শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নওগাঁয় অবৈধ ক্লিনিক ব্যবসায় প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৬ পিএম

নওগাঁর নিয়ামতপুরে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন চটকদার নামের ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, থেরাপি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে উপজেলা সদরের দু’একটি ক্লিনিকের অনুমোদন থাকলেও তা মেয়াদ উত্তীর্ণ। অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই। অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে এসব অননুমোদিত ক্লিনিকের বেশির ভাগের সাথে জড়িত রয়েছেন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। প্রশাসন নিবর দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

এসব ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। তাদের নেই কোনো জরুরি বিভাগ, নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা পার্টটাইম ডাক্তার দিয়ে চলছে জটিল অপারেশনসহ নানা চিকিৎসা। উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের তালিকাভুক্ত ক্লিনিক কাম ডাযাগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ৫ টি এবং শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫ টি থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা আরো বেশি। উপজেলা সদরসহ ইউনিয়নগুলোতে অবৈধভাবে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে অনেক ডেন্টাল ক্লিনিক, বেশ কিছু থেরাপি কেন্দ্র ও একাধিক কিডনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
উপজেলা সদর ছাড়াও চোখে পড়ে ছাতড়া বাজার, শিবপুর বাজার, গাংগোর বাজার, আড্ডা বাজারের অলিগলিতে নামিদামি ডাক্তারদের নাম সংবলিত চোখ ধাঁধানো ব্যানারসহ ডিজিটাল সাইনবোর্ড। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সহজ সরল অসহায় মানুষ তাদের পাতা ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন।

উপজেলা সদরসহ উপজেলা বিভিন্ন বাজারের ক্লিনিকগুলোতে চলছে চিকিৎসার নামে গলাকাটা ব্যবসা। কম্পিউটারাইজড, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব ক্লিনিকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য এসে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, উপজেলার কোনো অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক থাকলেও লাইসেন্সের জন্য একটি আবেদনও পড়েনি। এসব ক্লিনিকে নামিদামি ডাক্তারের নাম সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও তাদের অনেকে আগেই বদলি হয়ে চলে গেছেন বিভিন্ন জেলা বা বিভাগীয় শহরে। তাদের কেউ কেউ মাসে দু-একবার এসে অপারেশন করে চলে যান। কোনো ক্লিনিকেই নিয়মিত কোনো ডাক্তার থাকেন না। সেখানে নেই মানসম্মত পরীক্ষাগার, প্যাথলজি সরঞ্জাম বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। কম বেতনের অনভিজ্ঞ নার্স, আয়া ও দারোয়ানই হচ্ছে এসব হাসপাতালের একমাত্র ভরসা।

এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসার কথা মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করলেও মূলত তাদের বেশির ভাগই হচ্ছেন ‘ডাক্তার কদম আলী’র মতো। ডাক্তারের নাম ভাঙিয়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জেলা কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মনিটরিং কিংবা জবাবদিহি না থাকায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। উপজেলা প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। যে কারণে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে উপজেলায় রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ এ বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা কিংবা নীতিমালার বাইরে যেতে পারবো না। সবাইকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আমি ইতোমধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের সাথে আমার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। জেলার সকল উপজেলায় সরকারের নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার যথেষ্ট সময় দিয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই আমরা মাঠ পর্যায়ে অভিযান শুরু করবো। যে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারের নীতিমালা যথাযথভাবে মানেনি, তাদের অনিয়মের পরিমাপ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাদের অনুমোদন (লাইসেন্স) নেই তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা তো সরকারের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারবো না। উপজেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোন বিষয় সরকারের নির্দশনা মোতাবেক কাজ করে যাবো। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা হবে।’

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন