শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিন : সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৫:৫৯ পিএম

ছবি: মতিউর সেন্টু।


সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার অবৈধ সরকার, তারা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বেআইনিভাবে গণতন্ত্রকে ধবংস করে ফেলেছে, গণতন্ত্রের সব সম্ভাবনাকে ধবংস করে ফেলেছে। কিন্তু এটা শেষ নয়। তাদের আজকে দেখা উচিত, তাদের এই নির্বাচন (যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন) থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত আওয়ামী লীগের এবং যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের- যে নির্বাচন কমিশন কাকে বলে?

মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমেরিকার নির্বাচনের যারা অথোরেটি তারা দেখেন, সমস্ত চাপের মুখেও অবিচল থেকেছে। সেই অবিচল থেকে তারা আজকে জনগণের যে রায় সেটাকে আপহোল্ড করেছে-দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি, এটাই গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যদি না থাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, শক্তিশালী হতে হবে, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ শক্তিশালী হতে হবে, প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। আজকে এই আওয়ামী লীগ, যারা বার বার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে পরিকল্পিভাবে, আত্মভরিতা করে, অহংকার করে, এমন এমন কথা বলে যার এখন নাম বলতে চাই না তাদেরকেও ছাড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, তাদের (সরকার) দেখা উচিত- সোশ্যাল মিডিয়া খুললে দেখবেন যে কিভাবে আমেরিকাতে সেই আত্মভরিতার অবসান ঘটানো হয়েছে, জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করছেনে, আমেরিকার জনগণ অনেকে কাঁদছে যে, তারা একটা ভয়ংকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, সারা পৃথিবীর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কারণ কর্তৃত্ববাদীতার যে নিবোধ, কর্তৃত্ববাদীরা যে চাপ, যে অসহায়ত্ব সেখান থেকে তারা, গোটা পৃথিবীর মানুষ বেরিয়ে আসতে চায়। আজকে সেজন্য আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দিয়ে আর সম্ভব না।

সরকার অন্ধকার গহ্বরে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা (সরকার) অন্ধকারে আছেন। দেখতে পারছেন না আপনার চারদিকে কি অবস্থা, মানুষের মধ্যে কি চলছে, তাদের চোখের ভাষা আপনারা পড়তে পারছেন না, দেওয়ালের লিখন আপনারা দেখতে পারছেন না। আপনারা সেই অন্ধকার গহবরের মধ্যে বাস করছেন। সেই সাথে দেশকে টেনে নিয়ে গেছেন ওদিনকে, জাতিকে টেনে নিয়ে গেছেন ওদিকে। সেই গহবর থেকে আমরা স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমরা সূর্যের আলো দেখাতে চাই। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই চেষ্টা করি। আমরা আহবান থাকবে এই নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার তৈরি করে সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করা আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এই বংশ্বদ নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠান ধবংস হয়ে গেছে। এখানে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, এখানে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। কোন চাকরি হয় না- ডিএনএ টেস্ট না করে। অর্থ্যাৎ বিএনপির কোনো গন্ধ থাকলে তার চাকরি হয়না। অন্য সব জায়গাতে ঘটছে, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা এখন পর্যন্ত চলছে। আনওয়ানটেড, আনফুরচুনেড ইনসিডেন্ট। আজকে সকল রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষ সকল মানুষের এখন গণতন্ত্রের জন্য এগিয়ে আসা দরকার এবং এক কন্ঠে আওয়াজ তোলা দরকার আমাদের অধিকার আমাদের ফিরিয়ে দাও।ইট ইজ এ হাই টাইম।

‘ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ উপনির্বাচন প্রসঙ্গে’ মির্জা ফখরুল বলেন, গত রাত্রেও উত্তরায় তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) আমাদের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গেছে, সাহাবুদ্দিন সাগর আমাদের সভাপতি (দক্ষিনখান থানা) তার বাড়িতে গিয়ে এক পুলিশ অফিসার পিস্তল ধরে তার স্ত্রীকে বলেছেন, তাকে বলবেন যে, সে যেন বাড়ি না আসে তানাহলে গুলি করে মেরে ফেলবো। একটু আগে খবর পেলাম, অফিসের পিয়নকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো, তারপর আবার ছেড়েছে। এরকম ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে তারপরও কিন্তু হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে প্রচার করছে।

সিরাজগঞ্জে প্রার্থীকে বাড়ি থেকে বেরুতে দেয়া হয়, ঘিরে রেখেছে। তিন দিন আটকিয়ে রেখেছে তারপরে অনেক চেষ্টা করে বের হয়েছে, এখন তাকে বের হতে দেয় না। ওখানে তো মহাশক্তিশালী, প্রভাবশালী মরহুম নাসিম (মোহাম্মদ নাসিম) সাহেবের ছেলে নির্বাচন করছে, তারা তো ওখানে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না, এমন ত্রাসের রাজত্ব তারা সৃষ্টি করেছে কেউ সাহস পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, তারপরও আমরা আশাবাদী, আমরা আবার ওই আশঙ্কায় থাকি যে, ২০১৮ সালে আগের রাত্রে যে নির্বাচন, অন্যান্য উপনির্বাচনগুলো যে অবস্থা, মেয়র নির্বাচনগুলোতে যে অবস্থা তাতে করে আমরা উদ্বিগ্ন এই নির্বাচনগুলোতে ফলাফল কি দাঁড়াবে? আমরা বলব, জনগনকে রুখে দাঁড়াতে হবে, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এই সমস্ত রাষ্ট্রকে ধবংস করে দেয়া ও আমাদের স্বাধীনতার সমস্ত অর্জনকে শেষ করে ফেলার বিরুদ্ধে তাদেরকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান নানা ঘটনা তুলে ধরে বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের ক্যাম্প নিজেরা পুঁড়িয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস জ্বালাবে বিএনপি-এটা কেউ বিশ্বাস করে? আল্লাহ তা‘লা তো একজন আছেন। এইভাবে তারা মামলা দিচ্ছে। এভাবে তারা একের পর এক মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রাম ছাড়া, বাড়ি ছাড়া করছে। এবং প্রতিদিন রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ বলছে, গ্রাম ছাড়ো, বাড়ি ছাড়ো, ১২ তারিখের পর নির্বাচন শেষ হলে আসবে-এভাবে হুমকি দিচ্ছে। আজকে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা তারা দাঁড় করেছে আগামী ১২ তারিখ জনগণ যদি দিতে না পারে তাহলে ওই নির্বাচনের পরেই জনগন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফেরানোর আন্দোলন শুরু করবে।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী সেলিম রেজার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সর্বক্ষণ আমাদেরকে তারা হুমকি দিচ্ছে, প্রচারণা করতে দিচ্ছে না। এজেন্টদেরকে অলরেডি হুমকি দিচ্ছে।তাহলে আমরা কীভাবে এজেন্ট দেবো? এজেন্ট দেবো লিস্ট নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ। যারা ভোটার ভোট দেবে-তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি। এই প্রতিকূলতা অবস্থার মধ্যে আমরা আছি। গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ থাকবে- বাংলাদেশের মানুষ আজকে আপনাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে- গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আপনারা ভূমিকা পালন করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের উপ-নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সাইদুর রহমান বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ab rahim ২১ নভেম্বর, ২০২০, ৯:১৭ পিএম says : 0
এগুলো সব আপনারাতু শিখিয়েছেন,, ২০০৬ সালের নির্বাচন। মনেপড়ে কিছু নাকি ভুলে গেছেন। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ছিলেন, সাথে আপনাদের পোষাগুন্ডাবাহিনী,,কিভাবে হ্মমতার অপব্যবহার করতেহয়, আপনাদের কাছ থেকে শিখা। এখন বড়বড় কথাবলে কোন লাভনেই। জনগনের ভালোকরে জানে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন