বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেহাল রাস্তার দায় কার?

বিল না পাওয়ায় কাজে ঠিকাদারদের গড়িমসি : ডিএনসিসি বলছে টাকার সঙ্কট

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

উত্তরা, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, গুলিস্তানের সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে


রাস্তা খুড়ে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১ নং ওয়ার্ড উত্তরার ৬ নং সেক্টরের ৮ ও ৯ নং রাস্তা। দীর্ঘদিন পর সুয়ারেজ লাইনের কাজ করা হলেও রাস্তার পিচ ঢালাইলের কোন নাম নেই। কোন রকম হেটে চলাচল করেন এই দুই রাস্তার বাসিন্দারা, গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে রাস্তার এই বেহাল দশার। বারবার অভিযোগ জানানো হলেও রাস্তার কাজ শেষ করা নিয়ে ঠিকাদার বা সিটি করপোরেশন কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটি শুধু একটি রাস্তার চিত্র নয়, রাজধানীর যে অংশেই কোন রাস্তার কাজ শুরু করা হয় তা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমন কি বছরেরও বেশি সময় ধরে ফেলা রাখা হচ্ছে। রাস্তার কারণে ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই কিন্তু এই ভোগান্তির দায় নিতে নারাজ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা অন্য কোন সংস্থা। ঠিকাদাররাও কাজের বিল না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে গড়িমসি করেন।

আর নি¤œমানের কাজের জন্য প্রকল্প শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যেই সেই রাস্তা আবারও বেহাল হয়ে পড়ছে। না হয় নতুন প্রকল্পের কারণে আবারও খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ নি¤œমানের কাজ করা হয় সুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার। এই সমস্যার কারণে রাস্তায় গর্ত তৈরী হওয়া, ভেঙে যাওয়ায় অতিদ্রæত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঠিকাদাররা ইচ্ছাকৃতভাবেই সুয়ারেজ ও ড্রেনেজের কাজে ত্রæটি রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ঢাকা শহর জুড়ে নানা সংস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় যেন হচ্ছেই না। একেকটি সংস্থা একেক সময়ে কাজ করায় সারা বছরই শহরের রাস্তার বেহাল অবস্থা থাকে। নগর পরিকল্পনার সাথে যারা কাজ করেন তাদের অপরিপক্ক পরিকল্পনার ফলে একই কাজ বারবার করা লাগে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রেখে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় বাড়তি টাকা পাওয়ার আশায় থাকে ঠিকাদাররা। সিটি করপোরেশনও সময় মতো টাকা দিতে পারে না ফলে রাস্তার কাজ ধরে তা ফেলে রাখে ঠিকাদাররা। রাস্তার খুড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন। ফলে সারা বছরই ঢাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন কাজই সম্পন্ন হয় না। আর নি¤œ মানের কাজ করায় অল্প সময়ে তা নষ্ট হয়ে যায়। সম্ভাব্যতা যাচাই না করেও অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, পরবর্তীতে কাজ শেষ হলে নানা ত্রæটি দেখা দিলে আবারও সেই কাজের সংশোধন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বর্ধিত ৩৬টি ওয়ার্ডের রাস্তার ঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক। ঢাকা উত্তরের নতুন ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত কোন উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়নি। উত্তরার ১ নং ওয়ার্ডের বাইরে যেসব সেক্টর আছে সেগুলোর রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং থেকে আজমপুর পর্যন্ত রাস্তা উচু নিচু গর্ত অনেক; এয়ারপোর্ট মোড়ের রাস্তা যেন রোলার কোস্টার উচু নিচু ডেউ গর্তে ভরা। আর প্রায় এক বছর পরে খিলক্ষেত ও এয়ারপোর্টের মাঝে ইউটার্নের কাজ শেষ করেছে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে বসুন্ধরা থেকে নতুনবাজার এবং লিংক রোড থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা খুড়ে রাখা হয়েছে। মালিবাগ থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ম্যানহোলের ঢাকনা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, ঢাকনা সড়ক থেকে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি নিচু। একেকটি ঢাকনা একেকটি গর্ত যাতে গাড়ির চাকা পড়ে ঝাকি খায় এবং মোটরসাইকেলের অনেক চালক ঢাকনার গর্তে পড়ে আহতও হয়েছেন।

ধানমন্ডি-২৭, ঝিগাতলা, মানিকনগর, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান পার্কের দক্ষিণ পাশের রাস্তা, নর্থ সাউথ রোড, ওসমান গণি রোড, মনেশ্বরী রোডের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে।

এছাড়া মিরপুর টু আগারগাঁও সড়ক, শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১২ নম্বর ও পল্লবী অংশের রাস্তারও বেহাল দশা। শ্যামলী সিনেমা হল থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত এই রাস্তার দুই পাশে খানাখন্দে ভরা। সিদ্ধেশ্বরী রোড়ের খেলার মাঠের সামনে ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে। সুয়ারেজ লাইনের সমস্যার কারণে এই অংশে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে। মধ্যবাড্ডা পোস্ট অফিস রোডের প্রায় এক কিলোমিটার, উত্তর বাড্ডা থেকে পূর্বাঞ্চলের রাস্তা সড়কের অবস্থা আরও খারাপ।

বছরের পর বছর ঘুরলেও শেষ হয় না বনশ্রী এলাকার রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ। মেরাদিয়া বাজার থেকে মাদারটেক যাওয়ার প্রধান সড়কটি গত পাঁচ বছরেও ঠিক হয়নি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১০ জন কাউন্সিলের সাথে কথা হলে তারা জানান, অনেক আশা প্রত্যাশা নিয়ে ও জনগণকে অনেক ওয়াদা দিয়ে কাউন্সিলর হলেও উন্নয়নের কাজে তাদের কোন প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ নেই। তারা এক রকমের অসহায়। সিটি করপোরেশন থেকে কাজের টেন্ডার হয়, ঠিকাদার কাজ করে। এর বাইরে তাদের কিছু করার নেই।

ঢাকা উত্তর সিটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন টাকার অভাবে উন্নয়ন কাজের ধীরগতি। ঠিকাদারকে টাকা দিতে না পারায় তারাও কাজ শেষ করেন না।

এদিকে ঢাকায় বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয় করতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সবগুলো সংস্থার মাষ্টার প্ল্যানের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন নতুন মাষ্টার প্ল্যান তৈরী করে কাজ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
সাদ্দাম ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
প্রতিবছর এই খাতে দেশের অর্থ খরচ হচ্ছে , কিন্তু তার সুফল পাচ্ছে না
Total Reply(0)
তানিয়া ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৫:৫৮ এএম says : 0
আমার মতে এর দায় সকলের
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৫:৫৮ এএম says : 0
সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানই এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।
Total Reply(0)
সাদ্দাম ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৫:৫৯ এএম says : 0
দুর্নীতি প্রত্যেকটা সেক্টরের মধ্যে ঢুকে গেছে, যার ফল আমরা ভোগ করতেছি
Total Reply(0)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০১ এএম says : 0
নিউজটি করার জন্য ইয়াসিন রানা ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
কৌশিক সরকার ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০২ এএম says : 0
ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, সবগুলো সংস্থার মাষ্টার প্ল্যানের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন নতুন মাষ্টার প্ল্যান তৈরী করে কাজ করবে। সেটা কবে ?
Total Reply(0)
খালেদ ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৩ এএম says : 0
ঢাকা শহর জুড়ে নানা সংস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় যেন হচ্ছেই না।
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৩ এএম says : 0
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন কাজই সম্পন্ন হয় না।
Total Reply(0)
মাহমুদ ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৫ এএম says : 0
সম্ভাব্যতা যাচাই না করেও অনেক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, পরবর্তীতে কাজ শেষ হলে নানা ত্রুটি দেখা দিলে আবারও সেই কাজের সংশোধন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
Total Reply(0)
জুয়েল ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৫ এএম says : 0
কিছু বলার নেই
Total Reply(0)
সোলায়মান ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুক।
Total Reply(0)
Jack Ali ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৩০ পিএম says : 0
After liberation so many years passed but our country still like a dustbin because they Loot Our hard Earned Tax Payers money and send it to foreign country.. They don't love our beloved country.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন