বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিষ্ঠুরতার শিকার শিশুরা

চট্টগ্রামে কলহ বিরোধে বাড়ছে খুনোখুনি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:১৫ এএম


চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে শিশুরা। পারিবারিক কলহ-বিরোধ, প্রতিহিংসা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খুন করা হচ্ছে শিশুদের। তুচ্ছ ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে শিশুর। স্বজনের কাছেও নিরাপত্তাহীন কেউ কেউ। নিষ্পাপ শিশুর রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে স্বজনের হাত। চট্টগ্রামে বাড়ছে শিশু খুনের ঘটনা। গত কয়েক মাসে মহানগরী ও জেলায় অন্তত ১০টি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতায় মানবিকতা লোপ পাচ্ছে। এরফলে সহিংসতা বাড়ছে, যার শিকার হচ্ছে শিশুরাও। বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতাও এজন্য দায়ী। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে পারিবারিক সহিংসতা। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি।

মহানগরী এবং জেলায় প্রায় শিশু খুনের ঘটনা ঘটছে। ফটিকছড়িতে মায়ের দেয়া আগুনে পুড়ে ১৩ দিন পর ১ নভেম্বর মারা যায় কিশোরী বিবি খায়রুননেছা (১১)। থানার ওসি বাবুল আক্তার বলেন, পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী মো. লোকমানের স্ত্রী পারভিন আক্তারকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়ছে। পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে তদন্ত অব্যাহত আছে। গত ২৯ অক্টোবর নগরীর হালিশহর এ বøকের ডোবা থেকে দুইদিন আগে নিখোঁজ শিশু মেহেরাজ ইসলাম আরিয়ানের লাশ উদ্ধার করা হয়। আরিয়ান ঢাকার নাখালপাড়ার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জুয়েলের ছেলে। গত দুইমাস ধরে সাইফুল পরিবার নিয়ে পাহাড়তলীর শাপলা আবাসিক এলাকায় শ্বশুরের বাসায় আছেন। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়। থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, পিবিআই ও সিআইডি মামলার ছায়া তদন্ত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি খুব শিগগির খুনের রহস্য উদঘাটন করা যাবে।

এর দুই দিন আগে নগরীর চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসাবে লাশ দাফন করে আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম। পরে নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি জিডির সূত্র ধরে পুলিশ শিশুটির পরিচয় সনাক্ত করে। ১ নভেম্বর এই ঘটনায় গ্রেফতার শিশু সায়েমের সৎ পিতা মো. নয়ন খুনের দায় স্বীকার করেন। নয়নের দাবি নিজের সন্তান হওয়ার স্ত্রী তানিয়া বেগমের আগের ঘরের সন্তান সায়েমের প্রতি তার হিংসা শুরু হয়। এই হিংসা থেকেই তাকে খুন করেন তিনি।

গত ২৪ আগস্ট চান্দগাঁও পাঠানিয়া গোদায় নিজবাসায় খুন হন গুলনাহার বেগম ও তার শিশু সন্তান রিফাত। তাদের দুজনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় কয়েকদিন পর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় একমাত্র আসামি মো. ফারুক। তিনি খুনের দায় স্বীকার করে বলেন, গুলনাহারের সাথে তার টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধ ছিলো। এর জেরে তিনি তাকে খুন করেন। তবে খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় শিশু রিফাতকেও হত্যা করা হয়। মায়ের নির্মম খুনের দৃশ্য দেখে রিফাত বাথরুমে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করে ফারুক।

৯ জুলাই নগরীর দেওয়ানহাট থেকে ইকরা নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে হত্যার পর লাশ ওড়নায় পেঁচিয়ে ঘরের জানালায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় সৎ মা শিরিন আকতার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাকে। ৭ জুলাই একই থানা এলাকায় ঝগড়ার জেরে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তিন বছরের শিশু মেহরাবকে। তবে কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন শিশুর চাচা জসিম উদ্দিন।

পটিয়া কাশিয়াইশ ইউনিয়নে দুই শিশু টুকু বড়–য়া এবং নিশু বড়–য়াকে গলা টিপে হত্যা করেন তাদের পিতা মোখেন্দু বড়–য়া। পরে তিনি বিষপান করেন। দুই দিন পর তিনিও মারা যান। পারিবারিক কলহে এমন ঘটনা বলে জানায় পুলিশ। গত ৭ জুন নগরীর বাকলিয়ায় বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকিতে ফেলে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে। ফটিকছড়িতে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় চার বছরের শিশু আবদুল্লাহ আল দিহানকে। এ ঘটনায় জড়িত শিশুর চাচি রেশমা আকতারকে গ্রেতার করে পুলিশ। প্রতিবেশির সাথে ঝগড়ার জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন