শুধু বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, গৃহস্থালি কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের (গৃহকর্মী, ড্রাইভার) জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
এই ঘোষণার ফলে এখন আর ‘কফিল প্রথা’ থাকছে না। এই প্রথা বাতিলের ফলে প্রবাসীদের অনেক অসুবিধা কমে যাবে। এখন থেকে সউদী আরবে কাজ করতে প্রবাসীদের আর কোনো ‘কফিলের’ দ্বারস্থ হতে হবে না। যার ফলে তিনি এখন নিজের মতো করে নিজের কাজকর্ম করতে পারবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, যেহেতু ছোট মোয়াচ্ছাছার শ্রমিকরা এখন থেকে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে কাজ করবে তাই তাদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে। এর আগে সউদী আরবের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৭ অক্টোবর এক ঘোষণায় জানিয়েছিল, সউদী আরবে কফিল প্রথা শিগগিরই বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নাগরিকেরা কাফালা বা স্পন্সরশিপের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাজের ভিসা ও অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিতে পারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভিসাদাতা কফিলরা নিজেদের স্বার্থে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নানা শোষণ-নির্যাতন চালায়। আর এই কারণেই এই প্রথা বাতিল করা হলো।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১৪ মে এই সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত সউদী আরবের মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়। আর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ প্রায় ১০ মিলিয়নের বেশি প্রবাসী এর সুফল পাবেন।
এই প্রথা বাতিল হলে প্রবাসীরা সরাসরি দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবেন। আর মন্ত্রণালয়ই হবে তাদের প্রবাসীদের অভিভাবক। ফলে অর্থ লোপাটসহ প্রবাসীদের অবৈধ হবার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসবে।
এছাড়াও প্রবাসীরা সব সময় ভয়ে থাকেন না জানি কখন কফিল অন্যায়ভাবে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। অথবা নিজেই ব্যবসার দখল নিয়ে নেয়। কারণ দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব কিছু কফিলের নামে থাকে। ফলে এ ঘটনায় আইনি সহায়তাও পাওয়া যায় না।
তবে সৌদি সরকারে নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশিরাসহ অন্য দেশের প্রবাসীরা এই নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। আর স্বাধীনভাবে দেশটিতে ব্যবসা বা চাকরি করতে পাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন