বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাস পুড়িয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানো আ.লীগের ওল্ড গেইম

বিএফইউজের সম্মেলনে ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মদদে বাস পোড়ানোর পুরনো খেলার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কতগুলো বাস পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা, কে বা কারা। সেটাকে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিএনপির ওপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। সেই আগের খেলা, সেই ওল্ড গেইম। তারা তাদের এজেন্টদের দিয়ে এই সমস্ত নাশকতামূলক কাজ করবে আর সেটা বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দেবে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ যেন এই ধরনের ফাঁদের মধ্যে কেউ যেন পা না দেয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে আন্দোলন করতে হবে, জনগণকে সঙ্গে আমাদেরকে এগুতে হবে। এভাবে নাশকতা যারা করছে তাদের সঙ্গে কোনো মতেই বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি আজকেও তীব্র ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং যারা এ কাজের সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি।

সাংবাদিকদের ‘দুরাবস্থার’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জানি যে আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। অধিকাংশ সাংবাদিক ভাইদের কাজ নেই, তারা কোথাও চাকরি পাচ্ছেন না অথবা চাকরি থাকলেও তাদের সেখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে, তাদেরকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। কি নিদারুণ কষ্টের মধ্যে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছেন। কিন্তু এটা শুধু আপনারা নন। সারা দেশের মানুষ আজকে এই কষ্টে পড়েছেন। যারাই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, যারাই গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারাই আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে তারাই আজকে নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং তাদেরকে কোনো কারণ ছাড়াই যখন তখন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে আইনগুলো তৈরি হচ্ছে একটার পর একটা। কিন্তু আমরা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না, সাংবাদিক ভাইয়েরাও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, অন্যান্য আইনগুলো সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের বিরুদ্ধে গেছে। কিন্তু আজকে দেখুন কী দুর্ভাগ্য যে, সেখানে আমরা সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না, সেখানে সরকারকে বাধ্য করতে পারছি না! বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রোকেনের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগঠনের মহাসচিব এম আবদুল্লাহসহ বিভিন্ন জেলা ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এসময় সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম।

এর পরপরই ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপ-নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং পুনঃভোটের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার থাকলে কখনও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন চাই। সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন। অন্যথায় প্রত্যেকটি স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদী সরকার যেভাবে বিদায় হয়েছে আপনাদেরকে জনগণের উত্তাল আন্দোলনের বিদায় হতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার, একটা একনায়ক সরকার, একটা ফ্যাসিবাদী সরকার অধিষ্ঠিত হয়ে আছে। আমাদের কথা নয়, আমেরিকান ৭/১০ জন সেনেটর চিঠি দিয়েছে সিনেট প্রধানের কাছে, বাংলাদেশে আজকে বেআইনিভাবে বিনা বিচারের প্রায় ৪০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে।
বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখের বেশি মামলার কথাও উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কারণ একটাই, বিরোধী দলকে এখান থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এখানে ভিন্নমত রাখা যাবে না। আজকে পত্র-পত্রিকা কিছু লিখতে পারে না, সাংবাদিকদের জেল দিয়ে দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের হত্যা করছেন।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা নয়, পুরো গণতন্ত্রকে তারা ধবংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের বংশবদ অযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যতগুলো নির্বাচন এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রত্যেকটা নির্বাচন তাদের পক্ষে লুট করে নিয়ে গেছে এবং জনগণের আস্থা এই নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ক্রমেই শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে এত সন্ত্রাস, এত কারচুপি, এত ভয়ভীতি প্রদর্শন করার পরেও এখানে ১৪ শতাংশের বেশি ভোট তারা (নির্বাচন কমিশন) দেখাতে পারেনি।

বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেখার আছে বলে মন্তব্যের জন্য সিইসি কে এম নূরুল হুদার সমালোচনাও করেন ফখরুল। তিনি বলেন, কী হাস্যকর, কী অদ্ভুত কথা এবং কী লজ্জার কথা। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ৫ দিনেও ফলাফল ঘোষণা করতে পারে না, এটা আমরা ৫ মিনিটে পারি। এটা তো পারবেন এজন্যই যে, আপনাদের ফলাফল আগে থেকে তৈরি করা থাকে। এই নির্বাচন কমিশন তাদের লজ্জা-শরমও করে না, তাদের হায়া বলে কিছু নেই। যদি থাকত, অনেক আগেই তারা পদত্যাগ করে চলে যেত। এই পরস্থিতি বদলাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন