শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

জঙ্গি সন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িকতার উৎসের সন্ধানে

প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাহমুদ ইউসুফ
[গতকাল প্রকাশিতের পর]
এই যুগ : ১৯৭১ সালে লিওন পলিয়াকভ ফরাসি ভাষায় লিখেন আর্য মিথ (অৎুধহ  গুঃয) শীর্ষক বইটি। এটি ইংরেজিতে তরযমা করেন এডমান্ড হাওয়ার্ড। বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন যে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবজাতি যেসব জুলুম-অত্যাচারের শিকার তার মূল নিহিত রয়েছে আর্য (হিন্দু) জীবনদর্শনের মধ্যে। এই আর্য (হিন্দু) জীবনদর্শনই জার্মান নাৎসীবাদ ও দু’দুটো বিশ^যুদ্ধের কারণ (সূত্র : ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক : ভারতে মুসলিম নির্যাতন, ঢাকা পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, প্রথম প্রকাশ ২০১১, পৃ ৩৬৭)।
ইতিহাসবিদ প্রবোধচন্দ্র সেন বলেছেন, সিন্ধু সভ্যতার সংস্পর্শে এসেই আর্যরা ধীরে ধীরে সভ্য হয়ে ওঠে (সূত্র : প্রবোধচন্দ্র সেন : সভ্যতার ইতিহাস, শিশু সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৯৩; উদ্ধৃতি: ড. মোহাম্মদ হাননান: বাঙালির ইতিহাস, আগামী প্রকাশনী, প্রথম বর্ধিত সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ৩৬ বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, পৃ ২৩)। প্রবোধচন্দ্র সেন বুঝাচ্ছেন আগে আর্যরা অসভ্য ছিল, ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয়দের প্রভাবে তারা সভ্য হতে শুরু করে। কিন্তু আর্যহিন্দুরা আজও তো সভ্য হলো না! ব্রাহ্মণ্যবাদীরা অস্থির করে তুলেছে মানবজাতিকে। বোম্বের সাংবাদিক, গবেষক ভি টি রাজশেখর বলেছেন,  ব্রাহ্মণ্যবাদ হচ্ছে ফ্যাসিবাদের অপর নাম। তিনি আরো বলেছেন, আর্য (হিন্দু বা ব্রাহ্মণ্যবাদী) দর্শন যদি উৎখাত করা না হয় তাহলে দুনিয়া আরো বেশি বিপর্যয়কর তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের শিকার হবে (সূত্র : ভি টি রাজশেখর : হু ইজ দি মাদার অব হিটলার; উদ্ধৃতি : ড. মুহাম্মাদ সিদ্দিক : ভারতে মুসলিম নির্যাতন, ঢাকা পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, প্রথম প্রকাশ ২০১১,পৃ ৩৬৬, ৩৬৭)।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার উৎস হিন্দুধর্ম (উৎস : দি আর্গুমেন্ট্যাটিভ অব ইন্ডিয়া)। প্রখ্যাত গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক, কলাম লেখক গৌতম দাস বলেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে যে সেকুলারিজম ধারণা পাওয়া যায় সেটা আসলে খাঁটি ইসলামবিদ্বেষ। ইসলামের বিরুদ্ধে এই ঘৃণা-বিদ্বেষকে আড়াল করতেই সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) শব্দটা ব্যবহার করা হয় (সূত্র : গৌতম দাস ডট কম)।
মানব পাচার : শুধু সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নয় পাচার গুম অপহরণের ক্ষেত্রেও ভারত বিশে^র শীর্ষে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) থেকে ২৪ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মানব পাচার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে নেপাল ও বাংলাদেশের পাচার হওয়া মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি পূর্ব ইউরোপ থেকে পাচার হয়ে আসা মানুষও ভারতে উদ্ধার হয়েছে (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০১৪, পৃ ৩)।
শিশু-কিশোরদের পাচার করে ওরা বৃহত্তর কিডনি ব্যাংক, ব্লাড ব্যাংক সৃষ্টি করেছে। এ শিশু কিশোরদের মধ্যে চৌকসদের অস্ত্র, ট্রেনিং, মনস্তাত্ত্বিক ধোলাই এবং অর্থ দিয়ে জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে নিয়োগ ভারতীয়দেরই কুকীর্তি। (এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা)। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বৎসরে বাংলাদেশ হইতে তিন লক্ষাধিক নারী ও শিশু ভারতে পাচার হইয়াছে। তবে বিভিন্ন এনজিওর হিসাব মতে, পাচারকৃত নারী ও শিশুর সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, পৃ ২০-১৯)।
কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রসন : কাশ্মীর মুসলমান সংখ্যাধিক্য রাজ্য। সে হিসেবে দেশ বিভাগের সময় এটি পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে নেহেরু সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে দখল করে ভূস্বর্গ কাশ্মীর (সূত্র : এম.এ. মোহাইমেন : ইতিহাসের আলোকে দেশবিভাগ, পাইওনিয়ার পাবলিকেশন্স, মতিঝিল ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪, পৃ ২২২)। তখন থেকে বিগত সাত দশক ধরে ভারত কাশ্মীরের মুসলিম জনতার উপর দানবীয় জঙ্গি সন্ত্রাস চালিয়ে বিজয় উল্লম্ফন করছে।
ভারতীয় বাহিনী ২৬ বছরে ৯৪ হাজার কাশ্মীরি মুসলমানকে হত্যা করেছে। কাশ্মীর গণমাধ্যমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯৪ হাজার ২৯০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে ভারতীয় বাহিনীর হাতে। এদের মধ্যে ৭ হাজার ৩৮ জন মারা গেছে ভারতীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস দীর্ঘ গবেষণার পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ওই হত্যাকা-ের কারণে ২২ হাজার ৮০৬ জন নারী বিধবা এবং ১০ লাখ ৭ হাজার ৫৪৫ জন শিশু এতিম হয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতীয় বাহিনী ১০ হাজার ১৬৭ জন নারীকে লাঞ্ছিত করেছে এবং প্রায় ১০ লাখ বাসাবাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দীর্ঘ ২৭ বছর সময়ে প্রায় ৮ হাজার নিরাপরাধ মানুষ ভারতীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে গেছে (সূত্র : বাংলামেইল : ১১ এপ্রিল ২০১৬)। এর আগে ২০১০ সালে লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-এর জরিপ অনুযায়ী, ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ২ লাখ ১৪ হাজার ইয়াতিম শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে (সূত্র : আনাদলু সংবাদ সংস্থা থেকে দৈনিক নয়াদিগন্ত, ঢাকা, ২৪ মে ২০১৫, পৃ ৫)।
১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মানুষ স্রেফ উধাও হয়ে গিয়েছে কাশ্মীর থেকে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দিকে। বারে বারে অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া সংঘর্ষের নাম করে এঁদের অনেককেই মেরে ফেলেছে নিরাপত্তা বাহিনী। একটি ক্ষেত্রেও তদন্ত হয়নি, কেউ দোষী সাব্যস্তও হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনকে (আফস্পা) ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে সেনাবাহিনী। উপত্যকার মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, তাদের সাজা দেবে কে? নিজের দেশের মানুষকে দমাতে কোনো শান্তিকামী রাষ্ট্র এই পথ নিতে পারে? হাজার হাজার মানুষকে জেলে পুরে, কণ্ঠরোধ করে, তাদের বুলেটের মালা পরিয়ে নিরুদ্দেশের কফিনে ভরে দিতে পারে? গণতন্ত্র এভাবেই তার দায়িত্ব পালন করবে? এই প্রশ্ন দেশের ‘নিরুপদ্রব’ অংশের মানুষজন তুললে তাঁরাও দেশদ্রোহী হয়ে যাবেন নিশ্চয় (সূত্র : তাপস সিংহ; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ২৭ জুলাই ২০১৬)।
সন্ত্রাসে শীর্ষে ভারত : ২০০৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে পরিবেশিত তথ্যে দেখা যায়, বিশে^ খুনের ঘটনায় শীর্ষে ভারত এবং ধর্ষণে তৃতীয় ভারত, দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে ২০০৭-২০০৮ বছরে খুন ও ধর্ষণসহ ৫০ লাখ ২৬ হাজারের বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৩২ হাজার ৭১৯টি খুনের ঘটনা নথিভুক্ত এবং ১৮ হাজার ৩৫৯টি ধর্ষণের ঘটনা (সূত্র : দৈনিক যায়যায়দিন, লাভরোড, তেজগাঁও ঢাকা, ০৩ জুন ২০০৮, পৃ ৮)।
আইএস : জঙ্গি সংগঠন আইএস ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি। এটা এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয় (সূত্র : আমাদের সময়. কম, ১৯ নভেম্বর ২০১৫, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ঢাকা; ১৪ জুলাই ২০১৬)। কিউবার জননন্দিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, আইএসআইএল সৃষ্টির পেছনে রয়েছে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইল। ক্যাস্ত্রো বলেন, আইএসআইএল সৃষ্টির জন্য ইসরাইলের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ও আমেরিকার যুদ্ধবাজ সিনেটর জন ম্যাককেইন ষড়যন্ত্র পাকিয়েছেন। ক্যাস্ত্রো তার নিবন্ধে পরিষ্কার করে বলেছেন, জন ম্যাককেইন হচ্ছেন ইসরাইলের নিঃশর্ত মিত্র এবং মোসাদের সঙ্গে গোপন পরিকল্পনায় আইএসআইএস সৃষ্টি করা হয় (সূত্র : ভোরের ডাক, ১৭ জুলাই ২০১৬)। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহম্মাদ বলেছেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও অন্যান্য ইসলামী জঙ্গি সংগঠন সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ইসরাইল। তিনি আরো বলেন, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার আগে বিশ্বে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বলে কিছু ছিল না। তখন মাত্র দুটি সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল এবং দুটিই ছিল ইহুদিদের (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ১৬ নভেম্বর ২০১৫)। আর এই ইহুদিবাদী জঙ্গি সংগঠন আইএস সন্ত্রাসীদের অর্থ ও বিস্ফোরকের প্রধান যোগানদাতা হচ্ছে ভারত। আইএস-কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রসদ সরবরাহ করার সঙ্গে জড়িত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭টি (সূত্র : লন্ডনবিডি নিউজ ২৪.কম, ১৮ নিউ রোড, লন্ডন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬; বিনোদন.কম, ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)।
পররাজ্য গ্রাসকারী ভারত : কলকাতার বিশিষ্ট গবেষক, চিন্তাবিদ শ্রী অতুল্য ঘোষ বলেন, ইংরেজ যাবার সময় শুধু ভারতবর্ষ দুভাগ করে গেল, তা নয়, বহুভাগে ভাগ করে গেল। ভারতবর্ষ দ্বিখ-িত হয়েছে স্বাধীনতার জন্য, এটা ভুল। কেবল হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান হয়নি। ২৮১টি নেটিভ স্টেটস যা প্রিভি পাস পেত, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজত্ব অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ডের চুক্তির জন্য তারা সব স্বাধীন হয়। অর্থাৎ দেশীয় রাজ্য ২৮১, হিন্দুস্তান ১, পাকিস্তান ১; মোট ২৮৩। এইভাবে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়। এছাড়া ফরাসি অধিকৃত ও পর্তুগিজ অধিকৃত দুটি রাজ্য ছিল। প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষ ২৮৫ খ-ে বিভক্ত হয় (সূত্র : সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ (১৮৮৫-১৯৮৫) সংখ্যা, পৃ ১৩০; উদ্ধৃতি : গোলাম আহমাদ মোর্তজা : এ এক অন্য ইতিহাস, বিশ^বঙ্গীয় প্রকাশন, মেমারি, বর্ধমান, প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ২০০০, পৃ ২৫৯)। তিনি আরো লিখেছেন, ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আগে দেশীয় রাজাদের ডেকে বলেছিলেন যে, তারা প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীন, ভারত সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজ ভারত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই তারা স্বাধীন (সূত্র : ওই, পৃ ২৬০)।
এইসব স্বাধীন রাজা, নবাব ও শাসকদের সংখ্যা ছিল প্রায় সাতশ। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ এক এক করে গ্রাস করে নিয়েছিল অনেককে। ১৯৪৭ সালে তাদের চলে যাওয়ার প্রাক্কালে তখনো অস্তিত্ব ছিল ২৮০টিরও বেশি ওই ধরনের রাজ্য বা এলাকার। ওগুলোকে বলা হতো করদ বা মিত্র রাজ্য। এ সম্বন্ধে নতুন বাঙ্গালা অভিধানের (কলকাতা) ১৪২৬ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতিটি উল্লেখযোগ্য : করদ ও মিত্ররাজ্য-ভারতের ইংরাজাধীন সামন্ত রাজ্য। এই সমস্ত রাজ্যের রাজাগণ স্বয়ং নিজ নিজ আইন অনুসারে রাজ্য শাসন করতেন। ইংরাজ সরকারকে এদের কর দিতে হতো; একজন করে ইংরাজ রাজকর্মচারী এদের সভায় থাকতেন। ভারতে কমবেশি সাতশ ওইরূপ রাজ্য ছিল। নি¤েœ প্রধান প্রধান কতগুলোর নাম দেয়া হলো; যথাÑ ভূপাল, ইন্দোর, ময়ুরভঞ্জ, বরোদা, ছোটো উদয়পুর, জয়পুর, গোয়ালিয়র, হায়দারাবাদ, কাশ্মীর, ত্রিবাঙ্কুর, মহিশুর, কপূরতলা, পাতিয়ালা, ভরতপুর, উদয়পুর, যোধপুর, বিকানির, সিকিম, কুচবিহার, মণিপুর, ত্রিপুরা, কাশি, আলোয়ার, দেওয়াস। এসব রাজ্যের আর পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই।’ ২৮৩টি অংশকে ভারত ছলে বলে কৌশলে ও চাণক্য নীতিতে দখল করে (সূত্র : গোলাম আহমাদ মোর্তজা : এ এক অন্য ইতিহাস, বিশ^বঙ্গীয় প্রকাশন, মেমারি, বর্ধমান, প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ২০০০, পৃ ২৬০)।  শ্রী অতুল্য ঘোষ-এর ভাষায়, স্বাধীনোত্তর ভারতের আয়তন লক্ষাধিক বর্গমাইল বেড়েছে। কংগ্রেসের পক্ষে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অত্যন্ত ধৈর্য্য সাহসিকতা ও কুশলতার জন্য দেশীয় রাজ্যগুলো একে একে ভারতভুক্ত হয় (সূত্র : সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ সংখ্যা, পৃ ১৩০; উদ্ধৃতি : গোলাম আহমাদ মোর্তজা : এ এক অন্য ইতিহাস, পৃ ২৬০-২৬১)।
ত্রিবাংকুর, যোধপুর, ভূপাল হুমকি, প্রতারণা, শঠতার মাধ্যমে ভারত দখল করে (সূত্র : আরিফুল হক : হায়দারাবাদ ট্র্যাজেডি ও আজকের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোঅপারেটিভ বুক সোসাইটি, মতিঝিল ঢাকা, প্রথম মুদ্রণ ২০০১,পৃ ২৬-২৭)।  জুনাগড় ও মানভেদার-এর নওয়াব ছিলেন মুসলিম। এদুটি রাজ্যের শাসনকর্তারা নিজেদের রাজ্যকে পাকিস্তানভুক্তির ঘোষণা দিলে নেহেরু সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ভারতভুক্ত করে নেয়। পাকিস্তান সদ্য গঠিত রাষ্ট্র যার সেনাবাহিনী ছিল তখনও অসংগঠিত দুর্বল। তাই জুনাগড় ও মানভেদার দখল করে নিলেও পাকিস্তান প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছুই করতে পারল না (সূত্র : এম.এ. মোহাইমেন : ইতিহাসের আলোকে দেশবিভাগ, পাইওনিয়ার পাবলিকেশন্স, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪, পৃ ২২১)।
১৯৪৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাত্র পাঁচদিনের যুদ্ধে মিলিটারি অপারেশন চালিয়ে ভারত দখল করে স্বাধীন মুসলিম শাসিত রাষ্ট্র হায়দারাবাদ (সূত্র : আরিফুল হক : হায়দারাবাদ ট্র্যাজেডি ও আজকের বাংলাদেশ, পৃ ৩১)। এই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর হাতে শহিদ হয় ৭০ হাজার হায়াদারাবাদী মুসলিম। ভারতীয়দের কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় ৩০ হাজার মুসলিম মা বোন (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, উপসম্পাদকীয়, ২৯ জানুয়ারি, ২০১২, পৃ ৬)। বুকার বিজয়ী লেখক, মানবাধিকার ও ভারতীয় বুদ্ধিজীবী অরন্ধুতী রায় বলেছেন, ভারতে ১৩ কোটি মুসলমানের বাস। হিন্দু ফ্যাসিবাদীরা তাদেরকে বৈধ শিকার বলে গণ্য করে (সূত্র : অরন্ধুতী রায়, ঘাতকের পদধ্বনি; উদ্ধৃতি : মুহাম্মদ সিদ্দিক, ষড়যন্ত্রের কবলে উপমহাদেশের মুসলমান, প্রফেসর পাবলিকেশন্স, একুশে বইমেলা ২০০৬, পৃ ১৮৬)। [চলবে]
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন