শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সচিবালয়ে এসি জটিলতা

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় দুইশ’ আবেদন এসি চালাতেই ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ যাচ্ছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে সচিবালয়ে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক অবকাঠামো পরিবর্তন না করে নতুন এসি ও বৈদ্যুতিক কেটলি সংযোজন করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কক্ষে এসি বসানোর জন্য প্রায় প্রতিদিন আবেদন করছেন গণপূর্ত অধিদফতরে। ইতোমধ্যে প্রায় দুইশ’ আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোন কোন সরঞ্জাম অফিসে ব্যবহারের জন্য পাবেন, তা নতুন করে নির্ধারণের পর সচিবালয়ে নতুন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বসাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঢাকায় প্রতিদিন যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ৭০ শতাংশই যাচ্ছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালাতে। দুই টনের একটি এসি চালাতে ঘণ্টায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, সেই বিদ্যুৎ দিয়ে ৩০-৩৫টি ফ্যান চালানো যায়। কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক অবকাঠামো না বদলে নতুন এসি ও বৈদ্যুতিক কেটলি সংযোজন করলে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাধিকারের এসি সংযোজন করতে পারছেন না গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। অথচ প্রাধিকারের নতুন নিয়মে প্রায় প্রতিদিনই কর্মকর্তারা তাদের কক্ষে এসি বসানোর আবেদন করছেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ইনকিলাবকে বলেন, প্রাধিকার অর্থ এই না যে তাকে এটি দিতেই হবে। আমাদের বিদ্যুতের অবকাঠামোগত অবস্থা বিবেচনা করেই যদি দেওয়া যায় তখন দিতে হবে। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো উন্নয়ন করে দেয়া হবে। আর এখনই যদি সেটি না করা যায় তাহলে দেবে না।
জানা গেছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদফতর এর অধীন ইডেনভবন গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা এর অফিস বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১৮/সি নং সেডে অবস্থিত। জানা গেছে, বাংলাদেশ সচিবালয় মোট ১৭.০০ একর জমির উপর অবস্থিত। সচিবালয়ের সকল অফিস ভবন, কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল ভবন, রাস্তা, ড্রেন এর যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ, নির্মাণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজসহ সকল মেরামত কাজের সেবা প্রদান করে আসছে ইডেনভবন গণপূর্ত বিভাগ। এছাড়া অত্র বিভাগের অধীন তিনজন কেয়ারটেকারের আওতায় ১৬৩ জন এমএলএসএস (ফরাশ) ও ২১৬ জন সুইপার বাংলাদেশ সচিবালয় ও ১২-তলা পরিবহন পুলভবন (৬-১২ তলা) এর কেয়ারটেকিং এর দাফতরিক কাজে নিয়োজিত আছেন। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, মন্ত্রী ও সচিবদের অফিসসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দফতরসমূহ বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর দেখভাল করে আসছে ইডেনভবন গণর্পূত বিভাগ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৫ মার্চ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, অধিদফতর, দফতর ও পরিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস আসবাব, অফিস সরঞ্জাম, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ এবং সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন প্রাপ্যতার প্রাধিকার পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। এতদিন মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম-সচিবরা তাদের কক্ষে এসি পেলেও নতুন প্রাধিকারের তালিকায় উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিবদের কক্ষে একটি করে এসি ও বৈদ্যুতিক কেটলি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীর দাফতরিক কার্যালয়ও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এবং তাদের কক্ষে একটি করে বৈদ্যুতিক কেটলি ব্যবহারের প্রাধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গণপূর্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা সচিবালয়ের এখন যে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো, তাতে নতুন করে বড় সংখ্যায় এসি বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যুক্ত করা নিরাপদ হবে না। স্থিতিশীল ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে নতুন সাব-স্টেশন বসাতে হবে, বৈদ্যুতিক তার আপগ্রেড করতে হবে, নতুন বোর্ড বসাতে হবে। নতুন করে সাব-স্টেশন না করলে অন্তত সেসবের ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তন করতে হবে। এসব ঠিকঠাক না করে নতুন এসি সংযোজন ও কেটলি চালানোর ব্যবস্থা করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ কারণে অনেক আবেদন পেলেও আমরা দিতে পারছি না। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে কেউ কেউ নিজের কক্ষে এসি লাগাতে তদবিরও করাচ্ছেন। কিন্তু তারা বুঝতে চাইছেন না এভাবে এসি লাগালে পুরো সচিবালয়ের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।
অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গণপূর্ত অধিদফতরকে না জানিয়ে নিজেদের মত করে তাদের আওতাধীন ফ্লোরগুলোর ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব করতে গিয়ে তারা নিজেদের মতো করে বৈদ্যুতিক তার সংযোজন করেছেন। গণপূর্তের সঙ্গে আলাপ না করে এসব তার সংযোজন করায় সেগুলোও মাঝেমধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি করছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পূর্ব-পশ্চিম আরএমইউ থেকে ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক মূল লাইন সচিবালয়ে টানা হলেও অনেক আগেই তাতে বেশি লোড পড়েছে। দিন দিন এই লোড বাড়ছে। ফলে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চলে যায়।
সচিবালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডিপিডিসি একটি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন বসাতে যাচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ অন্যান্য অবকাঠামো না বদলালে এর কোনো সুবিধা মিলবে না বলে পণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য। একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ৭০ শতাংশই যাচ্ছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালাতে। দুই টনের একটি এসি চালাতে ঘণ্টায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, সেই বিদ্যুৎ দিয়ে ৩০-৩৫টি ফ্যান চালানো যায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১) মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে প্রাধিকার নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে সেটি সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্ব। বিদ্যমান অবস্থায় নতুন এসি সংযোজন করলে ঝামেলা হবে, গণপূর্ত যদি এটা ফিল করে তবে তারা অথরিটিকে জানাবে। এরপর এর একটি সমাধানে যা যা করা দরকার সেগুলো করে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। গণপূর্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন। এই সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় যেভাবে যে সিদ্ধান্ত দেবে তারা তা বাস্তবায়ন করবেন।
ইডেনভবন গণর্পূত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এতদিন মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম-সচিবরা তাদের কক্ষে এসি পেলেও নতুন প্রাধিকারের তালিকায় উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিবদের কক্ষে একটি করে এসি ও বৈদ্যুতিক কেটলি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা এগুলো সমাধানের জন্য কাজ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন