আর্মেনিয়া শনিবার জানিয়েছে যে, বিতর্কিত নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশার কাছে গভীর রাতে আজারবাইজানীয় সেনাদের সাথে ‘তীব্র লড়াই’ হয়েছে। পার্বত্য প্রদেশটি নিয়ে কয়েক সপ্তাহের তুমুল লড়াইয়ের পরে, আজারবাইজান কারাবাখের প্রধান শহর স্টেপেনকোর্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহরটির দখল নিতে যাচ্ছে।
পার্বত্য শহর শুশা কারাবাখের অঘোষিত রাজধানী স্টেপেনকোর্টের সাথে আর্মেনিয়ার ভূখণ্ডকে সংযোগকারী একটি প্রধান রাস্তায় উপর অবস্থিত। আর্মেনিয়া কারাবাখের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুশান স্টেপানিয়ান শুশার কাছে শুক্রবার রাতে আজারবাইজানের সেনাবাহিনীর সাথে ‘বিশেষ করে নিবিড় এবং তীব্র যুদ্ধ’ হওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন যে, আজারবাইজানের অসংখ্য আক্রমণকে প্রতিহত করা হয়েছে। আর্মেনিয়া আরও জানিয়েছে, শুশার উপরে সারা রাত ধরে অবিরাম গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। শহরটিতে আর্মেনীয় জন্য পবিত্র একটি ক্যাথেড্রাল রয়েছে যা গতমাসের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
তবে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, শুশার উপর গোলা বর্ষনের তথ্য ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় মুখপাত্র, আর্টসান ওভানিসিয়ান ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, শুশায় আজারবাইজানের সেনাবাহিনীর কোনও ক্ষতি হয়নি, তারা পশ্চাদপসরণও করেনি। এবং ‘লড়াই অব্যাহত রয়েছে’।
শুশায় এই সংঘর্ষের লক্ষণ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে বাগানে বোমার শেল পড়ে থাকা থেকে শুরু করে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলোর ভেঙে যাওয়া জানালা সবই যুদ্ধের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কারাবাখ ও আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শুশার দক্ষিণে অসংখ্য হামলার খবর জানিয়েছেন। শুষা পাহাড়ের নিচে অবস্থিত করিনটক শহর যা আজারবাইজানের দশলতী নামে পরিচিত এবং দক্ষিণে লাচিন শহরকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। আজারবাইজানীয় বাহিনী স্টেপানকোর্ট থেকে শুশা এবং লাচিন হয়ে আর্মেনিয়ান সীমান্তের দক্ষিণে যাওয়ার রাস্তায় পৌঁছে যাওয়ায় কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এই অঞ্চলটির মধ্য দিয়ে এটিই প্রধান রাস্তা এবং আজারবাইজান এটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের পথটি বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে, কারাবাখ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, অঞ্চলটির প্রধান শহর স্টেপেনকোর্টে সোভিয়েত-যুগের বোমা এবং স্মার্চ রকেট দিয়ে হামলা করা হয়েছে। তবে এতে কোনও প্রাণহানী হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধের সময় বাকু থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাকারী অঞ্চল কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এলাকাটি আর্ন্তজাতিকভাবে আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত। স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য রাশিয়া, ফ্রান্স এবং আমেরিকার একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশ দুইটি লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এই তিনটি দেশই মধ্যস্বত্বভোগীদের মিনস্ক গ্রুপ নিয়ে গঠিত, যা ১৯৯৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুইটির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটাতে সহায়তা করেছিল, তবে দীর্ঘকালীন সংঘাতের স্থায়ী সমাধান এখনও খুঁজে পায়নি।
ফরাসী রাষ্ট্রপতি ইমমানুয়েল ম্যাখ্যোঁর কার্যালয় থেকে শনিবার বলা হয়েছে যে, তিনি রাশিয়ান নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন এবং একমত হয়েছেন যে কারাবাখের ‘যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে’ এবং ‘বাস্তবতার ভিত্তিতে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হবে’। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান বেসামরিক অঞ্চলগুলোতে হামলার জন্য একে অপররের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ এই যুদ্ধকে ‘নির্বিচারে আক্রমণ’ বলে ঘোষণা করেছে, যার ফলে দেশ দুইটির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এর অভিযোগ আনা হতে পারে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনায়ান সামরিক সহায়তার জন্য তাদের মিত্র রাশিয়া কাছে আবেদন করেছেন। আজারবাইজানকে প্রথম থেকেই জোরালো সমর্থন জানিয়ে আসছে তুরস্ক। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে লড়াইয়ে আজারবাইজানের পক্ষে ভাড়াটে সেনা পাঠানো হয়েছে বলে তুরস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে আমের্নিয়া। তবে তুরস্ক সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সূত্র: ডন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন