বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীনের নেতৃত্বে এশিয়ার ১৫ দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, নেই ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৭ পিএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের চলতি শীর্ষ বৈঠকের শেষ দিনে সিঙ্গাপুরে রোববার ১৫টি দেশের মধ্যে বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিটি বিশ্ব বাণিজ্যে মৌলিক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আসিয়ান জোটের ১০টি দেশ ছাড়াও এই চুক্তিতে সই করছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। চুক্তিটিতে ভারতের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও গত বছর তারা আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে।

‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশীপ’ (আরসিইপি) শীর্ষক চুক্তি জিডিপির হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য চুক্তি বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এই জোটের অর্থনীতির আয়তন বিশ্বের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ। ফলে এই চুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবাধ বাণিজ্য এলাকা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল রয়েছে সেটি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও এশিয়ার নতুন এই বাণিজ্য অঞ্চলটির পরিধি বড় হবে। ব্যবসাবিষয়ক পরামর্শক সংস্থা আইএইচএস মারকিটের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাসকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এই অঞ্চলে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের উদারীকরণে চুক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। কারণ, তার মতে আরসিইপি বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হবে।

জানা যায়, ২০১২ সালে প্রথম এই চুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারপর আট বছর ধরে চীনের প্রবল উৎসাহ ও উদ্যোগে এটি বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্যের এই চুক্তিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের পথে একটি অভ্যুত্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে তাদের এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছে থাইল্যান্ডের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক ব্যাংকক পোস্ট। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাণিজ্যের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ক্যাপ্রিকে উদ্ধৃত করে ব্যাংকক পোস্ট বলেছে, এই জোট চীনকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে মুক্ত বাণিজ্য থেকে আমেরিকা যেভাবে পিছিয়েছে, সেই শূন্যতা দখল করছে চীন। ২০১৬ সালে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে টিপিপি নামে যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটি থেকে আমেরিকাকে বের করে নিয়ে যান। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, নতুন চুক্তিটি হলে ভবিষ্যতে এশিয়ায় বাণিজ্যের নীতি এবং শর্ত নিয়ন্ত্রণ করবে চীন।

গবেষণা সংস্থা কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ইভান ফেইগেনবমকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটনের গবেষণাভিত্তিক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, এশিয়ায় প্রধান দুই বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র নেই, ফলে এশিয়ায় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের শর্ত ও মান নির্ধারণের ক্ষমতার হাতবদল হবে এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে সে মতোই ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে। দ্য ডিপ্লোম্যাটের সাবেক সম্পাদক অঙ্কিত পাণ্ডা টুইট করেছেন, আরসিইপি চুক্তি যে হচ্ছে তাতে ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট যে এশিয়ায় বড় ঘটনা ঘটছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে শামিল হোক বা না হোক আরো এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

জাপান-অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও চীনা আধিপত্য নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। তার পরও আরইসিপিতে যোগ দিতে তারা এখন আর পিছপা তো হচ্ছেই না বরং সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে এ নিয়ে উৎসাহ বাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী মোহামেদ আজমিন আলী বলেছেন, ‘আট বছর ধরে রক্ত, ঘাম আর চোখের পানি ঝরিয়ে আজ রোববার আরসিইপি সইয়ের জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছি।’

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, করোনা সংক্রমণের পরিণতিতে আসিয়ান জোটের দেশগুলো যে চরম অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই চুক্তিতে সই করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নুগেইন জুয়ান ফুচ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি খুশি যে আট বছর জটিল আলোচনা শেষে, আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আরসিইপি আলোচনা শেষ করি।’ শুল্ক কমাতে এবং ব্লকের মধ্যে পরিষেবা বাণিজ্য উন্মুক্ত করার চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এটি এখন তাদের বদলে চীনের নেতৃত্বে বিকল্প বাণিজ্য উদ্যোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

সস্তা চীনা পণ্য দেশের বাজারে প্রবেশ করবে এই উদ্বেগে নিয়ে ভারত গত বছর এই চুক্তি থেকে সরে যায় এবং রোববার চুক্তি স্বাক্ষরে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানেও তারা যোগদান করা থেকে বিরত ছিল। তবে তারা চাইলে পরবর্তীতে এই জোটে যোগদান করতে পারবে। তবে ভারত না থাকলেও এই চুক্তির সুবিধা ভোগ করবে ২১০ কোটি মানুষ। এর আওতায় প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিয়ম অনুসরন না করেও ব্লকের মধ্যে যে কোনও জায়গায় পণ্য রফতানি করার মাধ্যমে ব্যয় সংকোচন এবং দ্রুত পরিবহন করা যাবে। সূত্র: নিউজ ১৮, বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
saif ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৪:০৪ পিএম says : 0
আমাদেরদেশকে কি আমন্ত্রন জানানো হয়নি নাকি বাংলাদেশ জায়নি। সেটা নিয়ে কিছু পাইনি।
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০০ পিএম says : 0
এশিয়ার মেম্বার কম্ভোডিয়া ইন্দোনেশিয়া লাউন্স থাইলেন্ড পিলিপাইন মায়ানমার ব্রনাই সিঙ্গাপুর মালোশিয়া বুটান এরাই চীনের নেতৃত্ব বানিজ‍্য চুক্তির সাক্ষর দেশ। ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ নাই। অন্য কোন দেশ চায়লে প্রবেশ করতে পারবে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বানিজ‍্যের বাস্তবতা কি করনীয় রাষ্ট্রের নীতিমালায় পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরাট দায়িত্ব। বিশ্বের বিশালাকার অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের বৈদেশীক রিজার্ভের মজবুত কাটামো শক্তিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্টা করতে চাইলে চীনের বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতার মুলক বিশ্ব অর্থনীতির মাঠে চুখ কান খোলা রেখেই বুদ্ধিদীপ্ত পররাষ্ট্রনীতি বিচক্ষন বাংলাদেশ কে এগিয়ে যেতেই হবে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশালাকার ব‍্যাক্তিত্ব উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংগ্রামে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের বিশ্ব বানিজ‍্য ফোরামের এশিয়াই বাংলাদেশের নাম থাকা চায়। থাকাটাই জরুরী ছিল।
Total Reply(0)
AHM Babar Siddiui ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২২ পিএম says : 0
15-desher list dilen na ta
Total Reply(0)
নজরুল ইসলাম ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩৫ পিএম says : 0
বাংলাদেশের উচিত চীনের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্কে যুক্ত হওয়া এবং নিজের দেশের কিভাবে ভালো হবে সে ব্যপারে উদ্যোগী হওয়া
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন