প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে থাকা বিদ্যুৎ শ্রমিকের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হলেও খুনিরা এখনো অধরা। তবে সম্ভাব্য খুনিদের আটকে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, এমন তথ্য জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শাহরাস্তি থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি এবং জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দলগুলো খুনিদের ধরতে পৃথকভাবে অভিযানে অংশ নিয়েছে। পুলিশ সুপার আশা করছেন, খুব শীঘ্রই খুনিদের আটকের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে সক্ষম হবেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের শাহরাস্তি উপজেলা রাজাপুর এলাকায় প্রথমে অজ্ঞাত হলেও ড্রামের মধ্যে লুকানো এই লাশ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। হতভাগ্য এই মানুষটি হচ্ছেন, কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলার কাজীপাড়া এলাকার মৃত আমির হোসেন ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (৪৫)। পেশা ছিলেন বিদ্যুৎ শ্রমিক। কাজ করতেন কুমিল্লা ইপিজেড-এর একটি পোশাক কারখানায়।
নিহতের মা লুৎফুন নাহার জানান, গত সোমবার সকালে তার ছেলে কর্মস্থলে কাজের উদ্দেশ্যে কাজীপাড়ার বাসা থেকে বের হয়। তারপর পুলিশের দেওয়া ছবি থেকে জানতে পারেন ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেই লাশ আছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানায়।
মায়ের অভিযোগ, প্রথম স্ত্রী ছেড়ে সিদ্দিকুর রহমান গত একমাস আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলের প্রথম স্ত্রী ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
শাহরাস্তি থানার ওসি মো. শাহ আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে এখন নিহতের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আটক করতে থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে কুমিল্লায় অভিযান চলছে।
পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শঙ্কর কুমার জানান, নিহত সিদ্দিকুর রহমানের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের দাগ রয়েছে। তাছাড়া ড্রামের ভেতর তুলা এবং কাপড় মোড়ানো ছিল লাশটি।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে জেলা পুলিশের সঙ্গে পিবিআই, সিআইডি, ডিবি পুলিশ এমনকি শাহরাস্তি থানা পুলিশও যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি আশা করছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের আটক করতে সক্ষম হবে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, খুনিরা পেশাদার। নিহতের পরিচয় যেন না মেলে তার জন্য হাতের আঙুলগুলো থেঁতলে দেওয়া হয়। কারণ, এটি পরিচয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারপরও ঘটনার শিকার ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার কাজ চলছে বলেও জানান, জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহরাস্তি উপজেলার রাজাপুর এলাকার নির্জন স্থানে নীল রঙের বড় একটি প্লাস্টিকের ড্রামের সন্ধান পান পথচারীরা। স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকানো এমন ড্রামটি কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সেখানে পড়ে থাকায় পথচারী এবং স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হয়। পরে তারা ঘটনাটি পুলিশকে জানান। এই ঘটনায় শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক আব্দুল আউয়াল বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
এদিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের টের পেয়ে নিহত সিদ্দিকুর রহমানের প্রথম স্ত্রী গা ঢাকা দেন। বন্ধ রয়েছে তার মুঠোফোন। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। সুতরাং পুলিশের এখন মূল লক্ষ্য সিদ্দিকুর রহমানের প্রথম স্ত্রীকে খুঁজে বের করা। আর সেই মিশন নিয়েই অভিযান চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন