শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করায় সউদীকে স্বাগত ইসরায়েলের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩৯ পিএম

মিশরের রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সউদী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল রবিবার (১৫ নভেম্বর) টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে রিয়াদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
টুইটে বলা হয়েছে, ধর্মের অপব্যবহার করে উস্কানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের বিরুদ্ধে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসরায়েল খুশি। আমাদের এমন একটি আলোচনার খুবই প্রয়োজন যা সহনশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানাবে।
সউদী কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্স (সিএসএস) কর্তৃক মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্তির পর রবিবার এ টুইট করে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার সউদী কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্সের বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার জন্য ব্রাদারহুডকে দায়ী করা হয়।
ব্রাদারহুডের প্রতি সউদী আরবের দমনমূলক মনোভাবকে বরাবরই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ইসরায়েল। কেননা, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ব্রাদারহুডের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ব্রাদারহুডের পথ চলা শুরু ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে। সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ায় তরুণ হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে সংগঠনটি গড়ে ওঠে। শুরুতে 'ইখওয়ানুল মুসলিমিন' নামে এর যাত্রা শুরু হয়। সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ ফাহমি আন-নুকরাশি মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিলুপ্ত করার নির্দেশ জারি করেন। এর পরের বছরের ডিসেম্বরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্না সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
১৯৫৪ সালে আরব জাতীয়তাবাদী নেতা গামাল আবদুন-নাসেরের বিপ্লবের প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থন জানায়। কিন্তু মতপার্থক্য ও অবিশ্বাসের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে খুব দ্রুতই ভাঙন সৃষ্টি হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট নাসেরও ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চালান। গামাল আবদুন নাসের এক হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর দলটিকে আবারো নিষিদ্ধ করা হয় মিসরে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নাসেরের শাসনামলে হাজার হাজার ব্রাদারহুড নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়।
আনোয়ার সাদাত ১৯৭১ সালে মিসরের ক্ষমতায় এলে তার সরকারের সঙ্গেও তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে ব্রাদারহুডের। পরবর্তী সময়ে আনোয়ার সাদাত মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে দলটির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালে আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করলে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় ব্রাদারহুড। তাই ১৯৮১ সালে এক সামরিক কুচকাওয়াজ চলার সময় টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই তরুণ সেনা কর্মকর্তা খালিদ ইস্তাম্বুলি প্রেসিডেন্ট সাদাতকে গুলি করে হত্যা করেন। খালিদ ইস্তাম্বুলি মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ব্রাদারহুড সরকারের স্বীকৃতি পায় ১৯৮৪ সালে এসে। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক তখন এটিকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। তার পতনের পরই ব্রাদারহুড রাজনৈতিক স্বীকৃতি পায়। ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করলে এর বিরোধিতা করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সংগঠনটি। আর আস্তে আস্তে মিসরের রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এক পর্যায়ে দেশটির সবচেয়ে পুরাতন এবং বড় বিরোধী দলে পরিণত হয় ব্রাদারহুড। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাণের এই সংগঠন মিসরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই নানা ধরনের সংগঠন পরিচালনা বাড়তে থাকে ব্রাদারহুডের নামে।
এত কিছুর পরও ২০১০ সাল পর্যন্ত মিসরে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে অন্য ইসলামিক দলের সঙ্গে ব্রাদারহুডও নিষিদ্ধই ছিল। তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই তারা সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। ২০১৩ সালে ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দায়িত্ব গ্রহণের পর মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ব্যাপক দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় শুরু করেন। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Jack Ali ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৪ পিএম says : 0
May Allah's curse on this Prince Ibless.. O'Allah wipe him and his associates from Beloved Saudi Arabia where our Beloved Prophet [SAW] is sleeping in the Grave. O'Allah appoint a muslim leader in Saudi Arabia who will rule the way our Prophet [SAW] ruled [QUR'AN]
Total Reply(0)
Mamun ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৬ পিএম says : 1
চোরে চোরে মাসতাতু ভাই
Total Reply(0)
Mamun ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৭ পিএম says : 0
চোরে চোরে মাসতাতু ভাই
Total Reply(0)
Jubayer ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১১ পিএম says : 0
Arabian badsha monafekh tai kaferer sathe friendship kortese
Total Reply(0)
Tarikul Islam ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৪৫ পিএম says : 0
মুসলিম ব্রাদারহুড ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে তাই ওদের জন্য হুমকি
Total Reply(0)
Boni Amin ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৪৫ পিএম says : 0
ধ্বংসাত্নক ইসরায়েলের মুখে সহনশীলতার বানি বেমানান
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন