শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গড়ার অঙ্গীকার

বাইডেন-কমলার বিজয় ভাষণ নাগরিকত্ব পাবেন ১ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী

ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

যে অভিবাসীদের ঠেকাতে সীমান্তে প্রাচীর তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অভিবাসীদেরই বৈধতা দিতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিভাজনের রাজনীতিকে সরিয়ে আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গীকার করলেন তিনি। নির্বাচনের ফল ঘোষিত হওয়ার পরে গতকাল ভোরে নিজ শহর ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে বিজয়-ভাষণ দেন তিনি। সেখানেই তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একই মঞ্চে তার রানিংমেট ও নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি প্রথম হলেও এ পদে শেষ মহিলা নই’। পাশাপাশি, এদিন ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পলিসি ডকুমেন্টে জানানো হয়েছে, ‘১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে’। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভারতীয়রাও।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর পর সমর্থকদের উদ্দেশে ডেলাওয়্যারে বিজয়-ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেন। বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তার সেই ভাষণের আগে মঞ্চে ওঠেন নতুন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বিজয়-ভাষণে বাইডেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেহাল অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভাজন সরিয়ে দেশকে একজোট করাই তার লক্ষ্য। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, বিশ্বের দরবারে আমেরিকাকে ফের সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে দিতে তিনি বদ্ধপরিকর। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট পদ দখল করার পর বাইডেন মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকাকে এক দেশ হিসাবেই দেখেন তিনি। ডেমোক্র্যাটদের দলীয় নীল রঙের প্রাধান্য বা রিপাবলিকানদের লাল রঙ, কোনওটাকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ বাইডেন। বরং আমেরিকাকে এক রাষ্ট্র হিসাবে দেখার কথা বলেছেন তিনি। বাইডেনের কথায়, ‘লাল বা নীল রাজ্য নয়, আমার নজরে রয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকা।’ সেই সঙ্গে বর্ণবৈষম্য, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ফলে বিভাজনের দেয়াল সরিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
সমর্থকদের উল্লাসের মাঝে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বাইডেন বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এটাই সময় এবং আমেরিকার ক্ষত সারানোরও পালা এসেছে। বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে ফের এক হওয়ার সময় এসেছে।’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই আমেরিকায় ঘটে গেছে জর্জ ফ্লয়েড খুনের মতো ঘটনা। ওই ঘটনাকে ঘিরে আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বেই বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দেখা গিয়েছিল। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হতে দেখা গেছে, দেশের বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেয়েছেন বাইডেন। এদিন ভাষণে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশের অ্যাফ্রো-আমেরিকানদের ধন্যবাদ। আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার আমি আপনাদের পাশে থাকব।’
এদিন বাইডেনের আগে ভাষণ দেন কমলা। মহিলা হিসাবে প্রথম হলেও তিনি যে সর্বশেষ নন, সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘হতে পারে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আমিই প্রথম মহিলা। কিন্তু আমিই শেষ নই’। নির্বাচনে তার এবং বাইডেনের জয়কে ‘ঐতিহাসিক’ বর্ণনা করে কমলার মন্তব্য, ‘আজ রাতে প্রতিটি ছোট্ট মেয়ে দেখতে পাচ্ছে, এটি (আমেরিকা) একটি সম্ভাবনাময় দেশ’। তার দাবি, এক শতক আগে আমেরিকার মহিলাদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির মাধ্যমে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। দেশ গড়ার কাজে অ্যাফ্রো-আমেরিকান নারীর অবদান যে প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া হয়, সে কথাও কমলার ভাষণে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আজ তাদের সংগ্রাম এবং দৃঢ়সংকল্পের প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখতে চাই কী কী ভার কমানো যায় এবং আমি তাদের গড়ে তোলা পথেই এগিয়ে চলেছি।’ গণতান্ত্রিক পথে যাতে আরও মানুষের যোগদান থাকে, সে উদ্দেশ্যেও তার সমর্থকেরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন কমলা। তার মন্তব্য, ‘আমেরিকা প্রস্তুত। সেই সঙ্গে জো বাইডেন এবং আমিও।’
এদিকে, বাইডেন শিবিরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি পলিসি ডকুমেন্ট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই মার্কিন কংগ্রেসে নতুন অভিবাসী সংশোধনী আইন পাশ করানোর কাজ শুরু করে দেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। যার লক্ষ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির আধুনিকীকরণ এবং পরিবারভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রদান। একই পরিবারের সদস্যদের একত্রিত রাখার লক্ষ্যে আমরা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মধ্যে ৫ লাখেরও বেশি ভারতীয়।’ এর ফলে আমেরিকায় প্রতি বছর অন্তত ৯৫ হাজার অভিবাসী স্থায়ীভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ প্রবাসী ভারতীয় বসবাস করেন। এদের অনেকেই মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন এবং কয়েক পুরুষ আমেরিকায় বসবাস করছেন। বাইডেনের এই নতুন সংশোধনী পাশ হলে এবার এই প্রবাসী ভারতীয়দের আত্মীয়রাও সহজেই মার্কিন নাগরিকত্ব পাবেন। মার্কিন নির্বাচনে বাইডেনের রানিং মেট তথা নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নিজেও ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভ‚তদের একটা বড় অংশের সমর্থন গিয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবিরেই। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতায় এসে আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের বড় উপহার দিতে চাইছেন বাইডেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পকে হারানোর পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে নানা নজির গড়েছেন ৭৭ বছরের জোসেফ রবিনেত বাইডেন জুনিয়র। আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বয়সি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৯৯২ সালের পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একবার পদে থাকা কোনও প্রেসিডেন্টকে হারালেন। শেষবার এমনটা করেছিলেন বিল ক্লিনটন। ১৯৯২ তে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে পরাস্ত করেছিলেন তিনি। বাইডেনের পাশাপাশি কমলার জয়ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান-এশীয় হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স, এপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Kazi Emdadul Haque ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের কি করলো কি করবে, কি দিবে কি দিবে না সেটা বড়ো কথা নয়, অহংকারী দম্ভ মন মানুষিকতা না হলেই ভালো, উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানরা যদি অহংকার হিংসা দম্ভের টাইপের মনমানসিকতা হয়, তাহলে সারা বিশ্বের জন্য অমংগলই বয়ে আনবে। আমরা সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ চাইবো নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিঃ জো বাইডেন, তার ভাষণের কথার সাথে কাজের মিল থাকলেই যথেষ্ট। আমরা এটাই চাই
Total Reply(0)
Imam Hossain RaNa ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
'বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ইচ্ছা বাংলাদেশে এরকম একটা নির্বাচন হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কে দল-মত নির্বিশেষে সবাই সংবর্ধনা ভালোবাসা জানাবে...???? সরকার চাইলে সবই সম্ভব।
Total Reply(0)
Kuntal Banerjee ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
জো বাইডেন কেমন প্রেসিডেন্ট সেটা এখন বলার সময় আসেনি, সেটা অপেক্ষা করতে হবে আর কিছু দিন, তবে এই টুকু বলা যায় ওনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুনে মনে হলো প্রকৃত দেশনায়কের মতো কথা।
Total Reply(0)
Hk Humayun ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
হাতী গাধার হাড্ডা হাড্ডি লড়াই এ সর্বশেষ গাধার জয় হলো।
Total Reply(0)
Abdul Hakim ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে.
Total Reply(0)
Sajjad Hussain Sagor ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্টই মুসলিম কোন দেশের মানুষ এবং মুসলিম কোন দেশের ভালো চাইনি আর চাইবো ও না। সুতরাং যেই প্রেসিডেন্ট হউক কোন লাভ নেই আমাদের।
Total Reply(0)
Ahmed Ferdus ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
জোবাইডেন,বাংলাদেশের এই,রকম নির্বাচন দেখতে চাই
Total Reply(0)
Farman Ullah ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
আচ্ছা, ঐ দেশের নেতারা বক্তব্যের শুরুতে সেই দেশের স্থপতি এবং যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে তাদের প্রসংশা করেনা কেন?
Total Reply(0)
Mohammad Hosen ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
আমেরিকানরা বরাবরই মুসলিম বিরোধী হয়! জো বাইডেনও এর বিপরীতে নয়।দেখা যাক কি হয়
Total Reply(0)
Mohammed Shahabuddin ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
Our politicians should learn a big lesson from this election how to campaign peacefully how to respect each other and when an elected president gives his speech from the victory stage on his own not mentioning any father of nations not mentioning freedom fiters no one gives him big flowers no one standing behind him to get their faces on cameras pictures
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন