বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লোহিত সাগর : বিশ্ব অর্থনীতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ ধমনী

রেড সি ডায়নামিক্স ৩

দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দশ বছর আগেও বিশ্বে শক্তি প্রদর্শনের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল লোহিত সাগর। বর্তমানে সেই লোহিত সাগর অঞ্চলে শক্তির এমন বৃহত্তর ও জটিল লড়াই বিশ্বের আর কোথাও নেই। কেন লোহিত সাগর অঞ্চল এত শক্তি ধরে রেখেছে, কারণগুলো তৃতীয় পর্বে তুলে ধরা হ’লঃ

যুক্তরাষ্ট্রে আগত বাইডেন প্রশাসনের জন্য এটি একটি জটিল এবং জরুরি নীতি নির্ধারণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আফ্রিকার ক্ষেত্রে আফ্রিকান ইউনিয়নের নেতৃত্বের অধীনে গড়ে ওঠা নিয়ম, নীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্যাক্স আফ্রিকানার, যা এই মহাদেশের ভঙ্গুর শান্তি ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে, সেটির ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভ‚মধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত সুয়েজ খাল থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত বাব আল মান্দাবের প্রণালি পর্যন্ত, লোহিত সাগর বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী। ইউরোপের সাথে বেশিরভাগ এশীয় বাণিজ্যসহ সমুদ্রবাহিত কার্গোর ১০ শতাংশের বেশি প্রতি বছর লোগিত সাগরের দিয়ে চলাচল করে। যেকোনও নৌবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পৌঁছতে চাইলে, লোহিত সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ চেকপয়েন্ট এবং এটি দৈবাত নয় যে, চীন তার প্রথম বিদেশী নৌ-ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে জিবুতিকে বেছে নিয়েছিল।

পনেরো বছর আগে, এডেন উপসাগর এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের উতপাতের ফলে আন্তর্জাতিক নৌ-পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল এবং লোহিত সাগরের নেতৃত্বটি সাম্রাজ্যবাদি উদ্দেশ্য ছাড়াই সেই অভিযানের সাথে যুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সংঘ ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাতে চলে গিয়েছিল, যাদের ‘অপারেশন আটলান্টা’ সম্মিলিত সুরক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে রোল মডেল। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীও দেশগুলোও সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। অপারেশন আটলান্টার সাফল্য পারস্য উপসাগর থেকে নীলনদের উপত্যকা পর্যন্ত এবং এডেন উপসাগর থেকে মিসর এবং লেভান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়লেও আঞ্চলিক দ্ব›দ্ব এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জটিল প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে। এখানে আঞ্চলিক শান্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বহু চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমটি হ’ল: এ অঞ্চলের সীমানাটি কোথায় এবং কোন দেশগুলোর জড়িত থাকা উচিত?

মাছ ধরা, প্রবাল প্রাচীরের ভঙ্গুর বাস্তু রক্ষা করা এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণের মতো প্রশ্নগুলোর একটি সেট উপক‚লবর্তী রাষ্ট্রগুলোর সাথে স্পষ্টভাবে সম্পর্কিত। সউদী আরবের ‘কাউন্সিল অফ আরব ও আফ্রিকান লিটোরালাল স্টেটস অফ রেড সি এন্ড গাল্ফ অফ এডেন’ ইসরাইল ব্যাতিত বাকি আটটি দেশ জিবুতি, মিসর, ইরিত্রিয়া, জর্ডান, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন পাশাপাশি খোদ সউদী আরবকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সমস্যাটি হচ্ছে, যেসব দেশ উপক‚লবর্তী নয়, অথচ লোহিত সাগরের সাথে যাদের ব্যাপক আকারের অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা বা ঐতিহাসিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে, তাদেরও যে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সদস্য হওয়া দরকার। আফ্রিকান ইউনিয়ন ‘লোহিত সাগর অঞ্চল’ আখ্যাটি আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দেশগুলোর দলকে বোঝাতে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, যার মধ্যে ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণ সুদান রয়েছে। উভয় দেশই লোহিত সাগরে তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য কেনিয়ার বন্দরের উপর নির্ভরশীল, যার এ অঞ্চল জুড়ে এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে প্রতিরক্ষামূলক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্কেরও একই স্বার্থ রয়েছে এবং উভয়ই দেশই লোহিত সাগরের বন্দরগুলোতে বিনিয়োগ করেছে। জাঞ্জিবার থেকে সোয়াহিলি উপক‚ল পর্যন্ত ওমানের সাথে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। আরও বিতর্কিতভাবে কাতার ও ইরানেরও লোহিত সাগরের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। লোহিত সাগরে আগ্রহী বিশ্বব্যাপী খেলোয়াড়দের এ তালিকাটি ইউরোপ, এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন