বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:১৬ এএম

বিশ্বের এক নম্বর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র জর্জ ওয়াশিংটন-আব্রাহাম লিঙ্কনের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত-প্রতিক্ষিত নির্বাচন এখন চুড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষমান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটার সংখ্যার মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট পেতে হয়। বৃহষ্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৪ ভোট নিশ্চিত করেছেন এবং ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন ২৬৪টি ভোট পেয়ে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ছিলেন। অবশিষ্ট রাজ্যগুলোর যে কোনো একটিতে জয়লাভ করতে পারলেই বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিততে হলে বাকি প্রায় সবগুলো রাজ্যে বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য বুধবার ভোট কাস্টিং শেষ হওয়ার আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে অনেকটা মনগড়া অভিযোগ তুলে টুইট করতে থাকেন। তিনি নিজের বিজয় সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি বাইডেন ফলাফল চুরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এসব টুইট বার্তায় নির্বাচন কমিশন এবং তার নিজের প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে আগাম অভিযোগ না তুলে প্রেসিডেন্টকে ধৈর্য ধারণের পরামর্শও দেয়া হয়। তবে নিজের পক্ষে ভোটের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে চারটি রাজ্যের ভোট নিয়ে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে ট্রাম্পের নির্বাচন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বাইডেনের নির্বাচন কর্মকর্তারাও ট্রাম্পের মামলা মোকাবেলা করতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। এসব বিবেচনায় এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটি জটিল আবর্তে প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

নির্বাচনী ডিবেট শুরুর আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে ট্রাম্পের নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও ভূমিকা নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রায় সবগুলো নির্বাচনী জনমত জরিপে জো বাইডেন সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। তবে বিগত২০১৬ সালের নির্বাচনী ফলাফলের মধ্য দিয়ে মার্কিন নির্বাচনের জনমত জরিপ ইতিমধ্যে এক ধরনের অনাস্থার সংকটে পড়েছে। পপুলার ভোটে হিলারি ক্লিন্টন অনেক এগিয়ে থাকলেও অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিপুল সংখ্যক মানুষের রাস্তায় নেমে আসার উদাহরণও সেবারই প্রথম দেখা গেছে। তবে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন নি এবং আদালতেও চ্যালেঞ্জ করেননি। এবার ট্রাম্প মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনের শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যের অতীত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে সিটিং প্রেসিডেন্ট হয়েও নিজের প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। মার্কিন গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এটা ভালো উদাহরণ নয়। বিশেষত কোনো রকম তথ্যপ্রমান উপস্থাপন না করেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘ফ্রড’ বা ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ করেছেন তা নি:সন্দেহে মার্কিন ডেমোক্রেটিক কনভেনশনের জন্য ক্ষতিকর ও অস্বস্তিকর। আমরা প্রত্যাশা করব ভোট গণনায় শেষ পর্যন্ত যিনিই নির্বাচিত হন না কেন, মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও সমর্থকরা সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন।

বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট প্রভাব ও ভ‚মিকা রয়েছে। এ কারণেই বিশ্বসম্প্রদায় মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে সব তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নতুন প্রজন্মের ভোটার যাদের বয়েস ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তারা ব্যাপকহারে জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। সেই সাথে নারী ভোটার, আফ্রো-আমেরিকান, হিস্পানিক ও এশিয়ান ভোটারদের রায়ও বাইডেনের পক্ষে গেছে। শুধুমাত্র বয়স্ক স্বেতাঙ্গদের ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি পেয়েছেন। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সুইং স্টেট বা ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসেবে যে তিনটি বা চারটি রাজ্যের গণনা বাকি ছিল তার যে কোনো একটিতে জিতলেই বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বিশ্লেষকরা বাইডেনকে ৬০ শতাংশ এগিয়ে রাখছেন। অন্যদিকে বাকি সবকটি রাজ্যে ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা শতকরা ৩১ ভাগ। একটি রাজ্যে জিতলে বাইডেনের বিজয় প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেলেও সবগুলো রাজ্য জেতার পরও ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হতে আরো বেশকিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিপুল সংখ্যক ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছেন। এসব পোষ্টাল ব্যালটের বেশিরভাগ বাইডেনের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা স্পষ্ট বলে জানা যাচ্ছে। প্রায় ১০ কোটি পোষ্টাল ব্যালট গণনা শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চুড়ান্ত ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। গতকাল গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে দেখা যায়, বেশকিছু স্থানে রিপাবলিকান সমর্থকরা ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছেন। মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য এটি কোনো সুখকর পরিবেশ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অন্য সব দেশের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রায় দুইশ বছরের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লিগ্যাসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন যে কোনো কর্মকান্ড থেকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট প্রার্থী ও সমর্থকরা বিরত থাকবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনিই নির্বাচিত হোন না কেন, বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটবে না বলে দুই পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে অপেক্ষা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন