শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৫০ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি’র একমাত্র বাস ডিপোটি করোনা সংকট কাটিয়ে পুনরায় লাভের ধারায় ফিরে এলেও প্রয়োজনীয় বাসের অভাবে অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রুটে যাত্রীসেবা ব্যহত হচ্ছে। এ ডিপোটিতে ৭৮টি যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে ১৩টি বাতানুকুল সহ বর্তমানে সচল ৫৩টি। এসব সচল যানবাহনের মাধ্যমে দক্ষিনে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরের রংপুর পর্যন্ত দিবা-রাত্রী যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিপোটির মাসিক আয় প্রায় দেড় কোটি কাছে পৌছলেও নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের ফেরি সেতুর টোল বাবদ মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার মত গুনতে হচ্ছে ডিপোটিকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই লাভের গুড় পিপড়ায় খাবার মত অবস্থা। করোনা সংকটের প্রথম তিন মাস সব যানবাহন বন্ধ থাকা সহ আরো একমাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করায় সংস্থার বরিশাল বাস ডিপোটির আর্থিক ভীত ভেঙে পড়ে। সদর দপ্তর থেকে এক মাসের বেতন পরিষোধ সহ গত দু মাসে নিজস্ব আয় দিয়েই ডিপোটি বেতনÑভাতা পরিষোধ করছে। তবে এখনো বরিশাল ডিপোর চলমান বেশীরভাগ বাসই ১০Ñ১৫ বছরের পুরোনা হওয়ায় ঐসব গাড়ীতে আয় বাড়ছেনা। উপরন্তু পরিচালন ব্যায় ও মেরামত খরচও বেশী। 

এখনো প্রয়োজনীয় বাস না থাকায় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সাথে বরিশালের বাতানুকুল পর্যটক বাস সার্ভিস চালু করা যায়নি। অথচ ঢাকা থেকে নৌপথে প্রতিদিন শতশত পর্যটক বরিশালে পৌছে কুয়াকাটা যাবার লক্ষে মানসম্মত যাত্রীবাহী যানবাহনের খোজ করেন। এছাড়াও বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা বিভাগীয় সদরে ফেরিবিহীন সড়ক পথ চালু হলেও বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপো থেকে আজ পর্যন্ত কোন বাতানুকুল বাস সার্ভিস চালু করা যায়নি। অথচ প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ দাপ্তরিক সহ ব্যবসায়িক কাজে এ দুটি বিভাগীয় সদরে যাতায়াত করেন।
বর্তমানে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপো থেকে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের কাঠালবাড়ী পর্যন্ত বাতানুকুল বাস সার্ভিস ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কানসাট, সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ, কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে চট্টগ্রাম এবং খুলনা, যশোর ছাড়াও গোপালগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলছে। এছাড়াও বরিশাল থেকে পাথরঘাটা ও আমুয়া সহ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী বাসচলাচল করছে। তবে এখনো বেশীরভাগ গাড়ীই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মান সম্মত না হওয়ায় রাষ্টীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার বাসে ভ্রমনে যাত্রীদের অনেক দূর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধিনতার পরে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর-এর প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম বরিশালে বিআরটিসি’র বাস ডিপো চালু করা হয় ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারী। সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রী এম মনসুর আলী ও পানি সম্পদ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল ডিপোটির উদ্বোধন করেন। তখন বরিশাল থেকে ফরিদপুর হয়ে গোয়ালন্দঘাট ও বরিশালÑফরিদপুর রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। পরবর্তিকালে বরিশালÑমাদারীপুর রুটেও বাস সার্ভিস চালু করে সংস্থাটি। ১৯৮১সালে বরিশালÑপটুয়াখালী মহাসড়ক চালু হলে সংস্থাটি এরুটে মিনিবাস সার্ভিসও চালু করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যায় সংকোচন ও কথিত লোকাশন প্রতিহত করার নামে ১৯৮২’র শেষ দিকে এরশাদ সরকার বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোটি বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তিকালে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী এম মতিউর রহমানের প্রচেষ্টায় পুনরায় সংস্থাটির বরিশাল ডিপোটি চালু হয়। কিন্তু প্রযোজনীয় বাসের অভাবে তা চলছিল অনেকটা খুড়িয়ে। ১৯৮৯ সালে অবস্থা এতটাই করুন ছিল যে, শুধুমাত্র টায়ারের অভাবে এডিপোর কোন বাস রাস্তায় নামতে পারছিল না। বিষয়টি নিয়ে তখন দৈনিক ইনকিলাব-এ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সরকারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পুনরায় এডিপোটি কিছুটা প্রান ফিরে পায়। ১৯৯২ থেকে দেশব্যাপী বিআরটিসি সংস্কারের অংশ হিসেব বরিশাল ডিপোটিও নতুনভাবে সচল করা হয়।
এসব বিষয়ে বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোতে সদ্য যোগ দেয়া ডিজিএম-অপারেশন-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজী না হলেও এডিপোটির সার্বিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, সংস্থার সদর দফতরকে প্রতিটি রিভিউ মিটিং-এ সার্বিক অবস্থা অবহিত করা হয়। কতৃপক্ষ এডিপোর সার্বিক বিষয়ে সচেতন আছেন। এর উন্নয়নে সম্ভব সব পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন