বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানীর আদাবরে আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মাইন্ড এইড নামের একটি হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে মানসিক ও মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হতো। তবে রোগীদের সেবা দেয়ার নামে সেখানে চালানো হতো নির্যাতন। আর নির্যাতনের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা রুম। ওই রুমেই হাসপাতালের কর্মীদের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন এএসপি আনিসুল করিম। গতকাল হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, হাসপাতালের নিচ তলা ও তৃতীয় তলায় রয়েছে দুটি রুম। হাসপাতালে যেসব রোগী আসতেন তাদেরকে প্রথমত এই রুমটাতে নিয়ে আসা হতো এবং যারা বেশি উত্তেজিত হতো তাদেরকে এখানে এনে মারধর করা হতো।

হাসপাতালের বাবুর্চি পরিচয়দানকারী রুমা আক্তার নামের এক নারী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি দুইমাস আগে ওই হাসপাতালে আয়া পদে যোগদান করেন। পরবর্তীদের রোগীদের নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে তিনি চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেন। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে বাবুর্চি পদে বদলি করে দেন। এরপর পর থেকে রোগীদের খাবার রান্না করেন তিনি।

তিনি জানান, প্রায় দিন রোগীদের সাথে হাসপাতালে দায়িত্বরত কর্মীদের ঝামেলা হতো। এসময় রোগীদের তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মারধার করা হতো। আর যেসব রোগী বেশি ঝামেলা করতো তাদের ওই রুমে নিয়ে যাওয়া হতো।

শারমিন আক্তার নামের আরেক বাবুর্চি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, গত সোমবার দুপুরে এএসপি আনিসুল করিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ সময় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী জোরপূর্বক ওই রুমে নিয়ে যান এবং ধস্তাধস্তি করে একপর্যায়ে আনিসুল মারা যান।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীশূন্য বেডগুলো পড়ে আছে। প্রতিটি তলায় রয়েছে রোগীদের জন্য আলাদা রুম। প্রতিটি রুমে ৫ থেকে ৬টি করে বেড রাখা আছে। সাথে রয়েছে খাবারের জন্য আলাদা রুম। এছাড়া বিনোদনের জন্য রয়েছে বিলিয়ার্ড টেবিল ও কেরাম খেলার ব্যবস্থা।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কয়েকটি রুমে গিয়ে দেখা গেছে, বিছানার পাশে ছোট টেবিলে রয়েছে কয়েকটি গল্প বই। রোগীদের জন্য ওইসব বই রাখা হয়েছিল বলে জানান বাবুর্চি রুমা আক্তার। তিনি জানান, এ ঘটনার ঘটার আগে হাসপাতালে ১৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার পর সব রোগী চলে গেছেন।

এদিকে, এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৪ মাস আগে সেখানে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকে মানসিক ও মাদকাসক্ত রোগীদের ভর্তি করা হয়। অনেক রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে রোগীরা ঝামেলা করার কারণে তাদের মারধর করা হতো।

হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী ইব্রাহিম টি স্টোর নামের এক দোকানের মালিক ইব্রাহিম আলী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই তার দোকানে চা-নাস্তা করতে আসছেন ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এছাড়াও রোগীদের স্বজনরাও তার সেখানে চা-নাস্তা করতেন। কিন্তু গত ১৪ মাসে কোনো রোগী মারা যাওয়া ঘটনা শুনেননি তিনি। অল্প দিনেই হাসপাতালটি সুনাম অর্জন করায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

এএসপি আনিসুল করিমের হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, রোগীকে ভর্তি করে উনার ভাই আমার দোকানে আসেন। সেখানে এসে একটি সিগারেট কিনেন। পরে ফের হাসপাতালে চলে যান। একটু পর আবার তিনি আমার দোকানে আসেন। তখন আরেকটি সিগারেট কিনেন এবং উনার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে জানান। একটু পরে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারিও আমার দোকানে আসেন। তারাও মৃত্যুর খবরটি নিয়ে আলোচনা করেন।
আবুল হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি দৈনিক ইনলিকবকে বলেন, আমি গত এক বছর থেকে হাসপাতালের পাশে একটি বাসায় বসবাস করি। প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালের ঝামেলা হতো। অনেক সময় রোগীদের চিৎকার শোনা যেতো। তবে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম বলে জানান তিনি।

এদিকে, গতকাল বিকেলে হাসপাতাল পরির্দশন থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালটি ঘুরে মনে হলো এটি হাসপাতাল নয় জেলখানা। এবং বারান্দাকেও তারা এমন ভাবে রুম বানিয়েছে যেখানে বাতাস ঢোকার কোনো সিস্টেম নাই। সেখানে সাধারণ মানুষ গেলেও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা। আর ওইখানে একটা রোগীর উপর ১০ থেকে ১২ জন উঠলে তিনি তো এমনিতেই মারা যাবে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, মানসিক হাসপাতালের অনুমোদন নেই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এমন একটি বাড়ির মধ্যে যেটি জেলখানার মতো তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে তারা এই কাজগুলো করে। তারা আমাদের একজন সিনিয়র এএসপিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন