বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চায়ের বাজার চাঙ্গা

চাহিদার মাপকাঠি রঙ-ঘ্রাণ-স্বাদে উৎকর্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের আমেজ অগ্রহায়ণে এসে আরেকটু বেড়েছে। সেই সঙ্গে একটু উষ্ণতার ছোঁয়া পেতে গরম কাপে চায়ের চুমুকের চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রায় পৌনে একশ’ বছরের প্রাচীন দেশের প্রথম ও প্রধান (নতুন দ্বিতীয়টি শ্রীমঙ্গলে) আন্তর্জাতিক চা নিলাম ট্রেডে গেল মঙ্গলবার চায়ের বাজার ছিল বেশ তেজী।

বাজার সূত্রগুলো গতকাল বুধবার জানায়, নিলাম ট্রেডে ভালো মানের চা প্রতিকেজি ৩শ’ থেকে সোয়া ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আংশিক মানহীন চা পাতা প্রতিকেজি মাত্র ১২৭ থেকে ১৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। চট্টগ্রাম নিলাম ট্রেড শুধুই নয়; আন্তর্জাতিক বাজারে গুণেমানে চায়ের উৎকর্ষতা বিবেচনার মাপকাঠি এবং কদর তিনটি কারণে। তা হলো- ‘রঙ-ঘ্রাণ-স্বাদ’। দেশে-বিদেশে উপযুক্ত দর আর কদর পেতে উক্ত তিনটি ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ চা শিল্পকে প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরোদমে আধুনিকতায় ঢেলে সাজিয়েছে। আয় করছে শত শত কোটি ডলার।

মঙ্গলবার মৌসুমের ২৫তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলাম ট্রেডে ৫০ হাজার ৬৭৯ ব্যাগ পাতা চা এবং ৮ হাজার ৭৪৩ ব্যাগ গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়া (অফার) হয়। এরমধ্যে ৬৭ শতাংশ পাতা চা এবং ৮২ শতাংশ গুঁড়ো চা বিকিকিনি হয়েছে। অবশিষ্ট চা অবিক্রিত হওয়ায় বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এবারও নিলাম ট্রেডে ভালো মানসম্মত ও উৎকৃষ্ট চায়ের চাহিদা এবং দর উভয়ই ছিল বেশ তেজী। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উত্তর জনপদের পঞ্চগড়সহ চা উৎপাদনকারী বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের নিলাম ট্রেডে আসে চায়ের হরেক সমাহার।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অর্থকরী ফসল চা শিল্প-বাণিজ্যের আকার-আয়তন, উৎপাদন, গুণগত মান বা উৎকর্ষতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতে বার্ষিক লেনদেন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার অঙ্কে। গতবছর দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। যা আগের টার্গেট, ধারণাসমূহ বা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। পুরনো চা গাছের পরিবর্তে নতুন উন্নত জাতের চারা আবাদ বিস্তার, নতুন প্রজন্মের আধুনিক ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বাগানগুলোর সংস্কার ও নবায়ন, সর্বোপরি চা বোর্ডের নিবিড় তদারকির সুফল আসছে আশানুরূপ। হরেক ফ্লেভারে চায়ের বাজারজাতকরণ হচ্ছে। আসছে মনোলোভা বৈচিত্র্য।

তবে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে চা পানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির তুলনায় সমানতালে উৎপাদন বাড়ছে না তেমন। এতে করে বাংলাদেশ আগেই হারিয়ে ফেলেছে চায়ের বিশাল রফতানি বাজার। যেমন- রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ। বর্তমানে রফতানি হয় এক শতাংশেরও নিচে। তাও ‘রফতানি’ কোটায় অভ্যন্তরীণ প্যাকেটিয়াররা কিনে নিচ্ছেন নিলাম ট্রেডের অল্পস্বল্প চা। অথচ স্বাধীনতা লাভের পরের বছরেই ১৯৭২ সালে চা রফতানির প্রথম বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯ম। দশ বছরের ব্যবধানে ১৯৮১ সালে ৬ষ্ঠ অবস্থানে উন্নীত হয়। বর্তমানে দেশে চায়ের আবাদ ও উৎপাদনশীল বাগান রয়েছে মোট ১৬৪টি। চা চাষাবাদের জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৫ হাজার ২১৭ একর।

চা আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগত মানে উৎকর্ষতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ চা বোর্ড লাগসই ও যুগোপযোগী উদ্যোগ, প্রকল্প, প্রশিক্ষণ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বাড়ছে চা চাষের আওতা। চা শিল্প-বাণিজ্যে ক্ষুদ্র চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা। এরফলে দেশের উত্তর জনপদ ও পার্বত্য অঞ্চলে চা চাষাবাদে বিস্তার ঘটছে। চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি, চাহিদা পূরণ ও রফতানি বাজার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে চা বোর্ড ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে। এর পাশাপাশি চা শিল্পোদ্যোক্তাগণ শতবর্ষী অভিজ্ঞতা নিয়ে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন নতুন উদ্যমে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Dildar Mahmud ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
রঙ, ঘ্রাণ ও স্বাদ এই তিনের সমহারে দেশে এবং বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত চা এর আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে উৎপাদন আরো বেশীহারে বাড়াতে হবে।
Total Reply(0)
আজিজ মীর্জা ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
আশার কথা, আমাদের দেশে চা উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দার্জিলিং এর চায়ের স্বাদ পেতে হলে গুণগত মান এবং বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশি চায়ের ব্রান্ড তৈরি হয়নি, তাও প্রয়োজন রয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন